• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

‘কিছু মিডিয়াকর্মী নাটকে নয়, শিল্প খোঁজে নারী দেহে’

প্রকাশ:  ০৭ নভেম্বর ২০১৮, ২১:৩১ | আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০১৮, ২২:০২
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

মেধাবী নাট্য নির্মাতা, লেখক, সমালোচক ও টিভি মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মোস্তফা মননের জন্মদিন ৮ নভেম্বর। তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ‘পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজ’-এর পক্ষ থেকে কথা বলেছেন হাসনাত কাদীর। সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে এই তরুণ চিন্তকের শিল্প ভাবনা, দেশের শিল্পাঙ্গনের সংকট ও সম্ভাবনা, তাঁর যাপিত জীবন এবং দর্শন।

পূর্বপশ্চিম: কেমন আছেন আর কী নিয়ে ব্যস্ত আছেন?

মোস্তফা মনন: শীতের শুরুতে মানুষের হালকা অসুখ হয়, আবার সেরেও যায়, আমাদের এই সময়েরও হালকা অসুখ চলছে। রাষ্ট্র কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ, কোথাও কোথাও অসুখের পরিমাণটা একটু বেশি। তারপরও সুখ আর অসুখে ভালোই আছি। রাষ্ট্র মেরামতের কাজ চলছে, সেখানে শ্রমিক হিসেবে কমর্রত আছি। কারণ, আমাদের সংস্কৃতি নির্মাণ এবং বিনির্মাণ আমাদেরকেই করতে হবে। এই নিয়েই ব্যস্থ আছি।

পূর্বপশ্চিম: আপনার নির্মিত একক নাটক ও টেলিফিল্মগুলো দর্শক মহলে আপনাকে জনপ্রিয় করেছে। মাছরাঙা টেলিভিশনে প্রচারিত ৫২ পর্বের ধারাবাহিক নাটক 'নারী' নির্মাণ করে আপনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। আপনি দীপ্ত টিভির জন্য 'পালকী' (৭৩৭ পর্ব) নির্মাণ শেষে এখন 'ভালোবাসার আলো আঁধার' নামে প্রতিদিনের ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করছেন। এই মূহুর্তে ‘মেগা সিরিয়াল’ বা প্রতিদিনের ধারাবাহিক নাটকের এক্সপার্ট নির্মাতা হিসেবে আপনাকে মনে করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে আপনার দৃষ্টিতে আমাদের মেগা সিরিয়াল ও নাটকের শক্তি ও দুর্বলতাগুলি কী?

মোস্তফা মনন: সত্যি বলতে দীপ্ত টিভির বাইরে মেগা সিরিয়াল করে কেউ খুব একটা সুবিধা করতে পারে নাই। তার কারণ হলো, যোগ্য ও দক্ষ লোকের অভাব। আমাদের দেশের দর্শক মেগা সিরিয়াল ঠিকই নিয়েছে এবং মেগা সিরিয়ালের বাজারও তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রযোজক এবং চ্যানেলগুলো ঠিকমতো দর্শকদের বুঝে উঠতে পারেনি। তারা টাকা আয় করতে চায়। তবে কীভাবে টাকা আয় করবে, সেই প্রক্রিয়ায়, পরিকল্পনায় সমস্যা রয়েছে। একটু সচেতন হলে, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করলে ঠিকই ব্যবসা করতে পারবে। সঠিক পরিকল্পনা আর গবেষণার ক্ষেত্রে তারা বেশ উদাসীন। এটাই সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। দুর্বলতা আরও রয়েছে। কারও কারও রুচি আর শিল্পবোধের অভাব। কিছু মিডিয়াকর্মী নাটকে শিল্প না দেখে, শিল্প খোঁজে নারী দেহে। ফলে শিক্ষিত, মেধাবীরা আত্মসম্মানের ভয়ে নাটকে আসতে চাইছে না। তাতে ক্ষতি কার? আমাদের নাটকের। ভেবে দেখেন, নাটকের ব্যবসায়ীরা যদি সঠিক পরিকল্পনা করতো আর নিজের লোভ সংবরণ করতো, বছরব্যাপী ভালো ব্যবসা কিন্তু তারাই করতে পারতো। সিরিয়ালে বাজার কিন্তু পুরোপুরি তৈরি আছে।

পূর্বপশ্চিম: আমাদের টেলিভিশন দর্শক প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে...।

মোস্তফা মনন: টেলিভিশনের দশর্ক কমার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। নাটকের বিষয়ে একটি সমীক্ষা দেই। ঢাকা চট্টগ্রাম মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ থেকে ১ কোটি ২২ লাখ (৬১ থেকে ৬৪ ভাগ) লোক টিভি দেখে। তারা গড়ে ২ ঘন্টা ৭৫ মিনিট সময় ব্যয় করে। তারমধ্যে দেশীয় টিভি চ্যানেল দেখে ৮১ থেকে ৮৭ লাখ দর্শক। গড়ে শতকরায় ১৫ থেকে ১৮ ভাগ লোক। অবশিষ্ট ৩৫ লাখ (১৮ ভাগ) লোক এক মিনিটের জন্যও দেশী টিভি চ্যানেল দেখে না। আবার এক স্টার জলসা যে পরিমাণ দর্শক দেখে আমাদের ৩০টি টিভি চ্যানেল সে পরিমাণ দর্শক দেখে। তাহলে কি দাঁড়ালো? এক স্টার জলসা সমান ত্রিশটি দেশীয় চ্যানেল। (সূত্র: kantar MRB TAM. week 18,date 28 april to 04 may 2018)

আমাদের সঠিক এবং সুনিদিষ্ট নীতিমালা নেই, সম্প্রচার কাঠোমো ঠিক নেই। বিজ্ঞাপন নীতিমালা নেই। কত ঘন্টার নাটকে কতক্ষণ বিজ্ঞাপন চলবে, তার কোন সীমা পরিসীমা নেই। দুর্বল গল্প আর নিম্নমানের নির্মাণ, অযৌক্তিক লম্ফঝম্ফ, দালালদের দৌরাত্ব, নাটকের বাজেট কমে যাওয়া- টেলিভিশন দর্শক কমে যাওয়ার পেছনে এসব অন্যতম কারণ। পরিত্রাণ তো পেতে হবে, সে জন্য নাটকের জাতীয় নীতিমালা নিয়ে আমি কাজ করছি। এক্ষেত্রে আমাদের নাটক নির্মাণের সঙ্গে জড়িত সংগঠনগুলো, যেমন- ডিরেকটরস গিল্ড, প্রডিউসার এসোসিয়েশন, অভিনয় শিল্পী সংঘ এবং টেলিভিশন নাট্যকার সংঘসহ আরও কয়েকটি সংগঠন এই ব্যপারে কাজ করছে। আমিও তাদের সাথে মিলে একটি নীতিমালা তৈরিতে কাজ করছি। সামনে এই বিষয়ে মুভমেন্ট হবে। তবে সরকারেরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আছে। আইনতো পাশ করতে হবে। টিভি নাটকের প্রতি তাদের মনযোগী হতে হবে। তাতে নাটক বেঁচে যাবে। দর্শক ভলো কিছু দেখতে পাবে আর ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারবে।

পূর্বপশ্চিম: এই ছোট একটি দেশে এতোগুলো টিভি চ্যানেল। এই সংখ্যাধিক্য কি টেলিভিশন মিডিয়ার জন্য ক্ষতির কারণ বলে মনে করেন?

মোস্তফা মনন: চ্যানেল বাড়লে বেশি লাভ নেই। এ দেশের ব্যবসায়ীরা চ্যানেল দিয়ে অনেকেই ব্যবসা করতে চায় না। এটা একটা সংকট। তবে তারা আবার তা মানতেও চায় না। চ্যানেল হতে হবে ক্যারেক্টার অনুযায়ী। সবচেয়ে দুর্বল দিক হলো, সব চ্যানেলে সব ধরনের অনুষ্ঠান দেখানোর একটা প্রবণতা রয়েছে। চ্যানেলগুলোকে আলাদা করতে হবে। যেমন মুভি চ্যানেল, খেলাধূলার চ্যানেল, নাটকের চ্যানেল, নিউজ চ্যানলে, আরও যা যা আছে। এই বিষয় সরকারের বলিষ্ঠ ভূমিকা থাকতে হবে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ টিভি চ্যানেল হলো ব্যবসায়ীর অন্য ব্যবসা এবং মর্যাদা টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার। অনেকটা আগের দিনের জমিদারদের লাঠিয়াল বাহিনীর মতো। যেহেতু লাঠিয়াল বাহিনী, তাই সেখানে বুদ্ধিবৃত্তিক লোক কাজ করতে পারবে না, এটাই বাস্তবতা।

পূর্বপশ্চিম: আপনি তো চলচিত্র নির্মাতা হতে চেয়েছেন। কিন্তু এখন সকাল থেকে রাত অবধি সময় দিচ্ছেন টেলিভিশনে। আপনার চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রস্তুতি কত দূর?

মোস্তফা মনন: চলচ্চিত্র নিমার্ণের ইচ্ছা আমার সুতীব্র। তিনটির মতো স্ক্রিপ্টও লিখেছি। গল্প আর নির্মাণ নিয়ে অনেক আগে কারও কারও সঙ্গে কথা বলেছি, হয়নি। আর আমিও এই নিয়ে গত পাঁচ বছর কারও কাছে যাইনি। মেগা সিরিয়াল নির্মাণ নিয়ে অনেক ব্যস্ত আছি। এখন আবার চলচ্চিত্র নির্মাণের ইচ্ছাটা যন্ত্রণা দিচ্ছে, দেখা যাক।

পূর্বপশ্চিম: প্রথম চলচ্চিত্রটি কী বিষয়ের উপর নির্মাণ করবেন?

মোস্তফা মনন: আমাদের এখানে একটা সংকট হলো মৌলিক গল্প নিয়ে কাজ করার ঝুঁকি। একটা গল্প লিখতে আমার এক-দেড় বছর সময় লেগে যায়, সে হিসেবে মূল্য পাওয়া যায় না। তাঁরাও (প্রযোজকেরা) মৌলিক গল্প নিয়ে ঝুঁকি নিতে চান না। তারা চায় দক্ষিণ ভারতের গল্প না হয় কোরিয়ান সিনেমার বাংলা ভার্সন। প্রথম চলচিত্রটি কী নিয়ে হবে, বুঝতেছি না। জামদানি নিয়ে যে স্ক্রিপ্ট করেছিলাম, সেটা বিক্রি করে দিয়েছি। আরও গল্প আছে, স্ক্রিপ্ট আছে। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫২'র ২১শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়কালের উপর একটি স্ক্রিপ্ট লিখেছি সাত বছর ধরে। দেখা যাক কোনটা কবে বানাতে পারি।

পূর্বপশ্চিম: একজন যথার্থ চলচ্চিত্র নির্মাতা হতে কী কী গুণাবলী আবশ্যক বলে মনে করেন?

মোস্তফা মনন: চলচ্চিত্র সম্পর্কে খুব ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। নির্মাতা হিসেবে সৎ এবং পরিশ্রমী হতে হবে। নির্মাণ বিষয়ে পারদর্শীতা থাকতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় প্রয়োজনীয় গল্প বলতে হবে। যে চলচ্চিত্রে চিন্তা থাকে না, চেতনা জাগ্রত হয় না, মানবিকতা অনুপস্থিত, তা নির্মাণ করে লাভ নেই। ওগুলো ভাগাড়ে জমা হয়। বড় বড় সবজি আড়তে সারারাত কাঁচামাল আনা নেওয়ার পর খুব ভোরে সিটি করপোরেশনের গাড়ি এসে আবর্জনা নিয়ে যায়। বাজে সিনেমাগুলো এমনই একটি আবর্জনা। সেগুলোর স্থান ঐ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িতেই। মানুষের অন্তরে নয়।

পূর্বপশ্চিম: এই যে শিল্প-সাহিত্যের পেছনে এতো মানুষের এতো ত্যাগ। আপনি জানেন যে, দেশের হতদরিদ্র যে কৃষক, হয়ত তাঁর মৌলিক চাহিদাও পূরণ হয় না। কিন্তু তাঁর প্রদত্ত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ট্যাক্সের টাকা ব্যয় করা হয় চলচ্চিত্র নির্মাণের অনুদান হিসেবে। জনগণের টাকায় নির্মিত এসব সিনেমা কি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জনগণের কোন কাজে আসতে পারছে বলে মনে করেন?

মোস্তফা মনন: এই প্রশ্নটা আপনার আগে কেউ করেছে কি না জানা নেই। আমি এই নিয়ে কয়েক জনের সাথে কথা বলেছি। রাষ্ট্রের কিছু দায়িত্ব থাকে। ভালো সিনেমা প্রযোজনা করা। সেই দায়িত্ব পালন করে সরকার। সমস্যাতো এইখানেই। বন্টনের নীতিমালা আছে। এখন এই নীতিমালা মেনেই অরাজকতা চলছে। আসলে এখানে ব্যক্তি সৎ হওয়াটা খুব জরুরি। সরকারের উচিত যোগ্য, সৎ এবং শিল্পবোধ সম্পন্ন ভালো মানুষেদের দায়িত্ব দেওয়া। ব্যক্তিরা নীতিবান আর প্রজ্ঞাবান না হলে, আইন কোন কাজে আসে না। যার ফলে আপনার মনে এই প্রশ্ন উঠেছে। এই অন্যায় বহু বছর ধরেই চলছে। তবে সরকারী অনুদানে কিন্তু বেশ ভালো ভালো সিনেমাও নির্মাণ হয়েছে।

পূর্বপশ্চিম: আপনি তো একজন লেখক এবং কবিও। আপনার ‘ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়’, ‘মেঘে ঢাকা চাঁদ’ এবং ‘মনে মনে’ উপন্যাস ৩টির পরে, ২০১৫’র ২১শে বই মেলায় প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘বেচে দিন’ পাঠক মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। আপনার এখনকার লেখালেখি সম্পর্কে পাঠকেরা জানতে আগ্রহী।

মোস্তফা মনন: লেখালেখি খুব শক্ত কাজ এবং স্বেচ্ছাশ্রমের কাজ। এর বিনিময়ে কোন অর্থ আসে না। লেখালেখি করে কেউ জীবন যাপন করতে পারে না। বরং আদর্শ নিয়ে লেখালেখি করলে অর্থের অভাবে থাকতে হয়, হুমকির মধ্যে থাকতে হয়। আর প্রাণনাশের বিষয়তো আছেই। ভালোবাসা ও রাজনীতিমূলক কবিতা লিখেছিলাম, সেই কবিতা নিয়ে আমার বন্ধু কবি ফিরোজ বই করেছে। এবছর একুশের বই মেলায় একটি উপন্যাস আসবে। পান্ডুলিপি তৈরি করেছি। এটাও ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে। বুঝতেছি না, এই ঐতিহাসিক উপন্যাস করে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনছি কি না। সে সময়ের রাজনীতিবীদদের অনেকে কেমন আচরণ করেছে, তার খানিকটা স্পষ্ট করেই আছে। ভাষা আন্দোলনের কিছু অনুচ্চারিত এবং প্রায় ঢাকা পরা ইতিহাস তুলে এনেছি। যা খুবই মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ। কোন ঘটনায় কারা পক্ষে ছিল আর কারা বিপক্ষে ছিল, তা দেখা যাবে। এখানে ইতিহাসের দায় থেকে কারো মুক্তি নেই। ভাষা আন্দোলনের প্রচলিত ইতিহাসে অনেককেই এতো গুরুপূর্ণ করে দেখানো হচ্ছে, বাস্তবে যা অনেকটাই মিথ্যা। সে সব বিষয় নিয়েও কাজ করেছি।

পূর্বপশ্চিম: ভালো সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্মোহ সমালোচনাকে কতটা প্রয়োজনীয় মনে করেন? আমাদের এখানে যথার্থ চলচ্চিত্র সমালোচনার প্র্যাক্টিস এখনো শুরু হচ্ছে না কেন? আপনি নিজে একজন নির্মোহ চলচ্চিত্র সমালোচক। কিন্তু আপনাকে নিয়মিত কেন চলচ্চিত্র সমালোচনায় পাচ্ছি না?

মোস্তফা মনন: সত্যি বলতে সমালোচনার কথা মাথায় রেখে নিমার্তারা ছবি নির্মাণ করেন না। তারা চেষ্টা করে একটি গল্প বলতে। সেই গল্প কতটুকু সার্থকতা পেলো তা নির্ণয় করে শিক্ষিত সমালোচক। আপনি যাকে বলছেন নির্মোহ। তবে সমালোচনা যত শক্তিশালী হবে, সে সময়ে চলচ্চিত্রকারেরাও ততো শক্তিশালী হবে। কারণ, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা চালু হলে আদর্শগত দিক থেকে চিন্তার বিনিময় হয়। সমালোচনা একটা শিল্প।

তবে বাংলা সিনেমায় সমালোচনা যা হয়, তা অনেকটা তুষ্টিগীতের মতো। প্রচারণার অংশ। যা চলচ্চিত্রের সঠিক মূল্যায়ন না। চলচ্চিত্র বিষয়ে অগাধ পান্ডিত্য না থাকলে সমালোচনা করাও ঠিক না। সিনেমার গল্প, কারিগরি দিক আর চেতনা বা আদর্শীক দিকে নিয়ে প্রয়োজনীয় কথা বললেই শত্রু তৈরি হয়। দূর্বল পরিচালকরা সমালোচনাকে নিন্দা হিসেবে দেখেন। আমি কিছু সিনেমার সমালোচনা করেছিলাম। আমাকে খুব খারাপ ভাষায় গালাগালি করে, আর হুমকি দেয়। আমি যে বিষয়ে লিখেছি, তা নিয়ে কোন কথা বলে না। কেনো লিখলাম সেই কৈফিয়ত চায়! এটা একটা সমস্যা। তাই নিজের সময় ব্যয় করে সমালোচনা করতে ইচ্ছা করে না।

পূর্বপশ্চিম: চলচ্চিত্র, নাটক, সাহিত্যের বাইরে আপনার প্রেম আছে কীসে? আপনার জীবনে প্রেমের প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাই।

মোস্তফা মনন: এসবের বাইরে আমার প্রেম আসে বই পড়ায়। ভালো বন্ধুর সঙ্গ আমাকে খুব বেশি টানে। নদী কাছে টানে। মানুষের মুখ দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। মাঝে মাঝে স্বাস্থ্যকর প্রেম আসা ভালো। মস্তিষ্ক সচল থাকে। চিন্তা গতিশীল করে।

পূর্বপশ্চিম: মেঘে মেঘে অনেক বেলা তো হলো। জীবনের দীর্ঘ এই পথ চলতে চলতে কী উপলব্ধি হয়? জীবন আসলে কী?

মোস্তফা মনন: সব বেলা মেঘে মেঘে যায় না, সুর্যের প্রখরাতায়ও দিন কাটে। আমার কাছে জীবন হলো সিদ্ধান্তের সমষ্টি। প্রতিটি সিদ্ধান্তই আপনাকে আর আপনার পথ তৈরি করবে। ধরেন, আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন এই পত্রিকায় কাজ করবেন। পরে আবার সিদ্ধান্ত নিলেন চলচ্চিত্র বানাবেন, পরে আবার সিদ্ধান্ত নিলেন টেলিভিশনে কাজ করবেন। পরে আবার সিদ্ধান্ত নিলেন গ্রামে গিয়ে কৃষিকাজ করবেন। এই ভাবে কিন্তু গোটা জীবন কেটে যাবে। এই যে প্রতিটি বাঁকে একটি করে সিদ্ধান্ত নিলেন-এটাই জীবন। আসল কথা হলো, আপনার নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো কিন্তু আপনার জীবন যাপনের ধরণ প্রকাশ করে।

পূর্বপশ্চিম: জন্মদিন কীভাবে কাটাবেন?

মোস্তফা মনন: প্রতি বছরই আমার সহকর্মীরা ছোট একটি কেক কাটে। এবারও কাটবে মনে হয়। তাঁরা ছবি তুলবে, ফেসবুকে দিবে। অনেকে শুভেচ্ছা জানাবে। আমিও ধন্যবাদ দিবো। পরের দিন থেকে আবার মেগা সিরিয়াল নির্মাণে জড়িয়ে যাবো। তবে আমি একটি কাজ করেই ছাড়বো। কোরিয়া, তুরস্কের মতো বাংলাদেশের টিভি নাটককে আন্তর্জাতিক ভাবে নিয়ে যাওয়া এবং জাতীয় টিভি নাটক নীতিমালা করা। নাটকের এতো বড় বাজার নয়শত অভিনয় শিল্পী, ছয়শত পরিচালক, দেড়শতের বেশি নাট্যকার এবং দুইশতের বেশি প্রযোজকের দেশ তো বিশৃংখল ভাবে চলতে পারে না। বাণিজ্যিক ও নান্দনিক মেরামত হতেই হবে।

পূর্বপশ্চিম: আপনাকে পূর্বপশ্চিমের পক্ষ থেকে আবারও জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ।

মোস্তফা মনন: পূর্বপশ্চিম এবং আপনাকেও শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা। এই ধরনের প্রশ্ন করার সাহস লাগে, প্রজ্ঞা লাগে।

/ই.কা

মোস্তফা মনন,সাক্ষাৎকার
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close