• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ওরা তিন জন

প্রকাশ:  ২২ জুলাই ২০১৮, ০৯:৩৯
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

ওরা তিনজন। ৬ বছরে একাধিক বাড়ি, গাড়ি ও কয়েক কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালান্সের মালিক হয়েছেন তারা। তাদের রয়েছে শতাধিক অ্যাকাউন্ট। রয়েছে একাধিক এফডিআর। সম্প্রতি গ্রেফতার হন তারা। জেরার মুখে বলেছেন তাদের আয়ের উেসর কথা। এরপরই দীর্ঘ তদন্তে বেরিয়ে আসতে থাকে তাদের চাঞ্চল্যকর প্রতারণার খবর। এরা হলেন—

আসাদুজ্জামান ওরফে খোকন ওরফে আফজাল হোসেন, রেজাউল করিম ওরফে সামুল হক ও মাসুদ খান। জানা গেছে, রাজধানীর গুলশান এলাকার একটি বেসরকারি ব্যাংক শাখার ম্যানেজারকে প্রলোভন দিয়ে ৫৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তারা গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারকৃতদের প্রকাশ্য কোনো বৈধ ব্যবসা নেই। অথচ তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছে। এই তিন প্রতারক ধরা পড়ার পর দেখা যায় তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর খিলখেত, ক্যান্টনমেন্ট, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, পল্টন থানায় আরও ৬টি মামলা রয়েছে। অনেকে প্রতারিত হলেও বিষয়টি লোকলজ্জার ভয় চেপে যান। তবে তিন প্রতারক ধরা পড়ার পর অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

প্রতারক আসাদুজ্জামান, রেজাউল করিম এবং তাদের স্ত্রীদের নামে পাওয়া গেছে বিভিন্ন ব্যাংকের ৬৬টি অ্যাকাউন্ট। মাসুদ খানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ ছাড়িয়ে যাবে। গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে নগদ দেড় কোটি টাকা, দামি গাড়ি, জমির দলিলসহ অন্যান্য মালামাল।

সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, তাদের প্রতারণার কৌশলের মধ্যে রয়েছে— চাকরি বা ব্যবসায়ের কথা বলে প্রলোভন দেখানো, আলোচনার মাঝখানে জুয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে আসা, ইন্ডিয়ান বস-এর বাংলাদেশে আগমন, জুয়ায় থ্রি কার্ড খেলে ইন্ডিয়ান বসকে হারিয়ে দেওয়া, মুসলমান ভাই ভাই ও কোরআন শরিফ হাতে রেখে প্রতিজ্ঞা করানো। তাদের মূল টার্গেট থাকে চাকরিজীবী/ অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

যেভাবে প্রতারণায় আসা : গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে দলনেতা মাসুদ খান। তার বাবা নুরুজ্জামান ছিলেন পুলিশের কনস্টেবল। গ্রামের বাড়ি বরিশালে সদর থানার রাকুদিয়া। ২০০৩ সালে মাসুদ খান বিএ পাস করেন। পরে চাকরির সন্ধানে ২০০৭ সালের শেষ দিকে ঢাকায় আসেন। ওঠেন রাজধানীর দক্ষিণখানের একটি মেসে। ওই সময় তিনি এক ভুয়া আদম ব্যাপারীর খপ্পরে পড়েন। তাকে ইউরোপ পাঠানোর নাম করে ওই প্রতারক আদম ব্যাপারী তার কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। কিন্তু তার বিদেশ যাওয়া হয়ে ওঠেনি। আর ওই টাকা ছিল তার বাবার পেনশনের টাকা। এ অবস্থায় বাড়ি যাওয়া বন্ধ হয় মাসুদ খানের। শেষটায় তিনি রাজধানীতে ফেরি করে বাদাম বিক্রিও করেছেন। এদিকে প্রতারিত হওয়ার প্রায় দুই থেকে তিন বছর পর একটি হোটেলের সামনে দেখা পান ওই প্রতারক আদম ব্যাপারীর। তিনি তাকে আটক করে টাকা দাবি করেন। শেষটায় ওই প্রতারক আদম ব্যাপারী তাকে (মাসুদ খান) বুঝিয়ে শুনিয়ে তার উত্তরার দিয়াবাড়ির ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে নেওয়ার পর মাসুদ খানকে প্রতারণায় নামার প্রস্তাব দেয়। ওই প্রতারকের প্রস্তাবে রাজি হয় মাসুদ। এরপরই শুরু হয় তার প্রতারণার জীবন।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, তারা নগরীর নির্ধারিত কয়েকটি হোটেলে বসেই শলাপরামর্শ করে থাকে। তবে তারা প্রতারণা একসঙ্গে করলেও কেউ আসল পরিচয় (নাম-ঠিকানা) কারও কাছেই বলে না। কেউ কারও বাসায় পর্যন্ত বেড়াতে যায় না। যখন তারা তাদের কথিত ‘কাজের’ মধ্যে থাকে তখন নিজেদের গাড়িও ব্যবহার করে না। অন্য গাড়ি ব্যবহার করে। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

/এসএম

প্রতারণা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close