• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

আস্তরণ ছাড়া জাতি

প্রকাশ:  ১৬ এপ্রিল ২০১৮, ০৯:৪৭ | আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০১৮, ০৯:৪৯
লাজ্বাতুল কাওনাইন

ছোটবেলার একটা জনপ্রিয় ছড়া মনে আছে? কোন শ্রেণিতে যেনো বাংলা পাঠ্যবইতে পেয়েছিলাম।

"আপনারে বড় বলে, বড় সেই নয়

সম্পর্কিত খবর

    লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়।

    বড় হওয়া সংসারেতে কঠিন ব্যাপার

    সংসারে সে বড় হয়, বড় গুণ যার।

    গুণেতে হইলে বড়, বড় বলে সবে

    বড় যদি হতে চাও, ছোট হও তবে।"

    যতোদূর মনে পড়ে এই ছড়াটার লিখেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত আর ছড়াটির নাম "বড় কে?"

    বাঙ্গালী কবিরা আসলে অনেক ভাল ভাল কথাই বলেন। এটা আশার কথা কিন্তু কাজে প্রায় বাঙ্গালীকেই এতো সচেতন মনে হয় না। আজকালের প্রেক্ষাপটে এই ছড়া প্যারোডি করলে দাঁড়ায়...

    "আপনারে বড় ভাবে,বড় সেই হয়

    লোকে যারে বড় বলে সে হোক ক্ষয়

    বড় হওয়া আজকাল টাকা ক্ষমতায়

    বড় হবে সংসারের দিকে না তাকায়

    দাপটে তুমি উড়বে যে আকাশে

    ধপাস হবে যখন ব্যথা কিন্তু পাবে!"

    না না না!! আজকাল বড় বড় লেখিয়ের লেখা প্যারোডি, ফ্রন্ট পরিবর্তন বানান এমন কি কবির নাম পরিবর্তন, কপি পেস্ট করে নিজের নামে ছাপা কোনোই ব্যাপার ই না! বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ড পথ বাতলে দিয়েছেন আমরা এখন খালি মজা নিবো!

    কদিন আগে দেখলাম জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটা কবিতার ফ্রন্ট পরিবর্তন করা হয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণির বোর্ড এর বাংলা বইতে। আজ হঠাৎ আবার দেখি ২০১৫ সালের বাংলা বই তৃতীয় শ্রেণিতে "বড় কে" ছড়ার কবির নাম লেখা "হরিশ্চন্দ্র মিত্র" যদিও এটা ভুল বানান আসল বানান "হরিশচন্দ্র মিত্র" তাছাড়াও আমাদের প্রাচীন যুগের ছড়ার সাথে এটার বানান পরিবর্তন আছে। এইসব কাণ্ডকারখানার অযৌক্তিক যুক্তি অবশ্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ দিচ্ছেন কিন্তু মন ভরছে না!

    হঠাৎ ই যখন হরিশচন্দ্র মিত্র সামনে এসে পড়লেন তো আসুন দেখি উনার পরিচয়,

    "হরিশচন্দ্র মিত্র ১৮৩৭ সালে ঢাকার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেন। ১৮৫৮ সালে তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের 'সংবাদ প্রভাকর' পত্রিকায়। ১৮৬০ সালে হরিশচন্দ্র ঢাকার প্রথম সংবাদপত্র মাসিক 'কবিতা কুসুমাবলী' প্রকাশ করেন। ১৮৬৩ সালে তিনি ঢাকা থেকে বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, কবি, নাট্যকার, প্রবন্ধকার ও সাংবাদিকপ্রকাশিত প্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকা 'ঢাকা দর্পণ' প্রকাশ করেন। ১৮৭২ সালের ৪ এপ্রিল তাঁর মৃত্যু হয়।" এখন জনমনে অনেকগুলো প্রশ্ন জাগাটা খুব স্বাভাবিক! কারণ এক জরিপ অনুযায়ী ১৯৪২-১৯৪৩ সালের বাংলা বোর্ড বইতেও কবির নাম ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ছিলো। কমপক্ষে গত ৭৩ বছর যাবৎ আমরা যেটা জানলাম সেটা ভুল! যাক প্রশ্নগুলো পয়েন্ট আকারে দেওয়া হলো...

    ১. কোন লেখিয়ের লেখা কি তার অনুমতি ব্যতীত পরিবর্তন করা যায় কিনা?

    ২. এতো বছর যদি ভুল থাকে কবির নামে তবে, সেটা ভুল শিখে জাতির যে ক্ষতি হলো সেটার ক্ষতিপূরণ কি?

    ৩.বোর্ড যদি ভাবে পরিবর্তন করতে হবে তাহলে আগে কেন লেখিয়ের আসল লেখাটা প্রকাশ করে যথাযথ যুক্তি দিবে না জাতিকে?

    ৪.কোনো লেখা শিক্ষার্থীর জন্য ক্ষতিকর মনে হলে সেটা বাদ না দিয়ে কোন ক্ষমতা বলে পরিবর্তন করবে সেটা জানা উচিৎ জাতির?

    ৫.নোংরা বিকৃত মনের লোকজনেরা অন্যের লেখা নিজের বলে ইদানীং চালায় আমরা অহরহ ভার্চুয়াল জগৎ এ দেখছি, আর প্রাচীন যুগেও সেটা ছিলো এখন বুঝতে পারছি! যারা লেখিয়ের নাম পরিবর্তন করলেন তারা কোনো আইনি ব্যবস্থা কি নিয়েছেন এই ব্যাপারে,যে কে কেনো এই ভুল তথ্য বোর্ড বইতে এতো বছর রাখলেন?

    ৬.কোথায় কখন কি নামে কিভাবে পরিবর্তিত লেখা সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল সেই ভিত্তিতে যদি ভুল থাকে তবে শাস্তিযোগ্য ব্যক্তি কেন শাস্তি পাবেন না?

    সব কিছু ক্ষমতার জোরে হবে না! অন্তত লেখাপড়ার বিষয় মানে জাতির মেরুদণ্ড! এখানে ক্যান্সার হয়ে প্রবেশ না করি আমরা। আর যতোটা ক্যান্সার ধরিয়েছি সেটা আর না ছড়াতে দেই! আরো সচেতন হোন আরো কঠোর হোন! আপনার গড়া বেআইনে আপনার সন্তান বিপদে পড়ে গেলে তখন কান্নাকাটি ছাড়া পথ থাকবে না! আমাদের দেশের বড় বড় জনগণের বাচ্চাকাচ্চা পড়ে ইংরেজি মাধ্যম বা বিদেশ এ। তাই তাদের হয়তো মাথা ব্যথা কম! একটা হলেই হলো ভাব! কিন্তু বেশির ভাগ বাচ্চারাই পড়ে দেশজ শিক্ষানীতিতে! তাই প্রতিটা বাচ্চাকেই নিজের সন্তান মনে করুন! আজ এই পরীক্ষায় এ নিয়ম কাল সেই নিয়ম! বাচ্চাগুলোকে আর গিনিপিগ খরগোশ না ভেবে নির্দিষ্ট সঠিক শুদ্ধ স্থায়ী শিক্ষানীতিতে জাতিকে শিক্ষিত করুন! শুধু এতোটুকুই আমাদের আশা!

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close