• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

নোয়াখালীবাসীর আতঙ্কের দিন ২৪ মে

প্রকাশ:  ২৩ মে ২০১৮, ১৫:১২ | আপডেট : ২৩ মে ২০১৮, ১৫:২২
নোয়াখালী প্রতিনিধি

ভয়াল ২৪ মে, নোয়াখালীবাসীর শোক ও আতঙ্কের দিন। ঠিক ৪৯ বছর আগে ১৯৬৯ সালের শনিবার এই দিনে সামুদ্রিক জলোচ্ছাসের প্রভাবে সৃষ্ট সর্বনাশা বন্যা আঘাত হানে দক্ষিণ পশ্চিম উপক‚লীয় বৃহৎ জনপদে। দিনের আলোয় মুহূর্তের মধ্যে উপক‚লীয় অঞ্চল নোয়াখালী, লক্ষীপুর, কক্সবাজার এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।

তৎকালীন মানুষের হিসাব অনুযায়ী বন্যায় ৫০ হাজারের উপরে লোক মারা যায়। ২ লক্ষের উপরে হাঁস-মুরগি পাশাপাশি ১ লক্ষের উপরে গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল মারা যায়। মুহূর্তেই ১ লাখ ৫০ হাজার পরিবার নিরাশ্রয় হয়ে পড়ে। ২ লক্ষ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বহু ফসলি খেত ও মাছ চাষের প্রজেক্ট তলিয়ে যায়। বহু সড়ক ও উপকুল রক্ষা বাঁধ ধ্বংস হয়। ২০০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ভয়াবহ এ বন্যায়, ১হাজার নলকুপ ও ২ হাজারের বেশি পুকুর জলাশয় জলমগ্ন হয়ে দুর্দশাগ্রস্থ কয়েক লাখ মানুষের দুর্ভোগ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

সম্পর্কিত খবর

    সরেজমিন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নে গেলে উপজেলা ডেপুটি কমান্ডার তৎকালীন প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হায়দার (৭৫) জানান, ২৪ মে ফজরের নামাজের আগ থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি সঙ্গে দমকা বাতাস সকালের শুরুতে ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করে। ছোট ফেনী নদী, বড় ফেনী নদী ও হাতিয়ার দক্ষিণে মেঘনা নদ-নদীগুলোতে পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় সকাল ৮টার দিকে উপক‚ল রক্ষাবাঁধ ছাপিয়ে নদীর পানি ১৬ থেকে ১৭ ফুট ওপর দিয়ে চারদিকে ছুটে এসে মুহূর্তের মধ্যে সাগরতীরের বিস্তীর্ণ জনপদ তৎকালীন চর বড় বালুয়া বর্তমানে চর আমজাদ, চর মওদুদ, চর লক্ষী, স্বন্দীপ, চরক্লাক, চরবাটা, দক্ষিণ হাতিয়া, উত্তর হাতিয়া ও নোয়াখালীর সদর দক্ষিণাঞ্চল ও কক্সবাজার এলাকা গ্রাস করে। দিনের বেলা বন্যার বন্যার স্রোতে ভেসে যায় হাজার হাজার নারী পুরুষ, গবাদিপশু।

    নদী বেষ্টিত কোম্পানীগঞ্জের দক্ষিণাঞ্চলের মুছাপুর, রামপুর, চরফকিরা ইউনিয়নসহ সব ইউনিয়নের চারদিক কয়েক মিনিটের মধ্যে পানিতে তলিয়ে যায়। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হায়দার (৭৫), সূত্রে আরো জানা যায়, ৬৯ এর ভয়াবহ বন্যায় তাদের এলাকার আবুল কালাম ওরফে বাউন (৭৫) মহিষের লেজ ধরে কোম্পানীগঞ্জ থেকে কুতুবদিয়া পাড়ি দিয়েছিল।

    ওই সময় বন্যাদুর্গত বৃহত্তর নোয়াখালী, কক্সবাজার, লক্ষীপুর এলাকার যেদিকে চোখ যেত, সেদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা মনে হত। বন্যায় মানুষ নিজের সম্পদ হারিয়ে বেঁচে থাকার নিমিত্তে খাবার সংকটে ভাতের মাড়ের জন্য দিকবেদিক ছোটাছুটি করত। উপকুলীয় এলাকার বহুমানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। প্রায় ১ বছর সংগ্রাম করে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মানুষ। সংগ্রাম করতে করতে উপকুলীয় মানুষগুলোর চেহারা মলিন হয়ে যায়।

    মৃত গবাদিপশুর দুর্গদ্ধে ৪-৫ মাস স্বাভাবিকভাবে এলাকায় চলাফেরা ছিল দুঃসাধ্য। উপকুলীয় জনপদের নিরাপত্তা চিন্তা করে স্বাধীনতা পরবর্তী প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় কোম্পানীগঞ্জে প্রায় ৪৮ টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সহকারি পিটিপি কর্মকর্তা মো.মাজহারুল হক জানান, এর মধ্যে ১০টি সাইক্লোন শেল্টার ব্যবহার অনুপযোগী অবস্থায় আছে।

    কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল জানান, বর্তমানে এই উপজেলায় ১টি বেড়ি বাঁধ আছে এবং আরেকটি নতুন বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে।

    এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো.হামিদুল হক’র মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বর্তমানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যাপক সচেতনা ও বৃদ্ধি করা হয়েছে। যার জন্য আমাদের উপকুলীয় জনপদের মানুষ কে আগের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে তেমন পড়তে হয়না।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close