• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

পাবনা-৪

ভূমিমন্ত্রীর ঘরে বাইরে দ্বন্দ্ব, তৃণমূলের প্রার্থী চায় বিএনপি

প্রকাশ:  ১১ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৫৮
পাবনা প্রতিনিধি

ঘোষিত হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। সারাদেশ এখন সরগরম নির্বাচনী আলোচনায়। বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের অংশ গ্রহণের বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার না করলেও, আওয়ামী লীগ এরই মাঝে বিক্রি শুরু করেছে মনোনয়ন ফরম। কে পাচ্ছেন দলের মনোনয়ন, নানা আলোচনায় জল্পনা কল্পনায় এখন মুখর নির্বাচনী আসনগুলো।

নানা সমীকরণ আর চুলচেরা হিসেব নিকেশের এই আলোচনা চলছে পাবনায় ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত পাবনা-৪ আসনেও।

ঈশ্বরদী জংশন, ইপিজেডের পাশাপাশি নির্মাণাধীন দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে আসনটির গুরুত্ব বেড়েছে বহুগুণ। জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের হাই প্রোফাইল মনোনয়ন প্রত্যাশী। অন্তঃকোন্দলে বারবার এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে গেছে দাবি করে দ্বন্দ্ব কাটিয়ে আসনটি ফিরে পেতে চান বিএনপির নেতারাকর্মীরা।

পাবনা-৪ আসনের চারবারের এমপি ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুর রহমান একাদশ সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন প্রত্যাশী। প্রবীণ এই নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চারবার বিজয়ী হলেও বর্তমানের পরিস্থিতি ভিন্ন। পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দলের ত্যাগী নেতৃত্বকে অবমূল্যায়নের অভিযোগ ওঠায় পাবনা-৪ আসনে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে আওয়ামী লীগ। ভূমিমন্ত্রী পরিবারের সদস্যরা সন্ত্রাস, ভূমি দখল, টেন্ডারবাজিতে জড়িয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। দলীয় কমিটি গঠনে ত্যাগী নেতৃত্বকে মূল্যায়ন না করায় দুরত্ব বেড়েছে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গেও।

এ প্রসঙ্গে আটঘরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতন বলেন, নৌকার প্রশ্নে আমাদের কোন অস্বস্তি নেই। তবে, দীর্ঘদিন এক নেতৃত্ব থাকায়, এবং ক্ষমতার দম্ভে দলীয় নেতাকর্মীদের অবহেলা, অবমূল্যায়ণ এবং হয়রানির কারণে কর্মীদের মধ্যে হতাশা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দলের অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।

আগামী নির্বাচনে দলীয় হাইকমান্ড এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই মনোনয়ন দেবেন। একই ধরণের বক্তব্য দিয়েছেন ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক মালিথাও। তিনি বলেন, দলীয় কমিটি করার ক্ষেত্রে ত্যাগী নেতৃত্বকে মূল্যায়ন না করে, স্বজনপ্রীতি, পরিবারতন্ত্রের কমিটি করা হয়েছে।অযোগ্যদের পদায়নে দলীয় নেতারা বাধা দিলেও, ভূমিমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তে হাইব্রিড কমিটি করা হয়েছে। একারণে দলীয় কর্মীরা পরিবর্তন চাইছেন।

তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ। নিজেকে পাবনা-৪ আসনে অপ্রতিদ্বন্দী দাবি করে আগামী নির্বাচনেও মনোনয়নের ব্যপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

তিনি বলেন, বিগত সময়ে ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া আসনে যে বিস্ময়কর উন্নয়ন হয়েছে তাতে এ এলাকার মানুষ বার বার আমাকে নির্বাচিত করেছে। আগামীতে সে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে জনগণ নৌকাতেই আস্থা রাখবে।

মন্ত্রী আরো বলেন, যেখানে আমি নির্বাচনে মনোনয়ন চাইছি, সেখানে অন্য কে মনোনয়ন চাইল দেখার বিষয় না। আর্থিক সুবিধা নিয়ে দলের অনেক নেতা বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে নেমেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লিটন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আইনজীবী রবিউল আলম বুদু, ঈশ্বরদীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান বিশ্বাস, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব) নজরুল ইসলাম রবি। মনোনয়ন নিয়ে গৃহদাহ রয়েছে মন্ত্রীর নিজ পরিবারেও। নৌকার মাঝি হতে চাইছেন মন্ত্রী কন্যা মেহেজাবিন শিরীন ও মেয়ে জামাই আবুল কালাম আজাদ মিন্টু। এছাড়া মনোনয়ন চাইছেন মিজানুর রহমান স্বপন, ব্যারিস্টার সৈয়দ আলী জিরু ফকির, অধ্যাপক আকরাম হোসেন।

১৯৯১ সালে আসনটিতে বিএনপির সিরাজুল ইসলাম সরদার নির্বাচিত হন। ১৯৯৬, ২০০১ সালে সিরাজ সরদার বিএনপির মনোনয়ন পেলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হন কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব। ২০০৮ সালেও হাবিব বিরোধীতা করেন বিএনপি প্রার্থীর। বিএনপির দলীয় কোন্দলে প্রতিবারেই সহজ জয় পায় আওয়ামী লীগ। তবে এই পরিস্থিতির উত্তরণ চান বিএনপির তৃণমূল কর্মীরা। দলের ত্যাগী নেতাদের মতামত গুরুত্ব পেলে আসনটিতে কোন্দল কাটিয়ে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বিএনপি নেতারাও।

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু বলেন, ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া বিএনপির ঘাঁটি। কতিপয় অর্বাচীনের বেঈমানি ও বিশ্বাস ঘাতকতার কারণে আমরা বার বার আসনটি হারিয়েছি। এ এলাকায় জাতীয়তাবাদী শক্তির মানুষ ঐক্যবদ্ধ। বিগতদিনে আন্দোলন সংগ্রামে অবদান বিবেচনায় মনোনয়ন দিলে, ঐক্যবদ্ধভাবে এ অঞ্চলের মানুষ ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করবে।

এবার মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম সরদার। কিন্তু নেতাকর্মীরা তার ওপর হতাশ, দীর্ঘদিন ধরে তিনি মাঠের বাইরে আছেন বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামে কিছুটা পিছিয়ে তিনি। তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবের সমর্থকদের দাবি, এবার মনোনয়ন পাবেন তিনি।

এ ব্যাপারে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে সবুজ সংকেতও পেয়েছেন বলে তারা দাবি করছেন। এলাকার সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীরা জানালেন, হাবিব মনোনয়ন পেলে বিএনপি আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারে। এছাড়া ঈশ্বরদী উপজেলা বিএনপি সভাপতি শামসুদ্দিন আহমেদ মালিথা, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মকলেছুর রহমান বাবলু, বিএনপি নেতা ও শিল্পপতি আকরাম আলী খান সঞ্জু, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু, ললিতা গুলশান মিতা, অ্যাডভোকেট জামিল আক্তার এলাহী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। মাঠ পর্যায় ভালো পরিচিতি ও জনপ্রিয় থাকায় এখানে জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল প্রার্থী হতে চাইবেন। সর্বশেষ গত উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানের পদে প্রার্থী দিয়েছিল জামায়াত। এছাড়া এ আসনের অপর উপজেলা আটঘরিয়ায় চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছিল জামায়াত।

অন্যদিকে উপজলো জাতীয় পার্টির সভাপতি হায়দার আলীর নাম শোনা যাচ্ছে। ঈশ্বরদীর ও আটঘরিয়া উপজেলার দুই পৌরসভা ও ১২ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত পাবনা-৪ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫৪ জন।

/পি.এস

পাবনা,ভূমিমন্ত্রী,তৃণমূল,বিএনপি,আওয়ামী লীগ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close