• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

নেত্রকোনা-০৪

তৃণমূলের আস্থা আ.লীগের শফী আহমেদ, বিএনপিতে বাবর-পত্নী

প্রকাশ:  ১১ নভেম্বর ২০১৮, ১৭:০৯ | আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০১৮, ১৭:৪৬
নেত্রকোনা প্রতিনিধি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল হিসেবে খ্যাত নেত্রকোনা-০৪ (মদন,মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী উপজেলা নিয়ে গঠিত) আসনে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। ইতিমধ্যেই প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়নের আশায় বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে হাট-বাজার ও গুরুত্পূর্ণ স্থানে সভা-সমাবেশ করে ভোটারদের কাছে নিজের মনোনয়নের বিষয়টি তাদের সামনে তুলে ধরেছেন। এই আসনটিতে আওয়ামীলীগ-বিএনপি দু’দলই ভাল অবস্থানে রয়েছে। এই আসনটিতে ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি’র সংসদ সদস্য ছিলেন জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। এলাকায় বিএনপি ও জোটের নেতাকর্মীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নিবার্চনে বিএনপি অংশ নিলে আ.লীগের জন্য এ আসনে জয় ধরে রাখাটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলেও অনেকে ধারণা করছেন।

এই আসনে পরপর দু’বার আ.লীগ থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নারী নেত্রী রেবেকা মমিন নির্বাচিত হলেও বিএনপির একটি বড় নিরব জনমত রয়েছে। রেবেকা মমিন আ.লীগের সংসদ সদস্য হলেও বয়সের ভারে তিনি এখন তৃণমূল আওয়ামীলীগ ও ভোটারদের সাথে তেমন যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেন না। তাইএলাকার প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা ও সাধারণ কর্মীদের ধারণা এ আসনে বিএনপির সাথে ভোটের লড়াই করতে হলে থেকে একজন পরিশ্রমী ও ত্যাগী জনপ্রিয় নেতাকে দলীয় মনোনয়ন দিতে হবে।

এ হিসেবে বর্তমানে এই আসনে বেশ জনপ্রিয় ’৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও বর্তমান কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা শফী আহমেদ। তিনি এবার আওয়ামীলীগ থেকে দলীয় মনোনয়নের জন্য বিগত কয়েকটি সংসদ নির্বাচন থেকেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকার সাধারণ ভোটার ও তৃণমূল আওয়মীলীগের কাছেও বেশ জনপ্রিয় নেতা হিসেবে তিনি ইতোমধ্যেই আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।

এই আসনে আ.লীগ থেকে দলীয় মনোনয়নের জন্য বর্তমান সংসদ সদস্য ছাড়াও জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন নেতা। এদের মাঝে উক্ত আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে সাবেক তুখোড় ছাত্রনেতা ও বর্তমান কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা শফী আহমেদ, ক্যাপ্টেন (অবঃ) মনজুরুল হক চৌধুরী ও আওয়ামীলীগ নেতা মমতাজ চৌধুরীর নাম রয়েছে।

উল্লেখিত আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জনাবা রেবেকা মমিনের বিরুদ্ধে সাবেক বিএনপি নেতা ও তালিকাভুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারকে দলে টানার অভিযোগ রয়েছে। সংসদ সদস্য রেবেকা মমিনের ব্যক্তিগত সহকারি তোফায়েল আহমেদের পিতা ও এমপি’র ঘনিষ্ট সহচর হিসেবে খ্যত মোহনগঞ্জ আ.লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র লতিফুর রহমান রতনের পিতা চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। লতিফুর রহমান রতনের পিতার নামে ট্রাইবুনাল থেকে সমন এসেছিল। এছাড়াও বিগত জামাত-বিএনপি জোট সরকারের আমলে খালিয়াজুড়ি এলাকার আতাউর রহমান (চেয়ারম্যান), লোকমান হেকিম (চেয়ারম্যান) ও মোহনগঞ্জ এলাকার তেতুলিয়ার চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিএনপি-জামায়েত জোট সরকারের লুতফুজ্জামান বাবরের কর্মী ও আস্থাভাজন ছিলেন। এদের মধ্যে আতাউর রহমান এক অনুষ্ঠানে লুতফুজ্জামান বাবরের হাতে স্বর্ণের ধানের শীষ তুলে দিয়েছিলেন যার স্থিরচিত্র এখন এলাকার সকলের কাছেই রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসার পর এমপি রেবেকা মমিনের হাত ধরে এরা এখন এলাকায় আ.লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এতে বেশ মর্মাহত ও হতাশ। সরকারের বিগত শাসনামলে যখন রেবেকা মোমিন এমপি হন সে সময় থেকে হাওর অঞ্চলের বিলের সকল ইজারাদারদের থেকে রেবেকা মমিনের ব্যক্তিগত সহকারি তোফায়েল আহমেদ ১০% ভাগ নিতেন যা বর্তমান সময়ে বেড়ে প্রায় ৪০%-৫০% এ দাঁড়িয়েছে। যদিও প্রথমে ভাবা হত টকাটা শুধু তোফায়েল আহমেদ নিজে নেন কিন্তু পরে জানা যায় এতে সংসদ সদস্য নিজেও জড়িত আছেন। পাশাপাশি মোহনগঞ্জ আ.লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র রতনের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা দুর্নিতির অভিযোগ।

এদিকে বিএনপি থেকে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমানে কারাবন্দি ও ফাঁসির দন্ডাদেশপ্রাপ্ত সাবেক বিএনপি-জামায়েত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবনী। এছাড়াও হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় বিএনপির কৃষি বিষয়ক সহ-সম্পাদক কৃষিবিদ চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল ফরুক আলোচনায় রয়েছেন। এই আসনে বাবর পরিবারের বিকল্প হিসেবে কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল ফারুক বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়াও সুপ্রিম আইনিজীবি রফিকুল ইসলাম রাজার নামও শোনা যাচ্ছে। এ আসনটিতে কমিউনিষ্ট পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন নেত্রী জলি তালুকদার নিবার্চনে অংশ নিতে পারেন বলে জানা গেছে।

নেত্রকোনা -০৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী) এ আসনে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা রয়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার ৫শ ৮৬ জন। ১৯৯১ সালে ৭ হাজার ৮শ ৯৮ ভোট বেশী পেয়ে বিএনপি থেকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর নির্বাচিত হলেও পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে আবারো ১৫ হাজার ৮শ ৩৫ ভোট বেশী পেয়ে আওয়ামীলীগ প্রার্থী আব্দুল মোমিন নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারো ৩ হাজার ৮শ ৫২ ভোট বেশী পেয়ে লুৎফুজ্জামান বাবর এমপি নির্বাচিত হন। পরে ২০০৮ সালে আবার আওয়ামীলীগ প্রার্থী রেবেকা মোমিন ১৬ হাজার ৭শ ৩১ভোট বেশী পেয়ে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় রেবেকা মোমিন এমপি নির্বাচিত রয়েছেন। তবে আসন্ন একাদশ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল থেকে বর্তমান এমপি রেবেকা মোমিন মনোয়ন চাইলেও বয়সের ভারে তিনি এখন অনেকটাই দুর্বল হয়ে পরেছেন। তাই এবার নতুন কোন মুখ আসবে নৌকার মাঝি হয়ে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন তৃণমূলের কর্মীরা।

/এটিএম

নেত্রকোনা,শফী আহমেদ,একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন,নেত্রকোনা-০৪,বিএনপি,আ.লীগ,আওয়ামীলীগ,বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close