টিএসসির সেই ছবি নিয়ে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন
অনলাইন নিউজপোর্টাল পূর্বপশ্চিমবিডি নিউজের ফটোগ্রাফার জীবন আহমেদের সেই বৃষ্টিস্নাত চুম্বনের ছবিটি নিয়ে বিবিসি বাংলায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেই প্রতিবেদনটি হুবহু নিচে তুলে ধরা হল:
ঢাকায় গত কয়েকদিনের অতিষ্ঠ গরমের পর গতকাল নেমে আসে স্বস্তির বৃষ্টি। বৃষ্টিতে প্রকৃতি শীতল হয়ে এলেও সেই বৃষ্টিতে তোলা একটি ছবি নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক।
সম্পর্কিত খবর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র টিএসসিতে এক যুগলের চুম্বন দৃশ্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে। সমালোচনাও কম হয়নি।
আর এই আলোচনা- সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন ফটো সাংবাদিক জীবন আহমেদ।
গতকাল দুপুরে বৃষ্টিভেজা ক্যাম্পাসে ওই তরুণ তরুণীর এমন একান্ত মুহূর্ত ক্যামেরায় ধারণ করেন তিনি।
পরে তিনি ছবিটি 'বর্ষা মঙ্গল কাব্য, ভালোবাসা হোক উন্মুক্ত' ক্যাপশনে নিজের ফেসবুক পেইজে পাবলিক পোস্ট হিসেবে শেয়ার করেন।
তবে বৃষ্টিস্নাত এই যুগলের ছবিটি ধারণ করার আগে বা পরে তাদের অনুমতি নেয়া হয়েছিল কিনা, বিশেষ করে এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের কোন অনুমোদন আছে কিনা এমন প্রশ্নও উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
যুগলের ছবি নিয়ে নানা মন্তব্য উঠে এসেছে ফেসবুকে।
'আপত্তি জানাননি'
এ বিষয়ে জীবন আহমেদ বিবিসিকে জানান, তিনি এই ছবিটি তোলার সময় বা ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা নিয়ে ওই জুটির কারো থেকে কোন অনুমতি নেননি।
''তবে ওই যুগল দেখতে পেয়েছেন যে তাদের ফ্রেমবন্দি করা হচ্ছে। এবং ছবি তোলা হচ্ছে জেনেও এ বিষয়ে তারা কোন আপত্তি জানাননি,'' তিনি বলেন।
তবে আপত্তি না জানানোকে অনুমোদন ভেবে বসা কতোটা যৌক্তিক, এমন প্রশ্নের জবাবে মিঃ আহমেদ জানান, "পোস্টটি দেয়ার সময় ভাবতে পারিনি এটি এমনভাবে ভাইরাল হয়ে যাবে।"
পরে তিনি নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি সরিয়ে নিলেও তাতে কোন লাভ হয়নি।
'নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত'
কারো এমন ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ধারণ এবং সেটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের আগে ওই ব্যক্তির অনুমোদন নেয়ার অবশ্যই প্রয়োজন ছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদুল হক।
"এ ধরণের ছবির কারণে ওই দুইজন সামাজিকভাবে নানা সমস্যার মুখে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে ছবি তোলার মুহুর্তে না হলেও, ছবিটি তোলার পর অবশ্যই তাদের অনুমতি নেয়া উচিত ছিল,'' তিনি বলেন।
''কেননা, এই ছবির সঙ্গে ওই দুজনের নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত,'' মিঃ হক বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশ্যে একে অপরকে চুম্বনের এই ছবি নিয়ে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষ বিপক্ষে চলছে নানা মন্তব্য।
অনেকেই বাংলাদেশের সামাজিক মূল্যবোধ টেনে নানা নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। ফটোগ্রাফারের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি জনসমাগম স্থানে এভাবে আবেগের বহি:প্রকাশের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন কেউ কেউ।
তাওহীদ নিশান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, "একটা সম্পর্কের মধ্যে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। তবে সেটার প্রাইভেসিও থাকা উচিত"
আতিকুর রহমান তমাল লিখেছেন, "তারা কি চেয়েছেন, কেউ ছবি তুলুক আর সবাই সেটা ভাইরাল করুক? যদি না চান তাহলে আপনার উদারতা তাদের জন্য বিব্রতকর।"
আবার কেউ এই ছবিকে ভালবাসার নিষ্পাপ অভিব্যক্তি আখ্যা দিয়ে প্রশংসা করেছেন।
অমিত শীল অমি লিখেছেন, "দুর্নীতি করলে কিছু হয় না, ফেসবুক সরগরম হয় ভালবাসার প্রকাশ করলে"
ফারজানা সুমনার ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে জানা যায়, "রাষ্ট্র, সমাজ, ধর্ম ভালবাসার কারণে রসাতলে যায়না। ঘৃণার কারণে যায়, বিবাদ-বিসংবাদের কারণে যায়।
এছাড়া ছবিটির সত্যতা নিয়ে জল ঘোলা কম হয়নি। অনেকেই কাছাকাছি সময়ে একই স্থান থেকে আরো কয়েকটি ছবি তুলে দাবি করেছেন যে ছবিটির ব্যাকগ্রাউন্ড কয়েক লেয়ারে পরিবর্তন করা হয়েছে।
তবে এমন দাবি অস্বীকার করেছেন আলোকচিত্রী জীবন আহমেদ, তিনি জানান, এই ছবিটিতে কোন ধরণের এডিট করা হয়নি। ছবিটি তুলতে তিনি বিশেষ ধরণের লেন্স ব্যবহার করেছেন সে কারণে ব্যাকগ্রাউন্ডটা কিছুটা ভিন্নভাবে এসেছে।
জীবন আহমেদ এর আগেও বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন লেখক ও ব্লগার অভিজিত রায়ের ওপর হামলার পর ঘটনাস্থলের ছবি তুলে। তিনি সেই ছবি ধারণের পাশাপাশি অভিজিত রায় ও তার স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন।