নির্বাচন নিয়ে কিছু করার নেই ভারতের
বিএনপি বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভারতের সহযোগিতা প্রত্যাশা করলেও এ ক্ষেত্রে ওই দেশটির ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগ দেখছেন না কূটনীতিকরা। ঢাকা ও নয়াদিল্লিতে ভারতীয় সূত্রগুলো বলেছে, নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে ভারত বাংলাদেশের পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি রাখে। কিন্তু তা একটি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে নয়।
ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি সোমবার নয়াদিল্লি থেকে টেলিফোনে দুই দফা আলাপকালে বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা আছে—এমন চিন্তা মানতে তিনি একেবারেই রাজি নন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি কিভাবে সহযোগিতা চায় আমি তা জানি না। তবে এটা বলব, প্রত্যেক দেশের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান নিজ দেশে নির্বাচন আয়োজন করে। ভারতের নির্বাচন কমিশন ভারতের নির্বাচন আয়োজন করে। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশের নির্বাচন আয়োজন করবে।’
সম্পর্কিত খবর
বীণা সিক্রি বলেন, ভারত একটি সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ। কাজেই ভারত কোনোভাবেই বাংলাদেশের এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। কখনো না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘অতীতে ভারত এমনটি কখনো করেনি। ভবিষ্যতেও কখনো এ ধরনের হস্তক্ষেপের কথা বিবেচনা করবে বলে মনে করি না।’
বীণা সিক্রি আরো বলেন, প্রত্যেক দেশে নির্বাচন করার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান আছে। বাংলাদেশের নির্বাচন বাংলাদেশের বিষয়। তবে ভারত বাংলাদেশে আরো শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং আরো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখলে খুশি হবে। গণতান্ত্রিক বিশ্বাস ধারণ করে এমন যেকোনো দেশই তা চায়।
ভারতীয় কূটনীতিকরা ক্রমাগত বলে আসছেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভিত্তি হলো দুই দেশের জনগণ। বাংলাদেশের সংবিধান, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি ভারত শ্রদ্ধাশীল। তবে বিএনপি বাংলাদেশে গণতন্ত্রহীনতা বা একদলীয় শাসনের যে অভিযোগ করছে তার সঙ্গে একমত নয় ভারত।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে সমর্থন করার যুক্তি তুলে ধরে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী হওয়া ওই নির্বাচন সমর্থন করাই যৌক্তিক ছিল। কারণ ওই নির্বাচন না হলে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটতে পারত। কোনো দল নির্বাচনে যাবে কি না সেটি তাদের নিজস্ব বিষয়। কিন্তু কোনো দল নিজে নির্বাচনে যাবে না বলে নির্বাচন হতে দেবে না এমন ভাবনা অযৌক্তিক।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিএনপির তিন নেতা গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাজনৈতিক দল ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনাকালে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সমর্থন-সহযোগিতা চেয়েছেন। তখন ভারতীয় পক্ষ থেকেও তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেটি হলো বিএনপিকে তার জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছেড়ে নির্বাচনে যাওয়ার। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও বিরোধী দল কংগ্রেস উভয় পক্ষ থেকেই বিএনপিকে ওই বার্তা দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক তলানিতে নেমেছিল ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে। সংশ্লিষ্ট এক কূটনীতিক বলেন, এর আগেও বিএনপি বাংলাদেশে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু সম্পর্ক কখনো এতটা তলানিতে নামেনি। এর মূল কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় জামায়াতে ইসলামীকে। তাঁদের দৃষ্টিতে, ২০০১-২০০৬ মেয়াদে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বিএনপি থাকলেও চালকের আসনে ছিল জামায়াত। বিএনপি তখন চিহ্নিত ‘যুদ্ধাপরাধী’ ও স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত নেতাদের মন্ত্রী বানিয়েছিল। ওই সময় বাংলাদেশে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর আশ্রয়-প্রশ্রয় পাওয়া নিয়ে ভারত উদ্বেগ জানালেও তত্কালীন সরকার তা দূর করতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি বলেই অভিযোগ রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বিএনপিকে নিয়ে ভারতের সন্দেহ ও দ্বিধার অন্যতম কারণ জামায়াতের সঙ্গে দলটির গাঁটছড়া। তাই বিএনপি নেতারা যখন বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সমর্থন চেয়েছেন তখন ভারতে রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়টি তাদের মনে করিয়ে দিয়েছে।
বিএনপি ভারতবিরোধী কোনো কাজ করেনি বলে নয়াদিল্লিতে বৈঠকগুলোতে যে দাবি করেছে সে বিষয়ে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বীণা সিক্রি বলেন, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের গত প্রায় সাড়ে ৯ বছরে ভারতের সঙ্গে চমত্কার সম্পর্ক হয়েছে। এই সহযোগিতামূলক সম্পর্কের ভিত্তি পারস্পরিক স্বার্থ, স্পর্শকাতরতা ও উদ্বেগকে সম্মান জানানো। নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক, যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাতে সহযোগিতায় দুই দেশই লাভবান হয়েছে। গত সাড়ে ৯ বছরে উভয় দেশের সরকারই পরস্পরকে গুরুত্ব দিয়েছে।
বীণা সিক্রি আরো বলেন, আগামী দিনে যে সরকারই আসুক না কেন এ সম্পর্কের ধারাবাহিকতাকে এগিয়ে নিতে হবে। নিঃসন্দেহে বিএনপি সরকারের সময় অনেক সমস্যা ছিল। বিএনপিকে অবশ্যই তা স্বীকার করতে হবে। সূত্রঃ কালের কণ্ঠ