• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

আয় কমেছে পাঠাও-উবার রাইডারদের

প্রকাশ:  ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:৩৯ | আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:৫৪
আরিফুল ইসলাম সাব্বির

পথে চলতে চলতে নিজের গাড়ি বা বাইকে রাইড শেয়ার করে কিছু আয় হয়ে গেলো, আবার নিজের গন্তব্যেও পৌঁছানো গেলো। কাজের ফাঁকে রাইড শেয়ারের এমনই এক সুবিধা নিয়ে রাজধানী ঢাকার যানযটের দুর্ভোগ কমানো এবং কিছু আয় করার পথ খুলে দিয়েছে অ্যাপভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থা পাঠাও-উবার। নিজের কাজের পাশাপাশি পাঠাও-উবারে রাইড শেয়ার করে অনেকেই ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় করতে পারতেন রাইডাররা। কিন্তু গত কয়েকদিনে সেই আয়ে ছেদ পড়েছে কিছুটা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) হিসাব মতে, ২০০৫ সালে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ৭২ লাখ। আর বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে ঢাকার জনসংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ। অর্থাৎ গত এক যুগে রাজধানীতে মানুষ বেড়েছে ১৫০ শতাংশ। আর সে অনুপাতে গণ পরিবহন বেড়েছে মাত্র ২৬ শতাংশ। অবাক করার মতো হলেও, তারা জানিয়েছে ঢাকার ৭০ শতাংশ মানুষই পায়ে হেটে চলাচল করে।

তবে সিএনজি, অটোরিক্সা, ট্যাক্সিক্যাব থাকলেও সেসবে জিম্মি করে ভাড়া আদায়ের প্রচুর অভিযোগ থাকায় কম ভাড়ায় উন্নত সেবা ও জ্যাম থেকে মুক্তি পেতে মানুষ অ্যাপভিত্তিক এসব পরিবহন ব্যবস্থার দিকেই ঝুঁকছেন। শুরুতে এসব সেবাদানকারী পরিবহন চালকরা ভালো আয় করতে পারলেও বর্তমানে রাইড না পেয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হচ্ছে রাইডারদের। ফলে আয়ও কমে গিয়েছে অনেকটাই।

পাঠাওয়ের রাইড শেয়ারকারী চালক রিয়াজ উদ্দিন বললেন, প্রায় বছর খানেক হলো রাইড দিচ্ছি। শুরুতে দিনে ১০০০-২০০০ টাকা আয় হতো ৬-৭ ঘন্টা রাইড শেয়ার করেই। প্রচুর রাইড পাওয়া যেত। কিন্ত এখন সড়কে ৪-৫ ঘণ্টা বসে থাকলেও রাইড পাওয়া যায় না। আয় কমে গেছে।

আয় কমার কারণ হিসেবে রাইড শেয়ারকারীর সংখ্যা বাড়াকে দায়ি করে তিনি বলেন, শুরুতে ঢাকায় এতো বাইক ছিলো না। কিস্তিতে বাইক দেয়া এবং ঢাকার বাইরে যারা খ্যাপ (চুক্তিতে যাত্রী পরিবহন) দিতেন তারাও এখন ঢাকা এসে রাইড শেয়ার করছেন। সেবাটা এখন আর রাইড শেয়ারিং নেই। বাইরে থেকে আসা বেশিরভাগ চালকই এটা পূর্ণ সময়ের কাজ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ফলে যাত্রী অনুপাতে পরিবহন বাড়ায় রাইড কমেছে চালকদের।

কাওরান বাজারের সার্ক ফোয়ারার সামনে কয়েকজন রাইড শেয়ারকারীর সাথে কথা বলে জানা গেলো, এরমধ্যে দুজন ছাত্র, একজন বেসরকারি চাকরি করেন তার পাশাপাশি রাইড দেন। সেখানে বসে থাকা বাকিরা তাদের পূর্ণকালীন পেশা হিসেবে রাইড শেয়ারিংকেই নিয়েছেন। বিকেল থেকে সন্ধ্যা অব্দি প্রায় দিনই তারা এভাবেই বসে থাকেন বলে জানান তারা।

টাঙাইলের কালীহাতির কামাল উদ্দিন জানালেন, আগে গ্রামে বাইকে যাত্রী আনা নেওয়া করতেন তিনি। সেখানে কম যাত্রী পাওয়া যেতো। আয়ও কম ছিলো তাই ঢাকাতে রাইড দিচ্ছেন। এখানে শুরুতে আয় ভালো হলেও এখন তা কমেছে। রাইড ছাড়া কয়েকঘন্টা করে বসে অলস সময় পাড় করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে, পাঠাও-উবারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠায় অনেকেই অ্যাপ আনইনস্টল করে ফেলছেন বলে জানিয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সানজিদা আক্তার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে গণ পরিবহনের ঝক্কি এড়াতে পাঠাও-উবার ব্যবহার করতাম। কিছুদিন আগে শুনলাম তাদের সাইবার নিরাপত্তা খুবই দুর্বল। ফোনের সব মেসেজের এক্সেস নিচ্ছে তারা। পরে অ্যাপ আনইনস্টল করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, এছাড়াও চালকদের খারাপ ব্যবহার, প্রোমো কোড কাজ না করাসহ বিভীন্ন সমস্যা নানা সময়ে অভিযোগ করলেও সে বিষয়ে তারা কোন ব্যবস্থা নেয় না। ফলে একরকম বিরক্ত ছিলাম এই সেবার উপর।

আইইউবির ছাত্র শাহরিয়ার বলেন, পাঠাও রাইডে আগে একটা মান ছিলো। যাত্রী সেবা ছিলো, কিন্ত সময়ে সময়ে যাত্রী বাড়লেও সেবার মান কমে গেছে। আর রাজধানীতে সিটিং বাসের সেবাও মোটামুটি ভালো হওয়ায় এখন আবার অ্যাপ ছেড়ে বাসে চলাচল করছি।

তিনি বলেন, বাসগুলোতে সেবার মান যদি আরেকটু বাড়ানো যায়। তাহলে এসব অনিরাপদ অ্যাপ সেবার থেকে বাসেই বেশি চলাচল করবে মানুষ।

পাঠাওয়ের মার্কেটিং ম্যানেজার নাবিলা মাহবুব জানান, যানজট এড়িয়ে সহজে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য চালু করা হয় মোটরসাইকেলের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিং সেবা পাঠাও। তবে সব ফ্রিল্যান্সার রাইডার ও ক্যাপ্টেনদের আয়ের পরিমাণ নির্ভর করে তাদের রাইড শেয়ার সংখ্যার ওপর।

তিনি বলেন, শুরুতে রাইডার কম ছিলো, পরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় এখন রাইডার বেড়েছে। তবে যাত্রী সংখ্যা তেমনই থাকায় রাইডও ভাগ হয়ে গেছে। একারণে চালকরা রাইড কম পাচ্ছে। তবুও গড়ে রাইড কমেনি, তারা ভাল আয় করছে।

ডিএমপির রমনা জোনের পুলিশ কর্মকর্তা আহমেদ শরীফ বলেন, ঢাকাতে বর্তমানে ৯টি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ চালু আছে। এ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করে সেবা নেয়া যায়। কিন্ত এসবের জন্যে সড়ক পরিবহন আইনের যেসব নিয়ম আছে তার কোনকিছু এরা যাচাই করেনা। বেশিরভাগ চালক, যাত্রী হেলমেট ব্যবহার করে না। করলেও সেসব ক্যাপের মতো হেলমেট হয়ে যায়৷ আবার, সরাসরি কর্মচারী না হওয়ায় চালকরা দুর্ঘটনায় পড়লে তার দায় নেয় না অ্যাপ মালিকরা। এসব কারণে অ্যাপভিত্তিক সেবায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই হুমকি পূর্ণ।

দায় স্বীকার করে কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন এই সেবার মানোন্নয়নে কাজ করছেন তারা।

পাঠাও-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট কিশওয়ার আহমেদ হাশমি বলেন, আমরা ট্রেনিং দিয়েছি। তারপরেও তাদের পারফরম্যান্স আমরা চেক করি। অনেক সময় কাস্টমাররা হেলমেট পড়তে চান না। দুর্ঘটনা হলে এতে পাঠাওয়ের কোন দায়িত্ব নেই।

অভিযোগ আছে, অ্যাপে না গিয়ে বেশি ভাড়া দাবিরও। ধানমন্ডি থেকে মতিঝিল যেতে আয়াত আক্তার প্রায়ই উবারের প্রাইভেটকার ব্যবহার করেন। যার ভাড়া আসতো ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। কিন্তু রাস্তায় জ্যাম থাকা অবস্থায় মতিঝিল যাওয়ার উদ্দেশ্যে উবারে অ্যাপে কল দিলে ভাড়া দেখায় ৫৫০ টাকা। তারপর তিনি প্রক্রিয়াটি বাতিল করে আবার কল প্রক্রিয়া করলেন। পরে ভাড়া আসে ৫৮২ টাকা। এ সময় তিনি দেখলেন মোবাইলের মনিটরের ওপরে লেখা রয়েছে, ফেয়ার স্লাইটলি হায়ার ডিউ টু ইনক্রিজিং ডিমান্ড।

এ ব্যাপারে আয়াত প্রশ্ন করে বলেন, রাস্তায় জ্যাম বেশি থাকলে সিএনজিচালিত অটোরিকশাওয়ালারাও বেশি ভাড়া দাবি করে। আমার প্রশ্ন তাহলে সিএনজি আর উবারের মধ্যে পার্থক্য থাকলো কই?

বাড়তি ভাড়া বিষয়ে উবারের এক কর্মকর্তা বলেন, ভাড়ার নীতি ক্ষেত্রে উবার বিশ্বজুড়েই 'ডায়নামিক' বা গতিশীলতা অনুসরণ করে। এ কারণে ভাড়ায় তারতম্য দেখা যায়। ফলে পরিস্থিতি অনুযায়ী ভাড়ার হার পরিবর্তিত হতে পারে। গ্রাহকের গাড়ি প্রাপ্তির সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করতেই এমন করা হয়।

নিরাপত্তা বিষয়ে তিনি বলেন, যদি কেউ আরোহীকে হেলমেট না দেয় তাহলে তার বিরুদ্ধে অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ করার ব্যবস্থা আছে। অভিযোগ করলেই উবার কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।

/আইসা

পাঠাও,উবার
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close