• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

‘জগাখিচুরি ঐক্য টিকবে না, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দুষ্টের দমনে’

প্রকাশ:  ০৮ অক্টোবর ২০১৮, ২০:৩৫ | আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০১৮, ২১:০৪
নিজস্ব প্রতিবেদক

যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির গড়া জগাখিচুরি ঐক্য টিকবে না এবং দুষ্টের দমনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সোমবার (০৮ অক্টোবর) রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটি কর্তৃক আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের শাসনামল: শিল্প-বানিজ্য ক্ষেত্র’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রারম্ভিক আলোচক ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্ঠা এইচ টি ইমাম। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসসি) সাবেক পরিচালক ও পূর্বপশ্চিমবিডি নিউজ এর সম্পাদক খুজিস্তা নূর-ই–নাহারিন মুন্নি’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

সেতুমন্ত্রী বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে যারা আলোচক ছিলেন তারা বঙ্গবন্ধুর শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রে উন্নয়ন নিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলেছেন। আমি বর্তমান সময়ের কিছু কথা বলতে চাই। সামনেই নির্বাচন তাই এখন সকলের কাছে আমাদের সরকারের উন্নয়নের কথা পৌঁছে দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা কিন্তু ভুলত্রুটির বাইরে নই, আমাদেরও ভুলত্রুটি আছে কিন্তু শেখ হাসিনা এমন এক রাষ্ট্রনায়ক যার ভুলত্রুটি সংশোধন করার সৎ সাহস আছে। আমরা অনেক ভুল সংশোধন করেছি। ভুলকে স্বীকার করা ও সংশোধন করা এটা নৈতিকতার একটা বড় ভিত্তি। সেই গুণ আমাদের নেত্রীর মাঝে আছে এবং তিনি সেটা করেন।

বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ঘোষণার প্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি এর কথা আগেও বলেছি, এখনও বলছি; পানি আর তেলে মেশে না। এই জগাখিচুড়ি ঐক্যের কোনো ভবিষ্যত নেই। ১০ বছরে যারা ১০ মিনিটও রাস্তায় দাঁড়াতে পারে না, এখন এক মাসে কী কান্দে (কাঁধে) উঠবে? এটা হাস্যকর।

তিনি বলেন, কাকে নিয়ে আন্দোলন করবেন? জনগণকে নিয়ে, জনগণ কেন আসবে? জনগণ আসার মতো কোনও অবজেক্টিভ কন্ডিশন বাংলাদেশের নেই। রোজার ঈদ চলে গেল...রোজার ঈদ তারপর কোরবানি ঈদ, এখন তো আর ঈদ নেই। আরেক ঈদ আসবে ২০২১ সালে, তখন আন্দোলনের চিন্তা ভাবনা করতে পারেন। তার আগে আর আন্দোলনের কোনও ভবিষ্যত নেই। মরা গাঙ্গে জোয়ার আসে না। ১০ বছরে পারেন নাই, আর এক মাসে আন্দোলন।

ডিজিটাল আইন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলে, এই আইনটা কেন করা হয়েছে? মনে আছে, গুজব সন্ত্রাস; লাইভ পোস্টিং- এক মহিলা কালো কাপড়ে ঢাকা, সে আওয়ামী লীগ পার্টি অফিসে আছে, তাকে রেপ করা হচ্ছে! আমাকে বাঁচাও, আমাকে রক্ষা করো! তো কী করতে হবে? পরে তো ধরা পড়েছে! আর এক নায়িকাকে দিয়ে এসব নাটক সাজিয়েছে তারা (বিএনপি)।

গুজব সন্ত্রাস এখন আন্দোলন এর চেয়েও ভয়াবহ জানিয়ে তিনি বলেন, এই কাজটি বিএনপি করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালানোর পর এই পোস্টগুলো তারা করে যাচ্ছে। দেশে একটি সরকার আছে। তারপরেও কী সব এভাবেই চলতে থাকবে? যারা ক্রাইম করছে না, তাদের কোনও ভয় নেই। প্রাইম মিনিস্টার পরিষ্কারভাবে বলেছেন। তাই বলে কি দুষ্ট কে দমন করবো না? ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, দুষ্টকে দমন করার জন্য, শিষ্টকে পালন করার জন্য।

এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ডিজিটাল ক্রাইম এর বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি কী থাকবে না? অরাজকতা আর এক দলীয় শাসন এটাও অপপ্রচার। শালীনতা বলতে এ দলের কিছু নেই। একজন তো নয়া পল্টনের অফিসে বসে আমাদের প্রাইম মিনিস্টার থেকে শুরু করে সকল নেতার বিরুদ্ধে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলে। এই যে আমাদের এইচ টি ইমাম সাহেব, প্রবীণ মানুষ তার বিরুদ্ধে অশ্রাব্য অশালীন ভাষায় কথা বলে। তারপরেও তো আমরা তাকে গ্রেফতার করিনি! মিথ্যাচার এবং অপপ্রচারই বিএনপির একমাত্র ক্যাপিটাল।

সদ্য প্রণীত সড়ক পরিবহন আইনের বিরুদ্ধে চলমান পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিন বছর আমরা সময় নিয়েছি, স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আইনটি আমরা পাস করেছি। এখন আবার ধর্মঘট! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তারা বসছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমি বলেছি এটা সদ্য প্রণীত একটি আইন; যদি বিধি প্রণয়ন করা যায়, বিধি প্রণয়ন করে তাদের জন্য কোনও সুযোগ সৃষ্টি করা যায়; তাহলে আমরা করবো।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা তো শ্রমিক বান্ধব সরকার। আমরা তো সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মারার সরকার না। তাদের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো আমরা সময়মতো দেখব। তবে তাদের ধর্মঘটটা এখন প্রত্যাহার করতে হবে। ধর্মঘট প্রত্যাহার করুক, তারপর আইনে তাদের জন্য কোনো বিধিবিধান করা যায় কী-না দেখবো। আইনমন্ত্রী আছে তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে দেখবো।

আলোচনা সভায় ড. আতিউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু সরকার সে সময়ে অনেক বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনী ইশতেহার অনুয়ায়ী ব্যাংক, বীমাসহ ৪০০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় অসংখ্য কলকারখানা, শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। তাদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থপনার দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করবে বলে ১৯৭২ সালে আইন প্রণয়ন করা হয়।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, খাদ্য, স্বাস্থ্য, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ঘটান। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে প্রণীত বাংলাদেশের প্রথম বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় কৃষি, গ্রামীণ অবকাঠামো ও কুটির শিল্প উন্নয়নে প্রাগ্রাধিকারমূলক সরকারি অর্থ বরাদ্দের নির্দেশ দেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটি কর্তৃক আয়োজিত আজকের আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সফল সকল ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

/অ-ভি/এসএফ

সেতুমন্ত্রী,ওবায়দুল কাদের,খুজিস্তা নূর-ই–নাহারিন (মুন্নি)
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close