• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

মোস্তাফা জব্বারের উদ্দেশে ফারুকীর খোলাচিঠি

প্রকাশ:  ০৪ আগস্ট ২০১৮, ১৫:১৯ | আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০১৮, ১৫:৪০
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান ছাত্র আন্দোলনে ব্যবহৃত পোস্টারে অশালীন ভাষা ব্যবহার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে কুরুচিপূর্ণ পোস্টারে কুব্ধ প্রতিক্রিয়অ জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও। শুক্রবার মন্ত্রী নিজের ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে নিজেকে লজ্জিত উল্লেখ করে বলেন, ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে।

এ নিয়ে শনিবার (৪ আগস্ট) তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীর উদ্দেশে খোলাচিঠি লিখেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী। পূর্বপশ্চিমের পাঠকদের জন্য লেখকের ফেসবুকে দেওয়া খোলাচিঠিটি তুলে ধরা হলো-

প্রিয় মোস্তফা জব্বার ভাই,

কিশোর বিদ্রোহের এই অনন্যসাধারণ ব্যাপারটাকে ভিলিফাই করার চেষ্টা করবেন না, প্লিজ। মনে রাখবেন, এরা আপনাদের শত্রু না। এরাই আপনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রধান সৈনিক হবে। মিরপুরে লাঠি হাতে যারা দাপিয়ে বেড়িয়েছে তাদেরকে দিয়া জয় ভাইয়েরও কাজ হবে না, ববি ভাইয়েরও না। লাগবে এই সব সোনার ছেলেমেয়েদেরই। আরো মনে রাখবেন, দুই হাজার আটে সাধারণভাবে তরুনরা আপনাদের পক্ষে ছিলো বলেই আপনাদের পক্ষে জোয়ার আসছিলো। ভাবেন এই ছেলে মেয়েরা পাঁচ-দশ বছর পর কোথায় যাবে। তখন এরা কত জরুরী হবে আপনাদের কাছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবী আমরা মেনে নিচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রেদওয়ান মুজিব তাদের সম্মানে হেঁটে অফিসে গেলেন। ডিএমপির মনির ভাই বললেন শিক্ষার্থীরা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে।

এখন হঠাৎ করে বিচ্ছিন্ন দুয়েকটা ঘটনা, শ্লোগান আর ভাষা নিয়া অহেতুক আপনার ভবিষ্যত প্রজন্মকে ছোট করার ব্যর্থচেষ্টা করবেন না। এতে আপনি, আমি, আমরা, আমাদের ভবিষ্যত সবাই ছোট হচ্ছি। গালি বা স্ট্রিট ল্যাংগুয়েজের নন্দন তত্ব, সামাজিক ব্যাখ্যা এইসবে না গিয়ে আপনাকে খেয়াল করিয়ে দিতে চাই এইসব দুয়েকটা ঘটনা এই আন্দোলনের আসল চিত্র ছিলো না। এতো হাজার হাজার ছেলেমেয়ে রাস্তায় এসেছে তাদের মধ্যে কত রকমের মানুষ থাকতে পারে। নব্বইয়ে ছিলো না এই রকম অতি সামান্য বিচ্ছিন্ন উপাদান?

আমি বরং সেইসব নিয়ে কথা না বলে খেয়াল করাতে চাই এই আন্দোলন কত রাজনৈতিকভাবে সচেতন শ্লোগান ব্যবহার করেছে । খেয়াল করিয়ে দিতে চাই, পুলিশ-ছাত্র গলাগলি করে কিভাবে দাঁড়িয়েছিলো ফার্মগেটে, কি সুমধুর সুরে এরা জাতীয় সংগীত গেয়েছে, কি সুন্দর ভাবে লাইসেন্স চেক করে থ্যাংক ইউ বলেছে, কোথাও কোথাও চকলেট দিয়েছে। খেয়াল করাতে চাই এদের বক্তব্যে এবং কন্ঠে কতবার বঙ্গবন্ধুর কথা উঠে এসেছে রেফারেন্স হিসাবে। নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুকে এইভাবে দেখেও কি আপনি আশাবাদী হন নাই? আমি তো ভীষণ হয়েছি।

এখন ওদেরকে হাসিমুখে ঘরে ফিরতে দেন আর যে কাজ করার ওয়াদা করেছেন সেগুলোতে হাত দেন। তারপর আমরা সবাই মিলে একসাথে এগিয়ে যাই সামনের দিকে।

এবার নীচে এই আন্দোলনের কিছু জনপ্রিয় শ্লোগানের লিস্ট দিয়ে দিলাম যদি আপনি মিস করে থাকেন এই ভয়ে।

১: হয়নি বলেই আর হবে না, আমরা বলি বাদ দে। লক্ষ তরুণ চেঁচিয়ে বলে পাপ সরাবো হাত দে।

২: যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ , যদি তুমি রুখে দাড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ।

৩: জনপ্রতিনিধিদের সপ্তাহে অন্তত তিন দিন গণপরিবহনে যাতায়াত করতে দিতে হবে।

৪: পারলে মাথায় গুলি কর, তাহলে মেধা মারা যাবে, কিন্তু বুকে গুলি করিস না, এখানে বঙ্গবন্ধু ঘুমায়, বন্ধু জেগে গেলে সব ধবংস হয়ে যাবে।

৫: আমরা ৯ টাকায় ১ জিবি চাই না "নিরাপদ সড়ক চাই"।

৬: চার কোটি শুক্রাণুর সাথে লড়াই করে জন্মেছি, চাকার তলায় পিষার জন্য নয়।

৭: পথ খুলবে বলেই রাস্তা আটকাই।

৮: শিক্ষকের বেতের বাড়ি নিষেধ যেই দেশে, পুলিশের হাতে লাঠি কেন সেই দেশে।

৯: আর নবারুন ভট্টাচার্যর কবিতাটা যেটার লাইন আমার হুবহু মনে পড়ছে না।

১০: টনক তুমি নড়বে কবে?

১১: ন্যায্য দাবীর মিছিলে যে চোখ

সে চোখ জেগেছে জয়ে

মিছিল কখনো থামেনা বুলেটে

শ্লোগান থামেনা ভয়ে।

আমার তো মনে হয়না ওদের বয়সে আমি এই রকম গুছিয়ে বলতে পারতাম। মনে পড়ে মহল্লার সরু রাস্তা ছেড়ে বড় রাস্তায় উঠলে জড়তায় সংকুচিত হয়ে থাকতাম। সেখানে মহাসড়কে নেমে এতো গুছিয়ে একটা আন্দোলন তো অনেক দূরের কথা। আপনি কি পারতেন, প্রিয় জব্বার ভাই?

আপনাকে ধন্যবাদ।

মোস্তাফা জব্বার,মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী,খোলাচিঠি
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close