• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

তিন নেতার সাম্প্রতিক সফর

কংগ্রেস-বিজেপিকে বিএনপির বেশ কিছু আশ্বাস

প্রকাশ:  ১২ জুন ২০১৮, ১৮:২০
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে প্রতিবেশী ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের নেতাকর্মীকে বাংলাদেশের মাটিতে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না বিএনপি। সপ্তাহব্যাপী ভারত সফরকালে বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল দেশটির রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, নীতিনির্ধারক ও থিঙ্কট্যাঙ্ক ফেলোদের সঙ্গে বৈঠককালে এ আশ্বাস দিয়ে এসেছে। একই সঙ্গে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি ও প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সঙ্গে দলীয় পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করার ইচ্ছার কথাও জানিয়েছেন তারা। বিশ্বস্ত সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

বিএনপির তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল গত ৩ থেকে ৯ জুন পর্যন্ত ভারত সফর করে।

সম্পর্কিত খবর

    প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির। সফরকালে বিএনপি প্রতিনিধি দল ক্ষমতাসীন বিজেপির সম্পাদক (প্রথম) রাম লাল এবং প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান রাহুল গান্ধীর সঙ্গেও বৈঠকে মিলিত হয়।

    এ ছাড়া তারা শীর্ষস্থানীয় থিঙ্কট্যাঙ্ক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ), বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন (ভিআইএফ), রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনসহ (আরজিএফ) নিরাপত্তা-সংশ্নিষ্ট বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন। সংগঠনগুলোর উদ্যোগে 'বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি ও আগামী নির্বাচন' শীর্ষক তিনটি সেমিনারেও অংশ নেন তারা।

    সূত্র জানায়, ভারত সফর শেষে শনিবার দুই নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আবদুল আউয়াল মিন্টু একই দিন ঢাকায় ফিরে আসেন। তারা ঢাকায় দলের সিনিয়র নেতাদের সফরের বিষয়ে অবহিত করেন। একই সঙ্গে বিশেষ দূত এবং আইনজীবীদের মাধ্যমে কারারুদ্ধ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছেও বার্তা পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন। অপর নেতা হুমায়ুন কবির লন্ডন গেছেন। সেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভারত সফরের বিষয়ে অবহিত করবেন।

    সফরকারী প্রতিনিধি দলের প্রধান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা বাংলাদেশের সংকট সম্পর্কে ভারতের বিভিন্ন থিঙ্কট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান, সিভিল সোসাইটি ও সাংবাদিকদের অবহিত করেছি। নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে- তারাও তা অনুধাবন করছেন। এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন বলে তারাও মনে করছেন। এটা ভালো দিক, ইতিবাচক পরিবর্তন। ভারতও বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন চায়। ভারতের ভূমিকা বাংলাদেশের মানুষের মতামতের প্রতিফলন হিসেবে দৃশ্যমান হলে তা দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক হবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।

    সফরকারী প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু সোমবার বলেন, ভারত বৃহত্তর প্রতিবেশী গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাওয়ার ব্যাপারে সহায়তা চেয়েছেন তারা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনীতিবিদ ও থিঙ্কট্যাঙ্কারদের সঙ্গে বৈঠকে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ব্যাপারে তারা ভারতের ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করেছেন। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলেও ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন তারা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিজেপি, কংগ্রেসসহ থিঙ্কট্যাঙ্কারদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।

    সূত্র জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশে তাদের স্বার্থ-সংশ্নিষ্ট বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন ভারতের রাজনীতিবিদ ও থিঙ্কট্যাঙ্কাররা। বিএনপি নেতারা তাদের দলীয় অবস্থান পরিস্কারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এক বৈঠকে বাংলাদেশে হাইকমিশনের দায়িত্ব পালনকারী সাবেক কূটনীতিক বীণা সিক্রি বিএনপির শাসনামলে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা বাংলাদেশে আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

    সূত্র জানায়, বীণা সিক্রি দৃঢ়ভাবে বিএনপি নেতাদের বলেন, ২০০১-০৬ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারকে এ ব্যাপারে বারবার বিষয়টি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তারপরও ১০ ট্রাক অস্ত্র চালান ধরা পড়েছে। মৌলবাদী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে জোট সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করা হয়। জামায়াতে ইসলামীর জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পর্ক। তারা ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। বৈঠকে থিঙ্কট্যাঙ্কাররা জানতে চান, বর্তমানে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কী ধরনের?

    এ ব্যাপারে জবাবে ভারতের নীতিনির্ধারকদের আশ্বাস দিয়ে বিএনপি নেতারা জানান, জামায়াতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক দল। বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে শুধু 'নির্বাচনী জোট' করেছে। বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শ আর জামায়াতের আদর্শ সম্পূর্ণ ভিন্ন।

    সূত্র জানায়, বিএনপি নেতারা বলেছেন, বিএনপি একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে দলীয়ভাবে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে রাজনীতি করে। ভারতের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে এমন কোনো কাজ বিএনপি জ্ঞাতসারে অতীতেও করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না। বিএনপি ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলেও ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী কোনো সংগঠনের নেতাকর্মীকে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে ভারতের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর কোনো সুযোগ দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।

    একই সঙ্গে সফরকারী তিন নেতা জানান, হেফাজতে ইসলাম একটি কট্টর মৌলবাদী রাজনৈতিক দল। বর্তমানে এই দলটির সঙ্গে সরকারি দল আওয়ামী লীগ গাঁটছড়া বেঁধেছে। কাজেই রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামের মতো দলগুলোকে ব্যবহার করছে।

    জানা গেছে, বিএনপি নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পাদিত দু'দেশের স্বার্থ-সংশ্নিষ্ট চুক্তিগুলো বাতিল না করার ব্যাপারে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন বিএনপি নেতারা।

    সূত্র আরও জানায়, পৃথক বৈঠকে রাহুল গান্ধী ও রাম লাল আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে- তা জানতে চাইলে বিএনপি নেতারা বিস্তারিত অবহিত করেন। তারা মনোযোগ দিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য শোনেন। রাহুল গান্ধী বলেন, বিএনপি বিগত নির্বাচনে না গিয়ে তো ভুল করেছে। আগামী নির্বাচনে না গেলে আবারও ভুল করবে বলে তিনি মনে করেন। পৃথক বৈঠকে দুটি রাজনৈতিক দলের নেতারা দলীয়ভাবে বিএনপির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতে একমত পোষণ করেন। এ ক্ষেত্রে বিএনপিকে সংশ্নিষ্ট নেতাদের নাম পাঠানোর পরামর্শ দেন তারা।

    সূত্র জানায়, ভারতের রাজনীতিবিদ ও থিঙ্কট্যাঙ্কাররা জানতে চেয়েছেন, বিএনপি আগামী নির্বাচনে যাবে কি-না? বিএনপি নেতারা বিগত নির্বাচন সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে দশম সংসদ নির্বাচন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সবার অংশগ্রহণে আবার নির্বাচন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের পর তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। আর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে জেলে আছেন। তাকে মুক্তি দিতে হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। প্রশাসনসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা লাগবে। 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' তৈরি হলেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান প্রতিনিধি দলের নেতারা।

    সূত্রঃ সমকাল

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close