• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

আমার কি একটা চুমু খাওয়ার মা ও থাকতে নেই?

প্রকাশ:  ১৪ মে ২০১৮, ২৩:২৪
ইফতেখায়রুল ইসলাম

পড়ি তখন সপ্তম শ্রেণিতে, উপস্থিত বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়েছিল নারায়ণগঞ্জ সদরে। আমি কাউকে না বলে চলে যাই প্রতিযোগিতায়! সকাল ১০টায় শুরু হওয়া প্রতিযোগিতা শেষ হয় বিকেলে এবং পুরস্কার বিতরণী হয় রাত ০৮টায়! তখন মোবাইলের প্রচলন খুব ছিল বলে মনে পড়ে না!

উপস্থিত বক্তৃতায় দ্বিতীয় হয়ে আর্কাদি গাইদার'র 'ইশকুল' বইটি উপহার পাই!

সম্পর্কিত খবর

    মহা আনন্দে বাসায় ফিরছি আর রাস্তায় মাইকিংয়ে শুনছি আমার হারিয়ে যাওয়া সংবাদ! বাসায় গিয়ে অস্থিরচিত্তের সবাইকে পেলাম কিন্তু আমি খুঁজছিলাম আমার মাকে! ভিতরের কক্ষে গিয়ে দেখি আমার মমতাময়ী মা চিৎকার করে কাঁদছেন, তার আদরের মানিক যে হারিয়ে গেছে। আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে থাকেন সারাদিন এক ফোঁটা পানি মুখে না দেয়া আমার মা.....

    আহ্ মা! গতকাল বিশ্ব মা দিবস ছিল! প্রিয় মমতাময়ী মাকে সাথে নিয়ে সকলের একের পর এক স্থিরচিত্রে আমার চোখ জোড়াও বেদনার মিশেলে আটকে ছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃস্বার্থ, নির্লোভ মানুষটি পাশে থাকলে পুরো পৃথিবীর বিপরীতেও লড়াই করা যায়! কিন্তু হায়! সকলের যে মা থাকে না। পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্ভাগা মানুষটি মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়।

    মায়ের শেষ সময়ের ঠিক দুইদিন আগে মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বলেছিলেন, 'জীবনে অনেক বড় হও'! আমার কি একটা চুমু খাওয়ার মা ও থাকতে নেই, আমাকে একটু ভালোবাসার মা ও থাকতে হয় না বুঝি!

    আমার মা ছিলেন একজন যোদ্ধা, সন্তানদের মানুষ করতে যেয়ে নিজেকে বিসর্জন দিয়েছিলেন, নিজের সুখ কখনো খুঁজেও দেখেননি! আমার সকল রাগ, ক্ষোভ, ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা মানুষটি আমায় বলেছিলেন, আমি যেন অবশ্যই মানুষকে সহায়তা করি! আমি তাই নিপীড়িত, নিষ্পেষিত'র শক্তি হতে চাই।

    আমার বোনদের বিয়ের পর আমার মায়ের সবচেয়ে কাছাকাছি ছিলাম আমি। আমার কলিজার টুকরা ছিল আমার মা! আমার সেই মাকে ছাড়াও আমি, আমরা বেঁচে আছি। বুকটা ভারি হয়, বুকটা ফেঁটে যায়! অনেকেরই মা থাকে আমার বুঝি মা ও থাকতে নেই..

    আপনি সন্তান নিজের মায়ের জন্য উজাড় করে করুন, যেন তাদের অনুপস্থিতিতে আপনার কাছে সুখস্মৃতি থাকে, বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে। সকল সন্তান পিতামাতার জন্য করতে পারেন না, আপনি না হয় সেই ব্যতিক্রম সন্তানটিই হয়ে উঠুন!

    মায়ের জন্য দিবস লাগে না, কিন্তু আমরা অনেক সময়ই নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি না! আমাদের এই সীমাবদ্ধতাকে পাশ কাটিয়ে একটি দিন যদি নিজের মায়ের কাছে ভালোবাসা প্রকাশের দিন হয় তাতে সমালোচকদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়!

    বিষয়টি এমন নয়, যিনি মায়ের সাথে স্থিরচিত্র প্রকাশ করলেন সামাজিক মাধ্যমে, তিনি অন্যদিন তার মাকে ভালোবাসেন না! বিষয়টি এমনও নয় যেহেতু আপনি আপনার মায়ের সাথে কোন ছবি প্রচার করেননি সেহেতু আপনি মাকে খুব বেশি ভালোবাসেন! ভালবাসার প্রকাশ আপেক্ষিক একটি বিষয়। আপনি নিজে যাই হোন, আপনার প্রকাশ ভঙ্গি যাই হোক না কেন, অন্যের ভালোবাসা প্রকাশের ধরণ নির্ধারণ করে দেয়ার আপনি কেউ নন!

    মাকে ভালোবাসুন, বাবাকেও ভালোবাসুন এবং সেটি সব সময়! কখনো কখনো সুযোগ পেলে তার প্রকাশও করুন। আপনাকে পৃথিবীতে যিনি এনেছেন, তাদের বুঝতে দিন যে তারা আপনার কাছে বিশেষতম ব্যক্তিত্ব! আর আমার মত দুর্ভাগারা, যখন স্মরণে আসে তখনি বাবা-মায়ের জন্য প্রার্থনারত থাকুন। হারিয়ে গেলেই বুঝবেন কি অমূল্য সম্পদ আপনি হারালেন! আপনার ভেতরটা গুমরে গুমরে কাঁদবে, কিন্তু মাথা রাখার সেই কোমল কাঁধ আর খুঁজে পাবেন না!

    মায়েরা ভালো থাকুন এপারে, ভালো থাকুন ওপারেও...

    লেখক: সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডেমরা জোন)

    (ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত)

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close