• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

কর্পোরেট জব কিভাবে করবেন

প্রকাশ:  ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:০৯ | আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:২৩
তানিয়া সুলতানা

সুমির চাকরীটা হঠাৎ করেই চলে গেল। না কোন কাজ সম্পর্কিত কিছু না। অফিস পলিটিক্সের শিকার। যদিও এইচ আর এ কাজ। আধুনিক মার্জিত স্বভাবের সুমির মধ্যে কিছু বাড়তি গুন ছিল। অফিস ডেকোরেশন, গেস্ট হাউস এর জিনিস পত্র কেনা, অফিসিয়াল ইভেন্ট এর দায়িত্ব, এমনকি অফিসিয়াল বিভিন্ন কাজেও যেমন অফিস ডকুমেন্টারী, প্রিন্টিং পেপার্স এসবে সুমির মতামতের গুরুত্ব ম্যানেজমেন্ট দিত। এতে অন্যান্য সহকর্মীরা ঈর্ষান্বিত হতো বিশেষ করে মহিলা সহকর্মীরা, স্বয়ং ম্যানেজারও এসব সহজভাবে নিতে পারত না। অন্যদিকে সুমি যেহেতু বেশ কিছু কমিউনিটিতে সম্পৃক্ত হয়েছিল, আর ক্যারিয়ার নিয়ে লেখালেখি করতে ভালোবাসতো, কাজেই সুমির পরিচিতিও বাড়তে থাকে। যাই হোক বেশ ভালোভাবেই দিন কাটছিলো। অফিস, ফ্যামিলি, কাজের বাইরে পড়াশুনা, ট্রেনিং, কর্পোরেট ইভেন্টস। একদিন কোনো নোটিশ ছাড়াই সুমিকে সুমির ম্যানেজার কাজ থেকে অব্যাহতি দিতে বলে। যেটা কিনা ম্যানেজমেন্টের নির্দেশ। আর এই আকস্মিক ঘটনাতে সুমি দিশেহারা হয়ে পড়ে।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, কেন এই পরিস্থিতি। যে কিনা সময়মত অফিসে আসে, যখন যে কাজ করতে হয় টাইমলি করে, কোন প্রকার গসিপ এ সম্পৃক্ত হয় না। আসলে যেটা হয়েছে লোকাল এক কোম্পানীতে সুমির কর্মক্ষেত্র। যেখানে ডেইলি কাজের কোন রিপোর্ট ম্যানেজমেন্ট রাখেনা। ডিপার্টমেন্ট হেড দিনশেষে কাজ ম্যানেজমেন্ট এর কাছে বুঝিয়ে দেয়। সেহেতু কোন সুপিরিয়র যদি নিজের অ্যাকাউন্টে বেশির ভাগ কাজগুলো দেখায় আর প্রকাশ করে উক্ত কর্মী কাজের চাইতে পারসোনাল কাজের ব্যপারে বেশি ইনভলব। অন্যদিকে অন্যান্য কলিগ যারা সুমিকে ঈর্ষা করতো, তাদের কাছ থেকেও যখন নেগেটিভ কথা ক্রমাগত শুনবে তখন ম্যানেজমেন্টও কোনো এক সময় বিরক্ত হয়ে যেতে পারে। আর এই পরিস্থিতি একদিনে ঘটে নি। সমস্যা ছিল আত্মবিশ্বাসী সুমি ব্যাপারটাকে এড়িয়ে গিয়েছিলো। অবাক লাগছে ? এত সিলি ব্যাপারে চাকরি চলে গেলো ? হ্যা, এমনটা ঘটতেই পারে। একেকজনের জীবনে একেক রূপের। আমি একজনের কর্মজীবনের গল্প শুনেছিলাম যার কিনা ফেসবুক এর একটা স্ট্যাটাস এর জন্যে কর্মচ্যুতি ঘটে। আর স্ট্যাটাস টা কর্মক্ষেত্র বা কাজ নিয়ে ছিল না। ছিল অফিসটা যে এলাকায় অবস্থিত সেই এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে।

সম্পর্কিত খবর

    চাকরীকালীন জীবনে এরকম পরিস্থিতির শিকার কমবেশি সবাই হয়েছেন। কারো চাকরি চলে গেছে আবার কেউ কেউ স্বেচ্ছায় চাকুরী থেকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য হয়েছেন। কাজেই খুব সাবধানতার সাথে আপনাকে কর্মক্ষেত্রে চলতে হবে। সুমির চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে খুবই জরুরি কয়েকটি বিষয় এখানে তুলে ধরা হলো:

    * আপনি যখন নতুন চাকরিতে জয়েন করতে যাচ্ছেন, পরিচিত কারো মাধ্যমে যিনি কিনা উক্ত কোম্পানী সম্বন্ধে জানেন, তার কাছ থেকে প্রতিষ্ঠান সম্মন্ধে ভালোভাবে জেনে নিন। যেমন টার্নওভার, কাজের পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়গুলো।

    * কোম্পানী পলিসি যতদূর সম্ভব ভালভাবে জানুন। ছুটি, ইনক্রিমেন্ট, পদোন্নতি, সাকসেশন প্ল্যান, ট্রেনিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট, যেগুলো থেকে আপনি কোম্পানীর ব্যাপারে ধারণা পাবেন ।

    * আ্যপয়েনমেন্ট লেটারের চুক্তি গুলো বুঝে নিন।

    * আপনার দৈনিক আর মাসিক কাজগুলোর রিপোর্টিং ম্যানেজার এর কাছ থেকে সাইন করিয়ে নিন। কেননা এতে কেউ আপনার বিরুদ্ধে ভুল তথ্য উপস্থাপন করতে পারবেনা। আপনি যা যা কাজ করেন সেটার প্রমাণ থাকবে। নতুন কোনো কাজ আপনার অ্যাকাউন্ট এ আসলে সেটা আপডেট করতে ভুলবেন না।

    * চেষ্টা করবেন প্রতিটা কাজ মেইল এ রিপোর্টিং বসকে দিয়ে দিতে। অন্য সহকর্মীদের সি সি তে রাখতে ভুলবেন না। এতে আপনি যে কাজগুলো করেন সেটা অন্যরা অবগত থাকলো।

    * পারসোনাল বিষয়গুলো কলিগদের সাথে শেয়ার না করাই ভালো। বন্ধুত্বপূর্ন পরিবেশ ভালো অবশ্যই তবে আপনাকে বুঝতে হবে সম্পর্কের সীমাবদ্ধতা।

    * অফিস গসিপে নিজেকে জড়াবেন না। সেটা কোম্পানী, ম্যানেজমেন্ট হোক কিংবা পারসোনাল ।

    * সবার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখুন। যদি আপনার কাছে কেউ জানায় আপনার ব্যাপারে অন্য কেউ নেগেটিভ কিছু বলেছে তবে সরাসরি উক্ত ব্যক্তির কাছে ভদ্রভাবে ঘটনার সত্যতা জানতে চান। এতে ভুল বোঝাবুঝি কম হবে। আর তৃতীয় ব্যাক্তিও এই ভুল বুঝাবুঝির সুযোগ নিতে পারবে না। এবং ভবিষ্যতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবেনা।

    * যেহেতু আপনার সাথে ম্যানেজমেন্ট এর একটা যোগাযোগ আছে কাজেই সুযোগমতো ম্যানেজমেন্টকে আপনি যে অফিসিয়াল কাজের ব্যাপারে সিরিয়াস আর অফিস এর বাইরে যে কাজ করেন সেটাতে যে আপনি অফিসের কাজের কোনো ক্ষতি না করেই করছেন ব্যাপারটা পরিষ্কার করে রাখবেন।

    * ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে স্টাফ পর্যন্ত সবার সাথে প্রফেশনাল সুন্দর একটা সম্পর্ক বজায় রাখুন।

    লেখক: এইচ আর প্রফেশনাল

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close