দাবি না মানলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না: ঐক্যফ্রন্ট
দাবি না মানলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
শুক্রবার (৯ নভেম্বর) রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত সমাবেশে এ ঘোষণা দিয়েছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।
সম্পর্কিত খবর
শারীরিক অসুস্থতার কারণে জনসভায় যোগ দিতে পারেননি জোটের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। তবে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সমাবেশে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিয়েছেন তিনি।
ড. কামাল বলেন, আমরা সংলাপে গিয়ে নির্বাচনের তফসিল পেছানোর দাবি করেছিলাম, কিন্তু আমাদের কথা না শুনে তফসিল দিয়েছে। তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণার ফলে জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে না।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকের বিশাল জনসমাবেশ প্রমাণ করে দেশের মানুষ মুক্তি চায়। খালেদা জিয়াসহ যারা আটক আছে তাদের মুক্তি না দিলে কোন নির্বাচন হবে না হবে না।
তিনি বলেন, আমরা শেখ হাসিনার কাছে গিয়েছিলাম। কথা বলেছি। তারা কথা রাখেনি। প্রতিদিন গ্রেফতার হচ্ছে, মামলা হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের শপথ নিতে হবে, গণতন্ত্রকে মুক্ত করে দেশ নেত্রী খালেদাকে মুক্তি ও তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এই দলীয় সরকারের অধীনে কখনোই নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। যতদিন এই সরকার ক্ষমতায় থাকবে ততদিন নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে না। তবে এবার আমরা তাদের বিনা চ্যালেঞ্জে আর ক্ষমতায় যেতে দেব না। আমরা গণজেয়ার তৈরি করবো, সেই গণজোয়ারে নৌকা ভেসে যাবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার অধীনে নির্বাচন, শেখ হাসিনাকে রেখে নির্বাচন, সেই নির্বাচনে আপনারা ভোট দিতে পারবেন? শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলে তিনি আজীবন প্রধানমন্ত্রী আর খালেদা জিয়া আজীবন জেলখানায় থাকবেন। তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারবেন না। তাই বিএনপি চেয়ারপারসনকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে যাবো না।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, সংলাপে দাবি করেছিলাম, সংসদ বাতিল করেন, আপনি পদত্যাগ করেন। শুনলেন না। তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণা করে দিলেন। আমরা যাতে নির্বাচনে যেতে না পারি। দেশের ৯০ শতাংশ ভোটারকে বাদ দিয়ে সাত দফা না মেনে দেশে নির্বাচন হতে পারে না।
কৃষক শ্রমিক লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমি বিএনপির সভায় আসিনি। ড. কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে এসেছি। তাই আমি যদি ক্ষমতায় আসি, তাহলে বঙ্গবন্ধু ও জিয়ার বিভেদ ঘুঁচাবো। আমি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে রাজনীতিতে এসেছি। তবে বাংলাদেশের রাজনীতি মানেই খালেদা জিয়া। তাই তাকে বন্দি করে রাখা যাবে না।
কর্নেল অলি বলেন, নির্বাচন যাবো কি না সেটা বলতে পারবো না। তবে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে মাঠে থাকবো সেটা বলতে পারি।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নির্বাচন কমিশনকে বলছি, নির্বাচন পিছিয়ে দিন। এমন ফাঁদ পেতেছেন যেন আমরা নির্বাচন করতে না পারি। কিন্তু আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সব ফাঁদ ছিন্নভিন্ন করে ফেলবো। একতরফা নির্বাচন কোনোভাবে হতে দেবো না।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এ সরকারের ভীত কী। তাদের ভীত হলো পুলিশ, ঘুষ, অনাচার ও দুর্নীতি, গায়েবী মামলা, গ্রেফতার। আজকে বাস বন্ধ, যোগাযোগ বন্ধ, তারপরও আপনারা হেঁটে এসেছেন। এখানে যারা এসেছেন সবাইকে কি গ্রেফতার করা সম্ভব? এসময় সবাই বলেন, না সম্ভব না।
তিনি বলেন, তাহলে আপনারা মাঠে থাকেন। আপনাদের বিজয় নিশ্চিত। জনগণের বিপক্ষে গিয়ে কেউ কখনো বেশি দিন টিকে থাকতে পারেনি। বর্তমান ক্ষমতাসীনরাও পারবে না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী সমন্বয়ক মিজানুর রহমান মিনুর সভাপতিত্বে জনসভায় উপস্থিত আরও উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরীর এ্যানি, নির্বাহী সদস্য দেবাশীষ রায় মধু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ প্রমুখ।
এদিকে, দুপুরের পর থেকেই জনসভা স্থলে আসতে শুরু করেন ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে তার মাদ্রাসা ময়দানে যোগদান করেন। তবে বাস না থাকায় আশপাশের জেলা ও উপজেলা থেকে তাদের আসতে সমস্যা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
প্রসঙ্গত, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এটি চতুর্থ জনসভা।
/একে