• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

অনুভব আহমেদ এর একগুচ্ছ কবিতা

প্রকাশ:  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৮:৩৬ | আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৮:৪২
নিজস্ব প্রতিবেদক

❑ নৈঃশব্দের শুরু

সম্পর্কিত খবর

    তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে মার্বেলের মতো ছুঁড়ে দিয়েছি বেলা

    দেবদারুর গায়ে নেমে এলে কিন্নর বিকেল

    চিবুককে বলেছি ভয় পেওনা

    অতোটা নিঃসঙ্গতা তোমাকে ছোঁবেনা।

    ....আর তুমি

    আমাকে বাজেয়াপ্ত করে

    পিয়ালের বনে গাঢ় শুয়ে আছো অনভিপ্রেত ঘুমে

    আমার সমস্ত ভালোবাসা

    গলাকাটা মোরগের মতো কাতরাচ্ছে তোমারই সিথানে

    যেনো ব্যাকুল কোনো কবিতাদৃশ্য

    আলোড়ন তুলে নিভে যাবে নির্লিপ্ত, নীরব

    শব্দের কোঁচকানো ঢেউ, পাশেই ক্লান্ত টঙ্কার

    নিষ্প্রভ আয়ুরেখা থেকে উঠে আসা

    একটা সদাব্যস্ত দীর্ঘশ্বাসে জেনেছি এভাবে নিভে যাওয়াই নিষ্ঠা।

    ❑ শ্রান্তি

    এঁটো থালাবাটির পাশে পরে থাকে আকাশ

    মাছির মত ভনভন করা দিন

    ভাতের থালায় দুপুর মাখে বিস্বাদ

    সন্ধ্যার দানে নিলাম হয় তোমার চোখ

    আমার হেরে যাওয়া দান!

    বাড়ি ফেরার মুখে ঝুলে থাকে অবসাদ।

    রাতগুলো চুরি হয়ে যায়

    পাহাড়ের বুক থেকে

    কিন্নর কাঁদে ঝর্ণার পাথুরে চোখ

    জেগে থাকে সমুদ্র, অনন্তকাল।

    নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে

    আরও একবার ভুলে যায়

    ডাঙায় উঠা মাছের ছটফট থেকে যায় গভীরে।

    ফেলে যাওয়া চোখ কুড়ায় বুড়ো প্লাটফর্ম

    ভীড়ের স্বরে শ্মশান হওয়া শহর

    ক্রুর হাসির প্রতিটি ঘড়ি

    কারা তোমার কথা বলে?

    রক্তের ভেতর স্রোত চলতে থাকে পথ

    পুরনো শরীর খুড়ে

    শ্রান্ত আক্রোশ চিৎকার করে বিভৎস স্বর

    আমি জেগে থাকি ঘুমের ভেতর।

    ❑ অনাথ মগ্নতা

    তোমাকে ভালোবেসে এখানে দাঁড়িয়ে থাকি হতবুদ্ধি বইয়ের পাতার মতো অপেক্ষা করি আঙুলের

    এই বুঝি এলে কিছু ধুলো আলগোছে সরিয়ে

    অপেক্ষায়

    আমাকে আবৃত্তি করে অপ্রকৃতস্থ যৌবন মাথার ভেতর ভীষণ হৈ চৈ লিখে ফেলি শিহরিত রাত, আমাদের সন্তানেদের ঘুমন্ত মুখ

    তাপহীন বুকে শতশত আগ্নেয়গিরির উত্তাপ....

    অনন্ত ইথারে অনর্গল

    তোমাকে ঠিক তেমনই ভালোবাসি

    যেমন বেসেছি ঝরা জলপাই পাতার লাল

    শহুরে হাওয়ার বিজন অন্ধকার

    তোমাকে ঠিক তেমনই চাই

    দিয়ে দিই অনেক কথা, ব্যাগভর্তি স্বপ্নময় প্রতিশ্রুতি

    দাঁড়িয়ে থাকি হতবুদ্ধি

    আমাদের অনাথ মগ্ননায় আসে

    অংকের দুপুর, অসহায় কয়েকটা ভুল কবরের মতো ঢুকে

    থেকে যায় গোটা জীবন

    বোহেমিয়ান জীবন ভালোবেসে জোড়ভাঙা পাখি

    যেকোনো নদী

    ভেবেছি তোমার কোনো দুঃখ নেই!

    পৃথিবীর অসুখী কার্ডিগানটা যত্নে ভাঁজ করে রেখেছো বুকের যে তাকে

    অজান্তেই খুলে ফেলেছি সেই তাক

    জেনেছি অদূরে তোমারও এক কামরার রাত,দুঃখে পোয়াতি বুক।

    ❑ আরেক জন্ম

    একটা জীবন আমারও ছিলো, তোমাদের বুকের ভেতর কতো জন্মে গত।

    আমার বসন্তের শরীর, এক ঢোঁক অন্ধকারে নিভে জ্বলে জলে গ্যালো।

    একটা জন্ম আমারও ছিলো, তোমার বুকের ভেতর

    মাফলারে ফসিল হয়ে থাকা ওমে গ্রীষ্মকালীন খড়ার গল্পে

    বন্দর ছেড়ে গেলে জাহাজ, বহুকাল ঘড়ির কাঁটায় অনাহারি সময়ে।

    তোমার মৃত্যুর পর ভাঁজ করে রাখি আঙুল

    প্রেম

    মূলত

    প্রত্নতত্ত্বীয় হাহাকার

    জ্বলতে থাকা মোম এর নিঃশেষ হবার গান।

    ঠোঁটের ভেতর সমস্ত শহর নিয়ে সরব সন্ধ্যায়

    চোখের ভেতর ভীষণ এক মৃত্যুু,অপেক্ষায়

    বুকের ভেতর আরেক জন্ম।

    ❑ অতলান্তিক কোলাজ

    অনেক খুঁজেছি!

    কোথাও পাইনি!

    জলের বুকে আচড় কেটে ক্লান্ত

    এবার ফিরতে হবে

    ভাঙা কবিতার গুঞ্জন নিয়ে থেমে যায় সমস্ত নীরবতা

    কার্ণিশে বিস্মৃতির অতলান্ত কোলাজ!

    কাল অবধি যাকে চিনতাম আজ আর তাকে চিনতে না পারলে অবাক হইনা

    সেই নাম লিখে দিই ঝরা পাতার বুকে

    নিরুদ্দেশের কোল ঘেষে উড়িয়ে দিই কালো ডানার প্রজাপতি

    আমার ভেতর প্রতিটি আমিই একা!

    সিগন্যালে দাঁড়ানো সন্ধ্যার

    বিষাদ সংলাপে

    তোমাকে ভাবিনা আর

    অনন্ত ইথারে ছুঁড়ে দেই সিগারেটের

    বেওয়ারিশ ধোঁয়া;আঙুলের দীর্ঘশ্বাস!

    একদিন ঠিক ভুলে যাবো

    কে কাকে কী নামে ডাকতাম

    কার অগোছালো হাতে নেমেছে রাত!

    তোমার পড়ো বসত ঘিরে

    শব্দের মেটাফোরিক বিন্যাস

    যা শুনিনি আমি যা বলোনি তুমি

    বলবে এসো

    এসো

    দাঁড়াবে এখানে

    কবরের পাশে

    আলোর পাশে

    অন্ধকারের পাশে

    জীবনের পাশে

    শেষ বলে-বলে দিয়ে যাবে নতুন শুরু!

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close