একরাম হত্যা: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো কি চাপের মুখে?
সারাদেশে মাস খানেক ধরে চলা মাদকবিরোধী অভিযান যেন কিছুটা থিতু হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। পুলিশের তথ্য মতে শনিবার (২ জুন) পর্যন্ত এই অভিযানে ১৩ হাজার গ্রেফতার এবং মামলা হয়েছে ১০ হাজার। নিহতের সংখ্যাও ১২৭ জনের মতো। খবর: বিবিসি বাংলা
সেখানে আজ বা গতকাল নতুন করে তথাকথিত ক্রসফায়ারে কোনো মাদককারবারির নিহতরে খবর শোনা যায়নি।
সম্পর্কিত খবর
টেকনাফের কাউন্সিলর মো. একরামুল হক তথাকথিত এক ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন বলে পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাবের পক্ষ থেকে বক্তব্য আসার তিনদিনের মাথায় তার স্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে যে অডিও প্রকাশ করেন- তা সত্যি হোক বা মিথ্যে হোক, বোমা ফাটানোর মতো একটি প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন অনেকে। এর ফলে কি চাপের মুখে রয়েছে পুলিশ? তারই প্রভাব কি পড়েছে মাদকবিরোধী অভিযানের উপর?
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা বলছেন, দেখুন একটা এভিডেন্স যখন আসে, এটা চাপের চেয়ে আমি বলবো একটা উদ্বেগ থাকাই স্বাভাবিক। যেহেতু মনে হচ্ছে দৃশ্যত একটা ফৌজদারি অপরাধ হয়ে থাকতে পারে।
গত ২৬ মে মাদকবিরোধী অভিযানে কক্সবাজারের টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর ও স্থানীয় যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. একরামুল হক নিহত হন। তার স্ত্রী এরপর এক সংবাদ সম্মেলনে চারটি অডিও প্রকাশ করেন যাতে শোনা যাচ্ছে তার মেয়ের সাথে একরামুল হকের কথোপকথন। এক পর্যায়ে গুলি ও গোঙানির শব্দও শোনা যায়। তাকে বাসা থেকে র্যাব এবং ডিজিএফআই-এর স্থানীয় দুইজন কর্মকর্তা ডেকে নেওয়ার পর হত্যা করা হয়েছে বলে তার পরিবার অভিযোগ করে।
এই অডিওটি প্রকাশের পর থেকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। দেশের প্রতিটি সরকারের আমলে ব্যাপক সমালোচনার শিকার এ রকম অভিযান রয়েছে।
মানবাধিকার কর্মী ও অধিকারের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান বলছেন, এই অডিওটি একটি নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। একটা পরিস্থিতি তৈরি করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। অডিওটি সত্য বা মিথ্যে সেটি পরের কথা। এখানে সত্য হচ্ছে যে রাষ্ট্র বিচারিক প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে মানুষ হত্যা করছে।
তিনি বলেন, তাই মানুষের মনের মধ্যে এটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যে প্রশ্ন ছিল সেটি আরও জোরালো করেছে। মানুষের প্রতিবাদী ভূমিকা আরও জোরালো করেছে।
তার মতে, এই অডিওটি তাই মাদকবিরোধী অভিযান বন্ধে আপাতত ভূমিকা রেখেছে। তবে তিনি আরও বলেন, কিন্তু রাষ্ট্রের মধ্যে যখন দায়মুক্তির সংস্কৃতি থাকে তখন এরকম বিষয় আসলে সবসময় চলমান থাকে। কোনও ঘটনার পর কিছুদিন হয়ত থেমে থাকে। কিন্তু তারপর আবার শুরু হয়।
‘কোন কিছু দেখেই মনে হওয়ার কারণ তৈরি হয়নি যে এমন হত্যাকাণ্ড অচিরেই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হঠাৎ করে হয়নি বা দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি।’
এই ধরনের মাদকবিরোধী অভিযান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনা সবসময়ই থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সমালোচনা ও চাপের মুখে পুলিশের অভিযান কি আপাতত দমে গেছে?
পুলিশের মুখপাত্র এআইজি সহেলী ফেরদৌস বলেন, দেখুন এটিকে ধীর হয়ে যাওয়া বলে না। আমি একই অভিযানে প্রতিদিন যে একই পরিমাণে মাদক পাবো এর তো কোনও গ্যারান্টি নেই। কোনদিন এক কেজি গাঁজা পাবো আবার অন্যদিন ১০ কেজি। ইন্টেলিজেন্সের উপর ভিত্তি করে এটা হয়।
তিনি বলেন, অভিযান শিথিল হয়ে গেছে এমন মোটেও বলা যাবে না। আমাদের অভিযান চলমান এবং পূর্ণ গতিতেই চলছে।
সহেলী ফেরদৌস জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে চলা অভিযান শুরু হয়েছে পহেলা রমজান থেকে। শনিবার পর্যন্ত এ অভিযানে ১৩ হাজার গ্রেফতার হয়েছে এবং মামলা হয়েছে ১০ হাজার।
তবে এর পরের দিন অর্থাৎ রোববার বা আজ কোথায় অভিযান হয়েছে বা তাতে কি পাওয়া গেলো সে সম্পর্কে তথ্য আরও পরের দিকে পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
অভি