• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ শব্দটি ভুল

প্রকাশ:  ১৮ মার্চ ২০১৮, ২০:২০
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
ফাইল ছবি

বেনজীর আহমেদ, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) মহাপরিচালক। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান।

প্রশ্ন: র‍্যাবের বর্তমান মুখ্য চ্যালেঞ্জগুলো কী, সেগুলো তার প্রতিষ্ঠাকালীন সনদের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কি না?

সম্পর্কিত খবর

    বেনজীর আহমেদ: রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলার যে চ্যালেঞ্জ, তা গতিশীল এবং পরিবর্তনশীল। ১৪ বছর আগে একটা তাড়াহুড়োর মধ্যে যে ম্যান্ডেট নিয়ে র‍্যাব গঠিত হয়েছিল, সেখানে আজ অনেক পরিবর্তন এসেছে। র‍্যাবের কাজ ও পরিবেশেও পরিবর্তন এসেছে।

    প্রশ্ন: অপারেশন ক্লিন হার্ট র‍্যাবের আওতায় না হলেও তার কাজের ধারাবাহিকতা র‍্যাব বজায় রেখেছে। বেনজীর আহমেদ: আমি এর পেছনে এভাবে যোগসূত্র খুঁজছি না। অপারেশন ক্লিন হার্ট ও র‍্যাবের বৈশিষ্ট্য এক নয়। এখানে আটটি বাহিনীর লোক আছে, কমান্ড-কাঠামো ভিন্ন। আমি মনে করি না র‍্যাব অপারেশন ক্লিন হার্টের সরাসরি কোনো লিগেসি। ওই সময়ে জেএমবি ও বাংলা ভাইয়ের আকস্মিক উত্থান এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন সরকারের এ রকম একটি বাহিনীর দরকার ছিল। র‍্যাব দুই ফ্রন্টে কাজ করেছিল। বাংলা ভাই দমনের পাশাপাশি সন্ত্রাস দমন তার লক্ষ্য ছিল।

    প্রশ্ন: তার মানে র‍্যাব তৎকালীন বিএনপি সরকারের একটি দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ছিল? বেনজীর আহমেদ: সেই সময়ে এর প্রয়োজন ছিল এবং তার ধারাবাহিকতা এখনো আছে। তবে আমি সতর্কতার সঙ্গে যা এড়াতে চাই সেটা হলো, সরকারের পক্ষে আমি কোনো কথা বলতে চাই না।

    প্রশ্ন: আপনি সরকারের অংশ? বেনজীর আহমেদ: আমি সরকারের মুখপাত্র। তবে রাজনৈতিক বা নীতিনির্ধারণী বিষয়ে বলবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো কেউ।

    প্রশ্ন: দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী এবং অকার্যকর ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার দোহাই দিয়ে ক্লিন হার্টে প্রায় ৫৮ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। আজও ওই যুক্তিতেই হত্যাকাণ্ড ঘটছে, কীভাবে প্রমাণ করবেন সেটা বদলেছে? আপনি তখনো বড় পদে ছিলেন? ওই ৫৮ হত্যার তদন্ত চান না? বেনজীর আহমেদ: ক্লিন হার্টের পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলব না। আমি ওই সময়ে তার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমি যদি বলি তদন্ত হওয়া উচিত বা উচিত নয়, তাহলে কি তা থেমে থাকবে? এটা বুঝতে হবে, আমরা একটি গণতন্ত্রে বাস করছি। আদালত সচল রয়েছেন, এই যে আপনি আমাকে প্রশ্ন করছেন, এর মানে হলো, গণমাধ্যম অসীম স্বাধীনতা ভোগ করছে। এসবই একটি গতিশীল গণতন্ত্রের লক্ষণ। যা তদন্তযোগ্য, সেটা না হলে কেউ আইনি প্রতিকার চাইতে পারেন।

    প্রশ্ন: ক্লিন হার্টের ৫৮ হত্যার দায়মুক্তি আইনটিও হাইকোর্ট বাতিল করেছেন। সুতরাং সরকারি সংস্থাগুলোর তা তদন্তে বাধা নেই। বেনজীর আহমেদ: আমার কোনো মন্তব্য নেই। আপনি বললেন, বাতিল হয়েছে, জাস্ট ফাইন।

    প্রশ্ন: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টিসহ দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যম বলছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা চলছে। সুইডিশ রেডিওর রিপোর্ট মতে, র‍্যাবের কর্মকর্তা জবানবন্দি দিয়েছেন যে র‍্যাব মানুষ মারছে। বেনজীর আহমেদ: আমরা সুইডিশ সরকারকে অনুরোধ করেছি, এটা সত্যি হলে সেই অফিসার এবং যাঁরা এটা রেকর্ড করেছেন, তাঁদের নাম অবিলম্বে আমাদের জানাতে। র‍্যাবের কোনো কর্মকর্তা যদি তিনি আদৌ হন, তাহলে তিনি খুনি হিসেবে চিহ্নিত হবেন। আমরা আইনি ব্যবস্থায় যাব।

    প্রশ্ন: আপনি কি বলছেন যে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে না? বেনজীর আহমেদ: আমি তো এই টার্মের সঙ্গে একমত নই। তাহলে বিচারে অন্তর্ভুক্ত হত্যাকাণ্ড কোনটি?

    প্রশ্ন: এটা কথার পিঠে কথা হলো, আইনের বাইরে হত্যাকাণ্ড ঘটছে। নাম যা-ই দিন, আমরা লাশ পাচ্ছি। র‍্যাবের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। বেনজীর আহমেদ: বহির্ভূত হলে অন্তর্ভুক্ত হত্যা আছে। অন্তর্ভুক্ত হত্যা কোনটি?

    প্রশ্ন: রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ড বোঝাতে এটা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত পরিভাষা, বাংলাদেশি মিডিয়া এটা বের করেনি। বেনজীর আহমেদ: এটা একটা রং কয়েনেজ (ভুল শব্দ উদ্ভাবন)। আমেরিকায় যখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে লোকজন মারা যায়, তখন তো মার্কিন মিডিয়া এটা বলে না। আপনারাও হইচই করে বলেন না। পশ্চিমা অনেক কিছু নিয়ে...

    প্রশ্ন: টিভি টক শোতেও দেখেছি, আপনি একটি আলোচনায় বলেছিলেন, বোস্টন কিলিং নিয়ে সিএনএন কথা বলল না। তো আপনি এটা দেখবেন না যে বোস্টন পুলিশ সাধারণভাবে কেমন আচরণ করে? আমাদের বাহিনীগুলো নিয়মিতভাবে যা সব করে থাকে, সেগুলো বিবেচনায় না নিয়ে আপনি আমেরিকার সঙ্গে কীভাবে মেলান? বেনজীর আহমেদ: আমি কোথায় মেলালাম। আমি বোস্টনের কথা বলেছি। আমি আমার বাহিনীর সঙ্গে মেলাইনি। এটা আপনি মেলাচ্ছেন এখন। যা আপনার কথা, তাকে আমার বলে চালিয়ে দিতে চাইছেন (হাসি)। এটা কিন্তু নৈতিকভাবে ঠিক নয়।

    প্রশ্ন: ২২ ডিসেম্বরে খালেদা জিয়ার এক টুইটে ১৯ জন বিএনপি কর্মীসহ ৭৫০ জন নিখোঁজ বা গুমের তথ্য দেওয়ার বিষয়ে কোনো তদন্ত হয়েছে কি? বেনজীর আহমেদ: পত্রিকায় পড়েছি। তদন্ত কীভাবে করব? নাম-ঠিকানা-পরিচয় লাগবে। শুধু তথ্যের ওপর তদন্ত হয় না।

    প্রশ্ন: বিএনপি আপনাকে সুনির্দিষ্ট তালিকা দিলে তদন্ত করবেন? বেনজীর আহমেদ: আমার কাছে আসার কথা নয়, যাদের কাছে আসবে, তারা দেখবে। সরকার চাইলে র‍্যাব করবে।

    প্রশ্ন: আমাদের দেশের অবস্থা ভালো বোঝাতে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৯ সালে ব্রিটেনে নিখোঁজ হওয়া পৌনে ৩ লাখের মধ্যে ২০ হাজার ফিরে আসেনি। আমেরিকার অবস্থা আরও খারাপ। আপনার মন্তব্য? বেনজীর আহমেদ: কোনো মন্তব্য নেই। রাষ্ট্রের কর্মচারী হয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ওপর মন্তব্য করতে পারি না।

    প্রশ্ন: আমরা খতিয়ে দেখেছি যে বাংলাদেশের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের সঙ্গে ওই মিসিং হওয়া ব্যক্তিদের কোনো মিল নেই। বেনজীর আহমেদ: আমরা অবশ্য এটা জানি যে, কোনো কোনো দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের রেকর্ডেও এমনটা পাবেন।

    প্রশ্ন: তার সঙ্গে আমাদের হত্যা-গুমের মিল খুঁজে পান? বেনজীর আহমেদ: আমি মিসিং মানুষের কথা বলছি। দুনিয়াজুড়েই এটা হচ্ছে, অনেকে ফিরে আসেন, কেউ কখনোই ফিরে আসেন না। আমাদের দেশেও লোকজন মিসিং হয়, ফিরে আসে, ফিরে আসে না। এই মুহূর্তে আমাদের কাছে ১১ জনের নিখোঁজ তালিকা আছে। অভিযোগ ছিল তাঁরা গুম হয়েছেন, আমরা দেখলাম তাঁরা বাড়িতে কাজকর্ম করছেন। কিছুদিন আগে একজন গুরুত্বপূর্ণ লোক সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে স্বেচ্ছায় মিসিং হয়ে স্বেচ্ছায় আবির্ভূত হলেন। আপনারা এ নিয়ে পত্রিকায় অনেক লেখালেখি করেছেন। আমি নামটা বলতে চাই না। কেউ পাওনাদারের কারণে মিসিং হচ্ছেন।

    প্রশ্ন: র‍্যাবের হেফাজতে সাম্প্রতিক মৃত্যু, হয়রানির তথ্য? এ বিষয়ে আপনাদের অভ্যন্তরীণ তদন্তের কী ফল? বেনজীর আহমেদ: এসব তথ্য তো আপনাদের ভালো জানার কথা। আমাদের হাতে নজির নেই। আমাদের ১৪টি ব্যাটালিয়নকেই আমরা ওয়াচ করি। (হেসে) অবশ্য ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক জর্জ অরওয়েলের বিগ ব্রাদারের মতো করে ওয়াচ নয়। এ জন্য একটি কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ইউনিট আছে। দোষীরা শাস্তি পান।

    প্রশ্ন: কতজন কী কারণে শাস্তি পান, সেটা কি প্রকাশযোগ্য? বেনজীর আহমেদ: প্রকাশযোগ্য। কিন্তু আমাদের দেশে তো এটাও এক সমস্যা, একবার পুলিশ সদর দপ্তর এ রকম তথ্য প্রকাশ করে বিপদে পড়েছিল। ওটাই মূল শিরোনাম হয়ে গেল। আপনি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির স্বার্থে প্রকাশ করলেন, সেটাই ঘায়েলের জন্য ব্যবহৃত হবে। আমরা শাস্তি যে দিই, সেটা আপনাকে দেখাব, কিন্তু প্রকাশের জন্য নয়।

    প্রশ্ন: সোয়াট বা সিটিইউর মতো বিশেষায়িত সংস্থাগুলোর জন্মের পরও র‍্যাব কেন বিলুপ্ত হবে না? বেনজীর আহমেদ: অন্য সংস্থা এসেছে, কিন্তু র‍্যাব বিলুপ্ত হবে কেন? আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত র‍্যাবের সামর্থ্য অনেক উত্তম। পুলিশ পারলে র‍্যাব সৃষ্টি হতো না। আর র‍্যাবের বেঁধে দেওয়া মানটাই আজ অন্যান্য সংস্থা অনুসরণ করছে। র‍্যাব জাতীয় সামর্থ্য বৃদ্ধি করছে। অনেক দেশেই একই বিষয়ে একাধিক সংস্থা কাজ করে। হোলি আর্টিজেন বেকারির পরে এ পর্যন্ত র‍্যাব ও পুলিশ যথাক্রমে ৪৯২ ও ২০০ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার করেছে। র‍্যাব না থাকলে চিত্রটি হতো উল্টো।

    প্রশ্ন: এভাবে সামরিক বাহিনীকে যুক্ত করে বিশ্বের কোথাও এ রকম বাহিনী আছে কি? বেনজীর আহমেদ: না, এ ধরনের বাহিনী অনন্য।

    প্রশ্ন: ৮০০ কোটি টাকার বাজেটের একটি বাহিনী, একটি সাধারণ বিধির অধীনে চলা কি ঠিক? পূর্ণাঙ্গ সংসদীয় আইন নয় কেন? বেনজীর আহমেদ: আমরা একটি সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ আইনের খসড়া তৈরি করেছি। অংশীজনদের মতামত নিচ্ছি। সরকার ও সংসদ আইন করবে।

    প্রশ্ন: খসড়া আইনে নতুন কী অন্তর্ভুক্ত হতে পারে? নিয়োগনীতি? বেনজীর আহমেদ: অনেক প্রশাসনিক সমস্যা মোকাবিলা করেছি। যেমন সরকার অনুমোদন করলেই তবে আমরা তদন্ত করতে পারি। আবার আদালতের নির্দেশদানের এখতিয়ার আছে। সুতরাং আদেশ আমরা তামিল না করে পারি না, কিন্তু তা-ও অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হয়। প্রশাসনিক, অপারেশনাল ও অনুসন্ধানগত জটিলতা দূর করার চেষ্টা আমাদের রয়েছে। এটা শতভাগ প্রেষণনির্ভর বাহিনী, তাই ঘন ঘন বদলির কারণে আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সবার ও সব তথ্য সংরক্ষণ করতে পারছি না। ফলে কিছু নিজস্ব টেকনিক্যাল স্টাফ প্রয়োজন।

    প্রশ্ন: একজন সাবেক সেনাপ্রধান র‍্যাবে অফিসার দেওয়াকে নিরুৎসাহিত করেছিলেন বলে শুনেছি। আইন দ্বারা এর সমাধান কীভাবে হবে? ৪০ শতাংশের সেনা কোটা পূর্ণ থাকে কি? বেনজীর আহমেদ: ওটা তো নিশ্চয় তাঁর সরকারি ভাষ্য ছিল না। তাই এর ওপর মন্তব্য করা ঠিক মনে করি না। কোটায় কখনো নানা কারণে ওঠানামা থাকতে পারে, তবে তা সাময়িক।

    প্রশ্ন: র‍্যাবের ওপর মানুষের আস্থার বিষয়ে আপনি বলেছেন, দেশ-বিদেশে সমীক্ষা হয়েছে। কারা বলল, ৮৩ ভাগের আস্থা আছে? বেনজীর আহমেদ: যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট।

    প্রশ্ন: আপনি বলেছেন, ১০ বছরে র‍্যাব দেড় লাখ লোক গ্রেপ্তার ও ১ হাজার ২০০ জঙ্গি গ্রেপ্তার করেছে। ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার একটিমাত্র অংশ আপনি, গ্রেপ্তারের পরের স্তরগুলোর ফলাফল জানতে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা আছে কি না? বেনজীর আহমেদ: দেখুন, গ্রেপ্তারের ওই সংখ্যা এটাও নির্দেশ করছে যে, তথাকথিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডই যদি আমরা বেশি করতাম, তাহলে এরাই বেশি মারা যেত। আবার দেখবেন, ঢাকায় বিভিন্ন বাহিনী ছিল, যাদের সঙ্গে র‍্যাবের ‘এনগেজমেন্ট’ বা গোলাগুলি হয়েছে, তাদের সংখ্যা কমেছে। শাহাদাৎ বাহিনী, জাহাঙ্গীর বাহিনী কোথায়? যখন এ রকম বাহিনী অনেক ছিল, তখন রেট অব এনগেজমেন্ট বেশি ছিল।

    প্রশ্ন: কিন্তু বছরে ৮০ থেকে ১০০ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে, এটা বেশি মনে হয় না? বেনজীর আহমেদ: আপনি বলুন, কোন সংখ্যাকে আপনি স্ট্যান্ডার্ড মনে করেন? কত জন আমাদের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হলে আপনি খুশি হবেন?

    প্রশ্ন: পাল্টা প্রশ্ন আপনাকেও করা চলে। আর কত সংখ্যা হলে আপনি তাকে ন্যূনতম বলবেন? বেনজীর আহমেদ: আমার কাছে কোনো সংখ্যা নির্ধারিত নেই। এক বছরে কেউ যদি এনগেজমেন্টে না আসে, একটাও হবে না। আসলে যে কয়টা আসবে, সেই কয়টা হবে।

    প্রশ্ন: আপনি ‘এনগেজমেন্ট’ বলছেন। তাহলে বলুন পেশাদার খুনির মানবাধিকারে আপনি বিশ্বাস করেন কি? এটা মানতে আপনি সাংবিধানিকভাবে বাধ্য। বেনজীর আহমেদ: কেন করব না? এটা আমরা মানি তো। না মানলে গ্রেপ্তার করা দেড় লাখ লোক ও ১ হাজার ২০০ জঙ্গি সবাই তো নিহত হতো।

    প্রশ্ন: গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মনিটরিং কীভাবে চলে? বেনজীর আহমেদ: অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা করি না, ধরেই পুলিশকে দিই। তারা বাকি কাজ করে। আমরা এই প্রথম একটি ডেটাবেইস করেছি। জেলে ঢোকা ও বেরোনো আমরা প্রতিমুহূর্তে মনিটর করছি। কোন সন্ত্রাসী কখন ঢুকল, কখন বেরোল, তা বলতে পারব। ৫০ ভাগের বেশি জেলে এটা করেছি। আমরা যেসব মামলার তদন্ত করি, এর জন্য একটি কেস ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার করেছি। তদন্তের প্রতিটি ধাপে কী ঘটছে, তার ডেটা সংরক্ষণ চলছে। আর সংঘাতে আমাদের কতজন আহত হয়েছে, অঙ্গহানি ঘটেছে, তা আমরা প্রকাশ করি না। কারণ সন্ত্রাসীদের উৎসাহ দিতে চাই না।

    প্রশ্ন: ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, এনকাউন্টার চলছিল, হঠাৎ এসব বন্ধ হয়ে গুম এল? কীভাবে দেখেন আপনি? বেনজীর আহমেদ: এখন তো কোনো অভিযোগই পাই না। তথাকথিত গুমের অভিযোগও পাই না। সুন্দরবনে গত সপ্তাহে দুজন লোক মারা গেছে। এখন বলবেন, তারা মারা পড়ল কেন? তারা সশস্ত্র, আমরা বেশি প্রশিক্ষিত। ১৭টি বাহিনীর ১৯২ জন লোক ১৬ হাজার রাউন্ডের মতো গুলি নিয়ে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণ করেছে, এসব খুব বড় করে আসে না। বেসরকারি ব্যাংক, প্রধানমন্ত্রীর তহবিল ও র‍্যাবের তহবিলের টাকায় তাদের পুনর্বাসন হয়েছে। জেলেরা সন্ধ্যা হলে আগে বাতি নেভাতেন, এখন তাঁরা গ্যাসের চুলা জ্বালান, টিভি দেখেন।

    প্রশ্ন: বলুন তো, র‍্যাবের কালো পোশাক সঙ্গে গোখরো সাপের ফণার প্রতীক, এটা দেখে শিশুরা র‍্যাব হতে চাইবে? ভয় পাবে না? এটা কি বদলানোর কথা ভাববেন? অন্য দেশে? বেনজীর আহমেদ: এটা যাঁরা তৈরি করেছিলেন, তাঁরা চিন্তাভাবনা করেই করেছেন। হয়তো আপনি যেভাবে ভাবছেন, সেটা তাঁরা চিন্তা করেননি। তাঁরা ভেবেছেন, সন্ত্রাসীদের জন্য এটা একটা বার্তা। অনেক দেশে বাঘ আছে, শ্বাপদের চিহ্ন অনেক স্পেশাল ফোর্সের আছে। হোলি আর্টিজানের পরে গঠিত স্পেশাল কমান্ডো গ্রুপের প্রতীক হলো অর্ধেক মানব, অর্ধেক নেকড়ে। নিরীহর কাছে তারা মানুষ, সন্ত্রাসীর কাছে তারাই নেকড়ে।

    প্রশ্ন: সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড রহস্য হয়েই থাকবে? আপনি ডিজি হয়ে আসার পরে কি অগ্রগতি করেছেন? বেনজীর আহমেদ: র‍্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে আমি যদি আমার কর্মকালের মধ্যে ভুক্তভোগী পরিবারের প্রত্যাশা অনুযায়ী এর একটা সুষ্ঠু পরিণতি দেখতে পারি, তাহলে আমার থেকে বেশি খুশি হয়তো কেউ হবেন না।

    প্রশ্ন: আপনি আরেকটু নির্দিষ্ট করে বলবেন, কবে আমরা এটা আশা করতে পারি? বেনজীর আহমেদ: আপনি আমাকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ফাঁদে ফেলতে চাইছেন কি? পেশাদার হিসেবে আমি সেই ফাঁদে পা দেব না (হাসি)।

    প্রশ্ন: নারায়ণগঞ্জের ত্বকী হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্র র‍্যাব সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেওয়ার পরেও কিন্তু হয়নি। নথিটি আপনি দেখেছেন কি? বেনজীর আহমেদ: নথিটি চলমান, ক্লোজ করা হয়নি। দুই সপ্তাহ আগে সাগর-রুনির নথিটি পর্যালোচনার সময় এটিও দেখেছি।

    প্রশ্ন: নির্দিষ্ট সময়সীমা বলা সম্ভব নয়? বেনজীর আহমেদ: না। অনেক দেশে কোনো মামলার যখন নিষ্পত্তি হয় না, তখন তাকে ডেথ কেস ফাইল বলে। আবার ৪০ বছর পরে কোনো ক্লু থেকে কিছু পাওয়া গেলে সেটা আবার খোলা হয়। পশ্চিমা দেশগুলোর ওয়েবসাইটে এটা থাকে।

    প্রশ্ন: বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর ফাইল খোলা? বেনজীর আহমেদ: আমরা এর তদন্ত করছি না।

    প্রশ্ন: র‍্যাবের রাজনৈতিক ব্যবহারের অভিযোগ কীভাবে দেখেন? বেনজীর আহমেদ: নমস্য রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের রাজনৈতিক বক্তব্যের পাল্টা বক্তব্য দেওয়া আমার কাজ নয়। আমি পেশাদার। সে হিসেবেই আমার কাজটি করতে চাই।

    প্রশ্ন: র‍্যাবের অভ্যন্তরীণ অভিযোগের তদন্ত নির্বাহী কর্মকর্তা বাদ দিয়ে বিচারিক হাকিম দিয়ে করালে অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা পেত বলে মনে করেন কি? বেনজীর আহমেদ: কেন তাদের দিয়ে করাতে হবে, এটা আমি জানি না।

    প্রশ্ন: কারণ বিচারকেরা স্বাধীন। বেনজীর আহমেদ: আমরা এটাও শুনি তাঁরা স্বাধীন নন। (হাসি) আপনার পত্রিকাতেই ছাপা হবে, না, তাঁরা স্বাধীন নন। যেটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, সেটা হলো আমাদের সঙ্গে এনগেজমেন্টের কারণে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে, তখন আমরা তদন্ত করছি। যদি আমরা যথার্থ দেখি, আর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট না বলেন, তাহলে সেটাই টিকবে। এটাই ভারসাম্য। আর আমি বলব, আমরা কঠোর শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।

    প্রশ্ন: মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক? সরকারি কমিশনকে কিন্তু আপনাদের প্রতি সন্তুষ্ট মনে হয় না। বেনজীর আহমেদ: তাদের কোনো অনুরোধ আমাদের কাছে এই মুহূর্তে পেন্ডিং নেই।

    প্রশ্ন: আসক, অধিকার কিছু আপনাদের জানায়? বেনজীর আহমেদ: না।

    প্রশ্ন: আপনার নিজ এলাকা গোপালগঞ্জের কোনো আসন থেকে কখনো নির্বাচনে দাঁড়াবেন না? বেনজীর আহমেদ: আমি এসব নিয়ে ভাবি না।

    প্রশ্ন: তার মানে আপনি রাজনীতিতে নামার সম্ভাবনা নাকচ করছেন না। বেনজীর আহমেদ: কেন আমি এসব নিয়ে ভাবতে যাব, আমি তো কর্মরত আছি।

    বেনজীর আহমেদ: র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) মহাপরিচালক

    সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান সূত্র: প্রথম আলো

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close