• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

এ যেন অন্যরকম এক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী!

প্রকাশ:  ১৭ জুন ২০১৮, ১৪:১১ | আপডেট : ১৭ জুন ২০১৮, ১৪:১৫
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সাধারণত শক্ত হৃদয়ের মানুষেরাই এমন দায়িত্বে আসেন। আসাদুজ্জামান খাঁনও ব্যতিক্রম নন। সচরাচর গুম-খুন, সন্ত্রাস, জঙ্গি হামলা মোকাবেলার মতো শক্ত ও কঠিন বিষয়েই তাকে সংবাদমাধ্যমে বেশি কথা বলতে দেখা যায়।

আইন-অপরাধের মতো কঠোর বিষয় নিয়ে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আরেকটি হৃদয় এতদিন হয়তো কারও চোখে পড়েনি। এবার জানা গেল অন্যরকম এক আসাদুজ্জামান খাঁনকে। ধানমন্ডির নিজবাসায় একান্ত আলাপচারিতায় তার সেই হৃদয় ধরা দিলো।

ধানমন্ডিতে মন্ত্রীর বাড়িটি আক্ষরিক অর্থেই সবুজেঘেরা। পরিবারের সবার ঘুম ভাঙে হরেক রকম পাখির কিচির-মিচির শব্দে। রয়েছে নানা ফুল আর ফলের গাছ।

পাখির প্রতি নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, পাখির প্রতি তার মন বড় নরম। পাখির চলন ব্যবহারে অন্য রকম সুখ খুঁজে পান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, ‘পাখিদের থেকে মনে প্রশান্তি আসে। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের এই আধার মূলত কাছে গেলে ধরা দেয়। সত্যি বলতে প্রতিটা পাখিরই আলাদা স্বকীয়তা আছে।’

‘কখনো কখনো শুধু পাখি দেখতেই ছুটে যাই পদ্মার চরে। মনে দুশ্চিন্তা থাকলে পাখির কাছে গেলে ভালো হয়ে যাই’, বলে চলেন আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিসংগ্রাম শেষ। হাতে অস্ত্রটা আছেই। মাদারীপুর চরে এক সহযোদ্ধা বড় আকারের পাখিকে নিশানা করে বসল। মুহূর্তে পাখিটি মাটিতে পড়ল, ডানায় গুলি লাগা। আমাদের সবাইকে অবাক করে পাখিটির সঙ্গী তার পাশে আসল, নিজের মৃত্যু ঝুঁকি জেনেও আহত সঙ্গীকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। দীর্ঘ বছরেও এই করুণ দৃশ্য ভুলতে পারি না, মনে গেঁথে আছে।’

পাখির প্রতি প্রেমের শুরুর প্রসঙ্গ এলে তিনি ফিরে যান শৈশবে। বলেন, ‘ছোট বেলায় গাছ থেকে পাখির বাচ্চা পেড়ে এনে পালার চেষ্টা করতাম। এক সময় বুঝলাম, এটা করা অন্যায়। তারপর আর করিনি।’

নিজবাসায় পাখির খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে খাবার দিতে দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই যে দেখেন, আমাদের দেশি ঘুঘু। খাবার খেতে নিজেরাই এই খাঁচায় ঢুকে যায়। আবার যখন চলে যেতে চায়, তখন আমরা তাকে ছেড়ে দেই।’

বিশালাকার দেহের বাহারি রঙের ম্যাকাও দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘ম্যাকাওয়ের ডাক যে কি মধুর, তা বলে বোঝানো যাবে না। যে কেউ তার ডাকে মুগ্ধ হতে বাধ্য।’

কথা বলছেন, আর হাতে থাকা আপেলের টুকরো ম্যাকাওয়ের মুখে তুলে দিচ্ছেন স্বযত্নে, যে পিতৃস্নেহে সিক্ত করছেন তাকে।

আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান, ম্যাকাওটি এই বাসাতেই ডিম দিয়েছিল। সেটি আনন্দের! আগেরবার সেটি ফোটানো সম্ভব হয়নি। এবার আবার ডিম দিয়েছে। ডিম ফোটানোর সব চেষ্টায় চলছে।

বাড়িতে থাকা বেশিরভাগ পাখি পোষা ও আমদানী করা বলেও জানান তিনি।

বাড়ির চারদিকে ছোট ছোট খাঁচায় আছে ডাহুক, ককাটেল, বানর, তিঁতির, কায়েম, ময়ূর, টার্কিসহ নানা জাতের আমদানি করা বিদেশি পশুপাখি। দৃষ্টি মেলে দেখলে মনে হবে, এ যেন পাখির বসতবাড়ি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, তার অনুপস্থিতে স্ত্রীই শখের পশুপাখিগুলোর দেখাশোনা করেন।

নিজের ভাল লাগার অনুভূতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি যখনই গাড়ি নিয়ে বাসায় ঢুকি, গেটে আসামাত্রই ওরা (পশুপাখি) কেমন করে যেন বুঝে ওঠে আমি এসেছি। সবাই মিলে একসঙ্গে ডেকে আমাকে স্বাগত জানাই।’

বাড়িতে থাকা নানা রঙের পাখি দেখাচ্ছেন। কোনটা কবে, কিভাবে এখানে তার ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে, তা বলে চলেছেন। এভাবেই কখন যেন সময় পার হয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রী এবার সামনের একটি ছোট পানির কুয়োয় খেলতে থাকা একদল রঙিন মাছের মুখে খাবার তুলে দিলেন। এরপরই বললেন, চলেন, আজ আর না। বের হওয়া লাগবে। -সূত্র: পরিবর্তন ডটকম

-একে

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,পাখি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close