• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

অতিপ্রাকৃত বিশ্বাসেই এক পরিবারের ১১ জনের আত্মহত্যা!

প্রকাশ:  ২১ জুলাই ২০১৮, ০৪:০৮ | আপডেট : ২১ জুলাই ২০১৮, ০৪:১২
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির বুরারি এলাকার একটি বাড়িতে ফাঁসিতে ঝুলে একই পরিবারের ১১ জনের আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে রহস্য ঘনিয়ে উঠেছে।মৃতদের মধ্যে চারজন নারী, দুজন পুরুষ এবং পাঁচটি শিশু। লাশগুলোর চোখ ও হাত বাঁধা ছিল এবং তাঁদের ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। লাশগুলো উদ্ধারের পর পরই জল্পনা শুরু হয় যে ওই বাড়ির লোকেরা অতিপ্রাকৃত শক্তির আরাধনা করতেন এবং সেকারণেই তারা আত্মহত্যা করেছেন। খবর বিবিসি বাংলার।

বুরারি এলাকায় চন্ডাওয়াত পরিবারটিকে দেখা হতো একান্তই সাধারণ একটি পরিবার হিসেবে। তারা ছিলেন ২০ বছর ধরে ওই এলাকার বাসিন্দা। ওই বাড়ির নিচের তলায় দুটি দোকান চালাতো তারা - একটি মুদি দোকান, অন্যটি প্লাইউডের।গত ১ জুলাই তাদের মৃত পাওয়া যাওয়ার পর বাড়িটির আশেপাশে যেতে লোকজন ভয় পাচ্ছেন।

সম্পর্কিত খবর

    পুলিশ যদিও হত্যাকান্ডের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয় নি, কিন্তু তদন্তে এ পর্যন্ত যা পাওয়া গেছে তাতে এটি একটি গণ-আত্মহত্যার ইঙ্গিত পাওয়া যায়, এবং এটির পেছনে পরিবারের কোন সদস্যের অতিপ্রাকৃত বিশ্বাস কাজ করে থাকতে পারে।পুলিশ বিশেষ করে ললিত চন্ডাওয়াত নামে একজনের ওপর নজর নিবদ্ধ করেছে।

    পুলিশ বলছে, ললিত চন্ডাওয়াত মনে করতেন যে তার পিতা - যিনি ২০০৮ সালে মারা গেছেন - তার আত্মা তার ওপর ভর করেছে।

    একজন প্রতিবেশী যার নাম সন্দীপ, তিনি বলছেন, "আমার ছেলেমেয়েরা বলেছে যে চন্ডাওয়াত পরিবারের বাচ্চারা প্রায়ই তাদের বলতো যে তাদের চাচার ওপর তাদের পিতামহের আত্মা ভর করেছে। "

    ওই বাড়ি থেকে পাওয়া মোবাইল ফোন এবং দলিলপত্রে আভাস মেলে, ললিতের আত্মা এবং ভূতপ্রেতের ব্যাপারে আগ্রহ ছিল। পুলিশ আরো বলেছে, ললিত প্রায়ই শ্মশানে যেতেন এবং ইন্টারনেটে অতিপ্রাকৃত বিষয়ে অনুষ্ঠান দেখতেন।

    ললিতের মাথায় একবার প্লাইউডের টুকরো পড়ার পর তিনি কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু তিন বছর পর কিছুকাল আগে তিনি আবার কথা বলতে শুরু করেন। তিনি প্রতিবেশীদের বলতেন, তার এই ভালো হয়ে যাওয়া একটা মিরাকল বা যাদুকরী ব্যাপার। যদিও পরিবার বলতো, মেডিক্যাল চিকিৎসার ফলেই তিনি সেরে উঠেছেন।

    পুলিশ এগারোটি ডায়রি উদ্ধার করেছে - যা তারা ললিতের লেখা বলে মনে করছে। এগুলো পড়ার পর তাদের ধারণা, এই ললিতই ছিলেন গণ-আত্মহত্যার উস্কানিদাতা। ডায়রিতে লেখা ছিল যে, আত্মহত্যা করতে গেলে কোন অতিপ্রাকৃত শক্তি এসে তাদের রক্ষা করবে বলে তার বিশ্বাস ছিল। তাতে আরো লেখা আছে, কিভাবে গলায় ফাঁস দিতে হবে, কি ভাবে সে সময় চোখ ও মুখ ঢেকে রাখতে হবে। বলা হয়েছে, এ কাজের জন্য সবচেয়ে ভালো দিন হচ্ছে বৃহস্পতিবার এবং রোববার।

    আরো বলা হয়, শেষ দিনের আগের সাত দিন ধরে বিশেষ কিছু আচার পালন করতে হবে - যাতে 'আত্মা' এসে তাদের বলবে, পরের দিন 'কাজ শেষ' করতে। সেই ডায়রির নোটে ললিত লিখেছে, তার মা যদি এসব সহ্য করতে না পারে তাহলে তাকে পাশের ঘরে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে হবে। তার ভাষায় , 'শেষ কাজের' সময় হচ্ছে মাঝরাত থেকে রাত একটা পর্যন্ত। "সে সময় পৃথিবী এবং আকাশ কাঁপতে থাকবে, আর তখনই আমি এসে তোমাদের রক্ষা করবো।"

    পুরো পরিবারটাই কি মানসিক বিকারে আক্রান্ত ছিল?পুলিশ বলছে, কেন পরিবারের সবাই মিলে আত্মহত্যা করলো তা তারা বোঝার চেষ্টা করছেন। তারা বলছে, চন্ডাওয়াত পরিবারটি হয়তো 'শেয়ার্ড সাইকোটিক ডিজঅর্ডারে' ভুগছিল।

    ওই ডায়রির লেখাগুলোর কিছু অংশ ললিতের লেখা , নাকি অন্য কারো, তাও তদন্ত করা হচ্ছে। তবে বুরারি এলাকার বাসিন্দারা এ ঘটনার আঘাত এখনো সামলে উঠতে পারে নি।

    পৃলিশের পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট বলছে, ১১ জনেরই মৃত্যু হয়েছে গলায় ফাঁস লাগিয়ে। এর মধ্যে ৭৫ বছর বয়স্ক নারায়ণ দেবীকে পাওয়া যায় পাশের ঘরে। অন্য ঘরে মৃত পাওয়া যায় তার দুই ছেলে, এক মেয়ে, দুই পুত্রবধূ, এবং পাঁচ নাতিনাতনীকে - যাদের বয়েস ১৫ থেকে ৩৩ এর মধ্যে। ফাঁস লাগানোর আগে তাদের কোন মাদক সেবন করানো হয়েছিল কিনা তা পরীক্ষা করা হচ্ছে , তবে এখনো রিপোর্ট আসে নি।

    পুলিশ বলছে, ললিতের ভাই গলার ফাঁস ছাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে ময়না তদন্তে আভাস পাওয়া গেছে । এর আগের কয়েক দিনে বাড়িতে কাঠ এবং টুল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এমন দৃশ্য সিসিটিভিতে পাওয়া গেছে।

    পয়লা জুলাই ভোর ছটা পর্যন্ত ওই বাড়িতে কোন বহিরাগতকে ঢুকতে দেখা যায় নি।সেদিন ঘটনার পর প্রথম বাড়িতে ঢোকে দুধওয়ালা, আর প্রথম মৃতদেহ দেখতে পান প্রতিবেশী গুরচরণ সিং।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close