পদ্মার তীব্র ভাঙ্গণ: বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাডাঙ্গা ইউনিয়নে পদ্মা নদীর পানি কমতে থাকায় তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। জুলাই থেকে পানি বাড়ার কথা থাকলেও উজানে ( গঙ্গা অববাহিকায়) চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ও বালি মাটি হবার কারণে দ্রুত এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নদীতে প্রতিদিনই কমছে পানির স্তর। বুধবার (১১ জুলাই) ২৫ সেমি, মঙ্গলবার ও সোমবার ১৭ সে.মি করে পানি কমেছে। ভারতীয়রা ফারাক্কা বাঁধের গেটের মাধ্যমে পানি অনেক কম ছাড়ছে। গত ১৪ জুন থেকেই ভাঙ্গণ শুরু হয়। অবিলম্বে প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিলে ঘটবে বড় বিপর্যয়।
এরই মাঝে ইউনিয়নের কাইড়াপাড়ার প্রায় শত পরিবারের ঘরবাড়ি নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে বিজিবি’র চরবাগডাঙ্গা সীমান্ত চৌকি, ইউপি কমপ্লেক্সসহ আশপাশের বাড়িঘর, ধর্মীয়,ব্যবসায়িক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আমবাগান ও ফসলি জমি। এ সপ্তাহে অনেক ভেতরে ঢুকে পড়েছে নদী। ৫৩’বিজিবি ব্যাটালিয়নের চরবাগডাঙ্গা সীমান্ত চৌকি হুমকির মুখে পড়েছে। বুধবার বিওপি থেকে ১শ’মিটারেরও কম দুরত্বে ছিল নদী। বুধবার প্রায ১০ মিটার, মঙ্গলবারও ১০ মিটার নদী ভেঙ্গে ঢুকে গেছে। ভাঙণের কারণে চার দিন আগেই বন্ধ করা হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ ( পল্লী বিদ্যুৎ) ।
সম্পর্কিত খবর
ভাঙ্গন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে গত শনিবার (৭ জুলাই) চিঠি দেয় বিজিবি। পরদিন রোববার (৮ জুলাই) ভাঙ্গনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহেদুল আলমসহ পল্লী বিদ্যুৎ ও বিজিবি কর্মকর্তারা। সোমবার (১০ জুলাই) পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পত্র দেয়। বুধবার বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন ১শ’মিটার রক্ষায় জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলে কাজ শুরুর অনুমোদন দেয় কর্তৃপক্ষ।
প্রকৌশলী সৈয়দ সাহেদুল আলম বলেন, বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই) থেকেই কাজ শুরু করা হবে। এতে শুধু বিজিবি ক্যাম্প নয় আশপাশের কিছু স্থাপনা রক্ষা পাবে। তিনি বলেন ৩টি পয়েন্টে ৪শ’ মিটার জরুরী মেরামতে পত্র দেয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ১শ’ মিটারের পর বাকিটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে। এছাড়া ওই এলাকায় আড়াই কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে প্রায় ৩শ’কোটি টাকার প্রকল্প (ডিপিপি) জমা দেয়া আছে। বহুদিন থেকেই তা অনুমোদনের চেষ্টা চলছে। এটি অনুমোদন হলে এলাকায় ভাঙ্গণ স্থায়ীভাবে বন্ধ করা সম্ভব হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে.কর্নেল সাজ্জাদ সরোয়ার বলেন, পাকা স্থাপনার উপর তৈরি চরবাগডাঙ্গা ক্যাম্পটি গত কয়েকদিনে পদ্মা নদীর ব্যাপক ভাঙ্গনে চরম হুমকির মুখে পড়েছে। দু-একদিনের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ক্যাম্পটি নদীতে বিলীন হবে। এতে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি সীমান্ত নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়বে।
তিনি বলেন, শুধু ক্যাম্প নয় সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় ইউপি কমপ্লেক্সসহ সাধারণ মানুষের বাড়িঘর রক্ষায় চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য স্থানীয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। বিজিবি’র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
স্থানীয় মাহমুদ মুকুলসহ অনেকে জানিয়েছেন, এর আগে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙ্গনে এলাকার শত শত বিঘা জমি বিলীন হয়ে গেছে। নিশ্চিহ্ন হয়েছে রোডপাড়ার প্রায় শত পরিবারের বসভিটা, জায়গা জমি। এবছরও আতঙ্কজনক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে তারা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
ওএফ