যে কারণে রাজশাহীতে মনোনয়ন প্রত্যাশীর ছড়াছড়ি
রাজশাহীতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সকল রেকর্ড ভেঙেছে এবার। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে রাজশাহীর ছয়টি আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ৯০ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৪৭ জন এবং বিএনপিতে ৪৩ জন। মূলত চার কারণে এবার বেড়েছে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা।
এর মধ্যে রয়েছে, ২০১৪ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন, স্থানীয় পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকা না থাকা, বর্তমান সংসদ সদস্যের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, জনগণ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে নিজেকে তুলে ধরা।
সম্পর্কিত খবর
২০০৮ সালের নির্বাচনে রাজশাহীর ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ১৫ জন। আর বিএনপিতে ছিল ১৪ জন। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ২৬ জন। এ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত বিএনপি অংশ না নিলেও মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ২২ জন।
এবার রাজশাহীর ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগের ৪৭ জন নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে রাজশাহী-১ আসনে ১১ জন, রাজশাহী-২ আসনে ৫ জন, রাজশাহী-৩ আসনে ১২ জন, রাজশাহী-৪ আসনে ৬ জন, রাজশাহী-৫ আসনে ৯ জন এবং রাজশাহী-৬ আসনে ৪ জন।
রাজশাহীর ছয়টি আসনে বিএনপির ৪৩ জন নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে রাজশাহী-১ আসনে তিনজন, রাজশাহী-২ আসনে দুইজন, রাজশাহী-৩ আসনে ১৩ জন, রাজশাহী-৪ আসনে আটজন, রাজশাহী-৫ আসনে সাতজন এবং রাজশাহী-৬ আসনে নয়জন।
রাজশাহী-৫ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও তরুণ ব্যবসায়ী আসিফ ইবনে আলম তিতাস বলেন, স্থানীয় এমপির সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে এবং ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ায় অনেকে এবার মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছেন। তবে যে মনোনয়নপত্র পাবেন তার পক্ষেই সবাই কাজ করবে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আব্দুল খালেক বলেন, রাজনীতিতে পুরাতনরা এক সময় চলে যাবেন। আবার নতুনরা আসবেন।
প্রফেসর আব্দুল খালেক বলেন, আমাদের দলের কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা জানালেন, মনোনয়নপত্র পাই আর না পাই, নেত্রী আমাদের ডেকেছেন, ৩০ হাজার টাকা মনোনয়নপত্র কিনে দলীয় ফান্ডে দিতে পেরেছি। এটাতেই অনেক তৃপ্তি লেগেছে। মনোনয়নপত্র না তুললে আমাকে নেত্রী নাও ডাকতে পারতেন।
তিনি বলেন, দশ বছর ধরে সংসদ সদস্য আছেন যারা তাদের ক্ষমতার দাম্ভিকতা বেড়ে গেছে। এমন রাগে অনেকজন মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছেন। কিংবা সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ জানিয়ে মনোনয়ন তুলেছেন। এমন অনেকে আছেন যারা জানেন মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য না, নিজেকে প্রচার করার জন্য উত্তোলন করেছেন। একাধিক প্রার্থী উত্তোলন করায় দলের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা বেশি হচ্ছে ভাবা যায়। তবে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে প্রার্থী না দিলে ভুল হবে। আর এই ভুলই ব্যাপক উন্নয়নের পরও কাল হয়ে দাঁড়াবে। অবশ্য দলীয় নেত্রী অনেক হিসাব-নিকাশ করে প্রার্থী দেবেন। এটাই আমরা সবাই প্রত্যাশা করি।
মনোনয়ন নিশ্চিতের পর দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা-এমন প্রশ্নে আব্দুল খালেক বলেন, আমার মনে হয় না-দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ সবাই তো বঙ্গবন্ধুর আর্দশের রাজনীতি করেন। তাই দলীয় প্রার্থীকে মেনে নিয়ে সবাই নৌকার জন্য কাজ করবেন।
রাজশাহী জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, অগণতান্ত্রিক সরকারকে সরানোর জন্য এবারের নির্বাচনে রাজশাহীর একাধিক আসনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছে। তবে মনোনয়ন নিশ্চিতের পর সবাই উৎসবমুখর আমেজে ধানের শীষ প্রতীকে নিবেদিতভাবে কাজ করবেন। দেশবাসীকে জানান দেওয়া হচ্ছে, বিএনপি এখনও শেষ হয়ে যায়নি। তারা এতো নির্যাতনের পরও নির্বাচনী ময়দানে রয়েছে। এতে দল কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। সবাই একজন প্রার্থীকে মেনে নেবে।
বিএনপির দুইবারের সাবেক এমপি ও রাজশাহীর জেলার সাবেক সভাপতি নাদিম মোস্তফার ছোট ভাই সাহিদ হাসান। তার বাড়ি নগরীর দরগাপাড়া এলাকায়। তিনি ছাত্রজীবনে রাজশাহী কলেজ সংসদের ভিপি ছিলেন। সাহিদ হাসান রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতিও ছিলেন। এছাড়াও তিনি নগর বিএনপির মিনু-মিলন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ৯০’র এরশাদ সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজশাহীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল সাহিদ হাসানের।
রাজশাহী-২ আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সাহিদ হাসান বলেন, দলে আমার অনেক ত্যাগ রয়েছে। কিন্তু বরাবরই আমি দলের মূল্যায়ন বঞ্চিত হয়েছি। এবার আমি দলের হাই কমান্ডের নির্দেশে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছি। রাজশাহী বিএনপির একটি বড় অংশ আমার সঙ্গে রয়েছেন। আশা করছি এবার মূল্যায়ন পাবো। সদর আসনে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে এবার এ আসনটি পুনরুদ্ধার করে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে উপহার দিতে পারবো।
/পি.এস