স্বর্ণ নীতিমালার বাস্তবায়ন চায় টিআইবি
‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ মন্ত্রিসভায় অনুমোদনে টিআইবি’র সন্তোষ ও প্রত্যাশা পূরণে কঠোর বাস্তবায়ন চায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) । বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বহুল প্রতিক্ষীত ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ এর খসড়া মন্ত্রিসভা কর্তৃক অনুমোদনে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। একই সাথে টিআইবি প্রণীত খসড়া গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে এ নীতিমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে সংস্থাটি।
নীতিমালাটির ফলে দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণখাতে বিদ্যমান সুশাসনের ব্যাপক ঘাটতি উত্তরণ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার অভূতপূর্ব সুযোগ সৃস্টি হয়েছে বলে মনে করছে টিআইবি। তবে এ প্রত্যাশা পূরণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ী মহলসহ সকল অংশীজন কর্তৃক নীতিমালার কঠোর বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। এজন্য প্রয়োজন সকল পর্যায়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি প্রশাসনিক ও ব্যবসায় খাতে কঠোর শুদ্ধাচারের চর্চা। নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে টিআইবি স্বর্ণখাতের জন্য নীতিমালাটির আলোকে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে।
সম্পর্কিত খবর
আজ এক বিবৃতিতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “মন্ত্রিসভা কর্তৃক বহুল প্রতিক্ষীত ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ এর খসড়া অনুমোদন এ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় অবশ্যই একটি সন্তোষজনক পদক্ষেপ। এখন এই নীতিমালার আলোকে দেশের স্বর্ণ খাতের সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। নীতিমালার অভাবে দেশের স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকারের মান এবং স্বর্ণবাজারের ওপর স্বর্ণব্যবসায়ীদের যে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নীতিমালাটি প্রণয়নের ফলে তা লাঘব হওয়াসহ অবৈধ স্ব^র্ণ ও স্বর্ণালংকারের আমদানি বন্ধ করা সম্ভব হবে। এছাড়া, স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকারের মানযাচাই, ক্রেতা ও বিক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষণ এবং স্বর্ণশিল্পী বা শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতকরণে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থার যে ঘাটতি ছিল সেটাও নিরসন করা সহজ হবে।”
নীতিমালাটি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় টিআইবি’র সুপারিশসমূহ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ড. জামান বলেন, “নীতিমালার অভাবে অনিয়মগুলোই কার্যত অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছিল যা ছিল স্বর্ণ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। স্বর্ণ নীতিমালার কঠোর এবং সতর্ক বাস্তবায়ন এই অবস্থার অবসান ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পাশাপাশি নীতিমালা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এতদিনের সুবিধাভোগী কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে এবং নীতিমালা থেকে বিচ্যূতির যে কোনো সম্ভাবনা শুরুতেই প্রতিরোধ করতে হবে। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ী মহলসহ সকল অংশীজন কর্তৃক নীতিমালার কঠোর বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। এজন্য প্রয়োজন সকল পর্যায়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি প্রশাসনিক ও ব্যবসায় খাতে কঠোর শুদ্ধাচারের চর্চা। একই সাথে নীতিমালাটির যথাযথ বাস্তবায়নে স্বর্ণখাতের জন্য এই নীতিমালার আলোকে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করতে হবে।”
উল্লেখ্য, ৯ জুন ২০১৭ স্বর্ণ ব্যবসায় জালিয়াতি ও চোরাকারবারি বিষয়ে টিআইবি কর্তৃক প্রকাশিত এক সংবাদ বিবৃতিতে স্বর্ণখাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার দাবি জানানোর পর অর্থ মন্ত্রণালয় স্বর্ণ নীতিমালার খসড়া তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদানের জন্য টিআইবিকে অনুরোধ জানায়। এরই প্রেক্ষিতে গত বছরের নভেম্বর মাসে টিআইবি কর্তৃক ‘বাংলাদেশের স্বর্ণখাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে টিআইবি স্বর্ণখাতের নীতিমালার খসড়া তৈরির জন্য বেশকিছু সুপারিশ অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রদান করে। পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক টিআইবি’র সুপারিশসমূহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিআইবি, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি (এফবিসিসিআই), স্বর্ণব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে এবং এই কমিটি খসড়া স্বর্ণ নীতিমালা তৈরি করে। চলতি বছরের মে মাসে মন্ত্রিসভার অর্থনীতি বিষয়ক কমিটি খসড়াটি অনুমোদন করে মন্ত্রিসভায় প্রেরণ করে।
ওএফ