• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ভারতে নতুন নাগরিকত্ব আইনে বাংলাদেশি হিন্দুরা বাদ?

প্রকাশ:  ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ১১:২৪ | আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ১১:৫১
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভারতের নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৬ চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর)। আর এ বিলে বিরোধীদের ক্ষোভ সামাল দিতে বাংলাদেশি হিন্দুদের বাদ দেওয়া হতে পারে। যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) বেশিরভাগ সদস্য পক্ষে থাকায় তারাও এমনই সুপারিশ করবে বলে অনুমান অসমিয়া গণমাধ্যমের। বিল পাশ হলে বাংলাদেশি হিন্দুরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন না।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও শিখদের নাগরিকত্ব দিতে ভারতের পার্লামেন্টে একটি বিল আনে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। বিলটি বর্তমানে রাজেন্দ্র আগরওয়ালের নেতৃত্বাধীন জেপিসির বিবেচনাধীন।

জেপিসির একজন সদস্যের উদ্ধৃতি দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের হিন্দুদের নাগরিকত্ব দিতে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। তবে বাংলাদেশি হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেয়া আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের জন্য একটি বড় ইস্যু।

তিনি বলেন, আমাদের আসলে দেখতে হবে ২০ নভেম্বরের বৈঠকে খসড়া বিলটিকে কীভাবে নেয়া হয়। বৈঠকের পরই খসড়াটি চূড়ান্ত করে পার্লামেন্টের আসছে শীতকালীন অধিবেশনে উপস্থাপন করা হবে।

ওই সদস্য অবশ্য এ-ও বলেন, বিলটি যদি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয় তাহলে একদিনও টিকবে না। কারণ ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব প্রদানের পথে এটি সংবিধানের লঙ্ঘন।

তবে বৈঠক থেকে যে সিদ্ধান্তই আসুক না কেন বিলের প্রস্তাবনা যে সংশোধিত হচ্ছে তা নিশ্চিত করেছেন ওই সদস্য।

টাইমএইট বলছে, বৈঠকের আগে সদস্যদের বক্তব্য লিখিতভাবে পেশ করতে আহ্বান জানিয়েছেন জেপিসির চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র আগ্রাওয়াল।

বিলটিকে ঘিরে আসামের রাজনীতি বেশ উত্তপ্ত। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পাশাপাশি চলছে উগ্রপন্থীদের হুংকার। এর মধ্যে পাঁচ বাঙালি হিন্দু খুনও হয়েছেন।

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে দিল্লিতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে আসামের ৭০টি সংগঠন। তাদের দাবি, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি পাস হলে অন্তত ১ কোটি ৯০ লাখ বাংলাদেশি হিন্দু আসামে চলে আসবে। এ কারণে অসমিয়ারা হারাবেন নিজেদের ভিটেমাটি। এ মাসের শেষে তারা ‘হিন্দু বাংলাদেশি’দের বিরুদ্ধে দিল্লিতে ‘সত্যাগ্রহ’ করবে বলে জানিয়েছে।

প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব বিলে প্রধানত বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘুরা ‘ধর্মীয় কারণে’ নির্যাতিত হয়ে যারা এদেশে কমপক্ষে সাত বছর ধরে আশ্রয় নিয়ে আছেন তাদের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

আগে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হলে অন্তত বারো বছর ভারতে সাধারণ বসবাসকারী হিসেবে থাকতে হতো। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সেই সময়কাল কমিয়ে এনে সাত বছর করা হয়েছে।

এর আগে কেন্দ্রীয় সরকার এক নির্দেশিকায় জানিয়েছিল, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এদেশে ঢোকা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পার্সি, জৈনরা নাগরিকত্ব পাবেন।

প্রস্তাবিত ওই আইন কার্যকর হলে ওই সমস্ত দেশে বসবাসকারী ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন ও পার্সি যারা এদেশে আশ্রয় নিয়েছে তারা সুবিধা পাবেন।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও শিখদের নাগরিকত্ব দিতে ভারতের পার্লামেন্টে একটি বিল আনে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার।

অহম ছাত্র সংস্থার (আটাসু) সভাপতি বসন্ত গগৈ গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আসামে বাংলাদেশিদের কোনো স্থান নেই।

আরেক ধাপ এগিয়ে কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির নেতা অখিল গগৈ বলেছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাসের চেষ্টা হলে আসামের বিজেপি সরকারকে ব্রহ্মপুত্রের পানিতে নিক্ষেপ করা হবে।

অখিলের অভিযোগ, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি পাস হলে অন্তত ১ কোটি ৯০ লাখ বাংলাদেশি হিন্দু আসামে চলে আসবে। এ কারণে অসমিয়ারা হারাবেন নিজেদের ভিটেমাটি।

অখিলের এই তথ্য মানতে নারাজ বিজেপির বিধায়ক শিলাদিত্য দেব। তিনি হিন্দুদের ভারতে আসাকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিরোধিতা করেছেন মুসলিম অনুপ্রবেশের।

বিজেপির বাইরের প্রায় প্রতিটি দলই নাগরিকত্বে জাতপাতের রাজনীতিকে গুরুত্ব না দেওয়ার পক্ষে। তারা ২৪ মার্চ ১৯৭৪-কে নাগরিকত্বের ভিত্তি বছর হিসেবে বহালের পক্ষে।

/আরিফ

ভারত,নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৬
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close