মাদকবিরোধী অভিযান, প্রিজন ভ্যান থেকেই ফেসবুক লাইভ (ভিডিও)
‘এখানে যারা আছেন, সবাই ব্যবসায়ী, আমাদেরকে অযথা নিয়ে আসছে। আসলে ফার্স্টটাইম লাইভে আসতে হবে পুলিশের গাড়িতে, এটা কখনো ভাবতে পারি নাই...।’
‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগানে সারা দেশে চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান। সেই অভিযানের অংশ হিসেবে ৯ জুন, শনিবার ঢাকা মহানগরীর খিলগাঁও ও রামপুরা এলাকা থেকে ৪৩ জনকে আটক করেছিল পুলিশ। তাদের একজন ছিলেন মেহেদী হাসান রেইন। আটকের পর পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকেই ফেসবুক লাইভে যান তিনি। এর কয়েক ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সম্পর্কিত খবর
পুলিশের ভাষ্য, দুপরের দিকে মাদকের বিরুদ্ধে চালানো ওই অভিযানে রামপুরা থানা এলাকা থেকে ২৩ জনকে আটক করা হয়। পরে তাদের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রামপুরা থানা এলাকার তালতলা সিটি করপোরেশন মার্কেট থেকে আটক করা হয়েছিল রেইনকে। পরে তিনিসহ আরও ছয় থেকে সাতজন যুবককে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়।
পুলিশের গাড়িতে মেহেদী হাসান রেইন ফেসবুক লাইভে বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম, আজকে ফার্স্ট টাইম লাইভে, তাও আবার আমরা পুলিশের গাড়িতে। আমাদের সরকার মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। সেই অভিযানে তারা যাদেরকে পাচ্ছে, তাদেরকেই নিয়ে আসতেছে। এখানে যারা আছেন, সবাই ব্যবসায়ী, আমাদেরকে অযথা নিয়ে আসছে। আসলে ফার্স্ট টাইম লাইভে আসতে হবে পুলিশের গাড়িতে, এটা কখনো ভাবতে পারি নাই...।’
প্রিজন ভ্যানে থাকলেও রেইনসহ অনেককে বেশ হাসি-খুশি দেখাচ্ছিল। তবে ওই ভ্যানে অপর একজন ছিলেন, যাকে বারবার রুমাল দিয়ে মুখ ঢাকতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রলয় কুমার সাহা বলেন, ‘আমাদের আজকের এই অভিযানে প্রথমে ২৩ জনকে আটক করা হয়েছিল। পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে কয়েকজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখন ১৬ জনের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা দেওয়া হয়েছে।’
আটক ব্যক্তিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে কি না, জানতে চাইলে প্রলয় কুমার বলেন, ‘তাদের আগামীকাল আদালতে পাঠানো হবে।’
পুলিশের গাড়ি থেকে মেহেদী হাসান নামের এক যুবক ফেসবুকে এসেছিল, এ বিষয়ে প্রলয় বলেন, ‘বাজার থেকে দুই-তিনজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটকের সময় তাদের সাথে দুই-তিনজন সাধারণ ব্যবসায়ী ছিল। যারা মাদক ব্যবসায়ী নয়, পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের ছেড়ে দিয়েছি। তারা সত্যিকার মাদক ব্যবসায়ী নয়। এ জন্য তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
গাড়ির ভেতর থেকে মোবাইলের ব্যবহারের বিষয়ে ওসি বলেন, ‘গাড়িতে তো ভাই অনেক আসামি ছিল। অনেক ফোর্সও ছিল, তবে সবার অগোচরে হয়তো সে মোবাইল রেখেছিল। কেউ খেয়াল করতে পারে নাই। আর মেহেদী নামের ওই ছেলেকে তো ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
পুলিশের গাড়িতে ফেসবুকে লাইভে আসা মেহেদী হাসান রেইন থানা থেকে ছাড়া পান বিকেলের পর। ছাড়া পেয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তিনি নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেন।
সেই পোস্টে মেহেদী লিখেন, ‘আল্লাহের রহমতে আর আপনাদের সবার দোয়ায় চলে আসলাম। সবাই দোয়া করবেন। আর ইফতারের পরে আপনাদেরকে জানাব, আমার আজকের তিক্ত অভিজ্ঞতা।’
মেহেদী হাসান জানান, খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে আট থেকে ১০টি ভিডিও গেমসের দোকান আছে। তার নিজেরও একটি ভিডিও গেমসের দোকান রয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় পুলিশ দোকানগুলো থেকে বেশ কয়েকজনকে কিছু জিজ্ঞাসা না করেই আটক করে গাড়িতে তোলে। আটকের পর প্রথমে তাদের খিলগাঁও থানায় নেওয়া হয়। এরপর খিলগাঁও থানা থেকে পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যানে করে রামপুরা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আবারও রামপুরা থানা থেকে খিলগাঁও থানায় নেওয়া হয়। সর্বশেষ খিলগাঁও থানা থেকে আবারও রামপুরা থানায় নেওয়া হয়।
মেহেদী আরও জানান, রামপুরা থানায় তাদের কয়েকজনের নাম-পরিচয় বিস্তারিত লিখে নিয়ে বিকেলে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রথমবার খিলগাঁও থানা থেকে রামপুরা থানা নেওয়ার সময় তিনি ফেসবুক লাইভে এসেছিলেন।
পুলিশ আটক করে ‘হয়রানি’ করার কারণে মেহেদী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি যখন খিলগাঁও থানায় পুলিশের গাড়ির মধ্যে ছিলাম, তখন বাইরে তাকিয়ে দেখি, আমার বাবা থানার বারান্দায় দাঁড়িয়ে একজন পুলিশের কাছে হাতে ধরে অনুরোধ করছেন, আমার ছেলেকে ছেড়ে দেন। এটা দেখে আমার চোখে পানি চলে এসেছিল।’
ওএফ