• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

প্রকাশ:  ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:২২ | আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ১৭:৫৭
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক
ফাইল ছবি

সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বঙ্গভবনের দরবার হলে সোমবার (৫ নভেম্বর) গণমাধ্যমের সম্পাদক ও সাংবাদিকদের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে এ আহ্বান জানান তিনি।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, সংসদে কী হচ্ছে সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার মাধ্যমেই তা জাতি জানতে পারছে। নতুবা সংসদে কী হচ্ছে তা কেউ জানতেই পারত না।

তিনি বলেন, আপনারা সমালোচনা পর্যালোচনা করবেন, এটাই আপনাদের কাজ। নেতিবাচক খবর পাঠক খায়। তথ্য সত্য হলে বস্তুনিষ্ঠ হলে সেটা হতেই পারে। তথ্য পুরো সত্য না হলে সেটা না হওয়াই উচিত।

তিনি আরও বলেন, পজেটিভ নিউজও করা যায়। তাতে হয়তো খাবে কম, তবে পাঠকের কাছে কাগজের বস্তুনিষ্ঠতা বাড়বে।

নৈশভোজে অংশ নেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক ও নিউজ টোয়েন্টিফোরের সিইও নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান, একাত্তর টিভির সিইও মোজাম্মেল হক বাবু, একুশে টিভির সিইও মনজুরুল আহসান বুলবুল, বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজের সম্পাদক খুজিস্তা নূর-ই–নাহারিন মুন্নি, ইউএনবির সিইও মাহফুজ আহমেদ, পার্লামেন্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উত্তম চক্রবর্তী প্রমুখ।

এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতির আগমনের বার্তা দেন তার প্রেস সচিব জয়নাল আবেদিন। রাষ্ট্রপতি আসার পর পুরো দরবার হল যেন প্রাণোচ্ছল হয়ে ওঠে। এসময় মহামান্য রাষ্ট্রপতি ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। আবদুল হামিদ তার সেই চিরায়ত স্বভাব কথার জাদুতে দরবার হলকে প্রাণবন্ত করে তোলেন।

সাংবাদিকদের কাছে পেয়ে নিজের আনন্দের কথা প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ‘এটা শুধু কথার কথা না, আপনারা এসেছেন, আপনাদের যে আনতে পেরেছি এটা শুধু বলার জন্য বলা নয়, আমি অত্যন্ত আনন্দিত।’

প্রটোকল ডিঙিয়েই রাষ্ট্রপতি জুনিয়র-সিনিয়র সব সাংবাদিকের কাছে গিয়ে হাত মেলান। এসময় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে চাইলে সবাইকেই হাসিমুখে সে সুযোগ দেন আবদুল হামিদ। এমনকি এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের দাঁড় করিয়ে রাষ্ট্রপতি তার ক্যামেরাপারসনকে একটি আলাদা ছবি তুলতেও বলেন।

বক্তৃতার সময় রাষ্ট্রপতি তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সারা পাকিস্তানে সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলাম। তখন আমার বয়স ছিল ২৫ বছরের চেয়ে একমাস ১৯ দিন কম। এমএলএ ছিলাম, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এমপি হয়েছি।’

‘এমপিরা গাড়ি নিয়ে সংসদে যায়। আমি প্রথমবার গেছিলাম রিকশা নিয়ে। আটকাইয়া দিছিলো। আমি বলেছিলাম, এমপি সাহেব যদি গাড়ির ড্রাইভার নিয়ে যেতে পারে তবে আমার রিকশার ড্রাইভার নিয়ে কেন যেতে পারবো না?’

রিকশা নিয়ে যেতে না দেওয়ায় সেই সময় সংসদের বিশেষ অধিকার কমিটিতে অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার নোটিশ দিয়েছিলেন আবদুল হামিদ। তিনি জানান, সেই নোটিশ তুলে নিতে তৎকালীন প্রধান হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন (বর্তমানে বিএনপি নেতা) অনুরোধ করলেও তা প্রত্যাহার করেননি কনিষ্ঠ এমপি আবদুল হামিদ।

পরে হুইপ রাফিয়া আক্তারের মাধ্যমে জানতে পারে বঙ্গবন্ধু তাকে ডেকেছেন। আবদুল হামিদের ভাষ্যে, ‘বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞেস করলেন, নোটিশ দিছি কি-না? কইলাম দিছি। উডাইতে বললেও কইছি তুলুম না। পরে পিডের মধ্যে দিছে একটা কিল। দিয়া কইছে, তুই তোল, আমি দেখতাছি।’

পরে তিনি ৫ হাজার টাকা নিলামে সেনাবাহিনীর পরিত্যক্ত একটি গাড়ি কেনেন বলে জানান আবদুল হামিদ।

সাংবাদিকদের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বরাবরই সাংবাদিকদের সঙ্গে আমার একটা সুসম্পর্ক ছিল। বিশেষ করে আমি যখন ডেপুটি স্পিকার ছিলাম এবং শেষে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করা পর্যন্ত আপনাদের সঙ্গে আমার খুবই আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। এখন রাষ্ট্রপতি হয়েছি, আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমি এখন প্রটোকলের কারণে খুব কষ্টে আছি, প্যারায় আছি। তবে আমি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও পার্লামেন্টে গেছি, কিন্তু সাংবাদিক লাউঞ্জে যাইনি এমন কোনো নজির নেই। সব রিপোর্টারের সঙ্গেই আমার সুসম্পর্ক ছিল। তবে আমি কোনো দিন কাউকে বলিনি, আমার পক্ষে লেখেন।’

ইতিবাচক খবরেও নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রের প্রধান বলেন, ‘আপনাদের যার যেটা ভালো মনে হয় লিখবেন। সমালোচনা-পর্যালোচনা করবেন, এটাই আপনাদের কাজ। নেতিবাচক খবর পাঠক নেয়। তথ্য সত্য হলে বস্তুনিষ্ঠ হলে সেটা হতেই পারে। তথ্য পুরো সত্য না হলে, সেটা (খবর) না হওয়াই উচিত। সংবাদ প্রকাশে একটু পজেটিভ নিউজও কিন্তু করা যায়, সেটা হয়তো কম খাবে, কিন্তু পাঠকের কাছে কাগজের বস্তুনিষ্ঠতা বাড়বে। অনেক সময় এমনও হতে পারে, আচ্ছা ও আমাদের সাথে একটু ঝামেলা করেছে, তাই একটু টুইস্ট করে দেই, এটা করা ঠিক না। এতে যার বিরুদ্ধে করলেন তার যতটা না ক্ষতি হবে, তার চেয়ে আপনারই বেশি ক্ষতি হবে। আপনার বিবেকে বাঁধবে, আপনি একটু অপরাধবোধে ভুগবেন।’

সাংবাদিকদের সংসদের একটি অংশ অভিহিত করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সাংবাদিকরা পার্লামেন্টের বিরাট একটা পার্ট। এখন তো অনেক টিভি হয়েছে, যখন শুধু পত্রিকা ছিল তখন পার্লামেন্টে কী হচ্ছে তা দেশের মানুষ জানতো না, যদি সাংবাদিকরা পার্লামেন্টে না যেতেন। সংসদের ভেতরে কী হচ্ছে সে সম্পর্কে জানার জন্য সাংবাদিকরা হচ্ছেন একটা বড় হাতিয়ার। সুতরাং আপনাদের কেউ মনে করতেই পারেন আপনারা সংসদের অংশ।’

যে যার অবস্থান থেকে দেশকে এগিয়ে নিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সঠিক তথ্য দিলে অনেক সময় সাংবাদিকদের ভাষায় বলা হয়- এটা দিলে বেশি খাবে না। কিন্তু যদি একটু কমও খায় তবে যদি তথ্যভিত্তিক সংবাদ দেন, এটার একটা আলাদা মূল্যায়ন আছে, এর একটা বিশ্বাসযোগ্যতা আছে।’

নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো বই আকারে প্রকাশ করার ইচ্ছে পুনর্ব্যক্ত করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘জীবনী লেখার ইচ্ছা আছে..কিন্তু লেখার অভ্যাসতো নাই, তবু একটা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু সুবিধা করতে পারছি না। তবে ইচ্ছা আছে, ওভাবে সুন্দর না হলেও কথাগুলোতো থাকবে।’

‘ভাটির শার্দুল’ আবদুল হামিদ গণমাধ্যমকর্মীদের বঙ্গভবনে আপ্যায়ন করেছেন তার হাওরের মাছ দিয়ে। জানা গেছে, নৈশভোজের খাদ্যতালিকা রাষ্ট্রপতি নিজেই তৈরি করেছেন। এই তালিকায় সাদা ভাতের সঙ্গে ছিল আইড় মাছ, গুলশা টেংরা, রূপচাঁদা মাছ। পাশাপাশি ছিল খাসির মাংস, সবজি ও মুগ ডাল। আপ্যায়নের শেষে ছিল মিষ্টি দধি ও রাজভোগ।

/এসএম

রাষ্ট্রপতি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close