• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ফেনী-২

আ.লীগের ভরসা নিজাম হাজারী, দৌঁড়ের উপর বিএনপি

প্রকাশ:  ২২ জুলাই ২০১৮, ১১:১৮ | আপডেট : ২২ জুলাই ২০১৮, ১১:৩০
আবদুল্লাহ আল-মামুন (ফেনী)

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফেনীতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা। ফেনীর ৩টি আসনের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো সদর আসন। বিগত সময়ে এ আসনে যারা এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তারা জেলার নিয়ন্ত্রক হিসেবে ছিলেন। জেলা সংগঠনের মূল ভূমিকায়ও তাদের দেখা গেছে। ফেনীর ৩টি সংসদীয় আসনের মধ্যে এ আসন নানাভাবে আলোচিত হয়েছে। ফেনী পৌরসভা ও সদর উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন নিয়ে ফেনী-২ সদর আসন গঠিত। নির্বাচনে আওয়ামীলীগ-বিএনপি এই আসনটি পেতে মরিয়া হয়ে উঠে।

এদিকে নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার হাকডাক দেয়ার পর থেকে দিন যত ঘনিয়ে আসছে রাজনীতির মাঠ তত গরম হচ্ছে। ফেনীতে হামলা-মামলায় জর্জরিত বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম পুলিশি বাঁধা ও দলীয় আন্তঃকোন্দলে কিছুটা ছন্দ হারালেও থেমে নেই। জেলা যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি ঘোষণার পর থেকে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হচ্ছে। ফেনীতে বিএনপির আলাদা আলাদা গ্রুপে বিভক্ত হলেও সিদ্ধান্তের ব্যাপারে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দেয়া হয়। ফলে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আগামী নির্বাচনে জেলা সংগঠন গোছানোর কাজে মনোযোগ দিয়েছেন। নির্বাচনে দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার নের্তৃত্বে নির্বাচন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নেতাকর্মীরা।

অপরদিকে ফেনীতে আ.লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেও মাঝে বেশ প্রাণ চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দুই মেয়াদে সরকার ক্ষমতায় আসার পর ফেনীর বর্তমান সাংসদ জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী ও ফেনী জেলা রাজনীতির অভিভাবক আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের নেতৃত্বে ফেনীতে ব্যাপক উন্নয়ন ও সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান প্রায় সব পদে আ.লীগ নেতাকর্মীরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ায় তৃণমূলে উন্নয়ন তরান্বিত হয়েছে। ফেনী সদও উপজেলায় মহিপাল উড়াল সেতুসহ রাস্তা-ঘাট, স্কুল, কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ব্যাপক উন্নয়ন করায় নিজাম উদ্দিন হাজারী জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন। জেলাজুড়ে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করে আ.লীগের ভরসা এখন নিজাম উদ্দিন হাজারী। দল ক্ষমতায় থাকার কারণে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেয়ে জেলার হাইকমান্ডের প্রতি নেতাকর্মীরা অনুগত রয়েছেন।

এছাড়া দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে মামলা হামলা আর কোন্দলে জর্জরিত বিএনপি মাঠে দাঁড়াতে পারবেনা বলে আ.লীগের নেতাকর্মীরা মনে করেন। বিগত দিনের মতো আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপিকে মোকাবেলা করার শক্তি-সামর্থ্য রয়েছে বলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন। ফলে নৌকার টিকিট যিনি পাবেন তার বিজয় সুনিশ্চিত বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা।

আ.লীগ

ফেনী সদর আসনে বর্তমান এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী সর্বজনগ্রাহ্য জননেতা। জেলাজুড়ে তার উন্নয়নের যে ধারা তা অব্যাহত থাকুক এটা চায় দল মত নির্বিশেষে সবাই। ফলে তার মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত তা ধরে নেয়া যায়। জেলা আ.লীগের প্রবীণ নেতাদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, আ.লীগের বর্তমান এমপি নিজাম হাজারীর মনোনয়ন কেউ ঠেকাতে পারবে না। তার যে জনপ্রিয়তা তাতে জনগণ মনেপ্রাণে তাকে নির্বাচিত করবে।

নিজাম উদ্দীন হাজারীর সুনিপুণ নেতৃত্বে আকৃষ্ট হয়ে ২০১২ সালের ২৬ ডিসেম্বর জেলা আ.লীগের সম্মেলনে কেন্দ্র ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা ব্যাপক সমর্থন দিয়ে তাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন।

এর আগে ২০১১ সালে ফেনী পৌরসভা নির্বাচনে তৎকালীন মেয়র বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নুরুল আবসারকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়ে জেলার রাজনীতিতে নিজের অবস্থানের জানান দেন এই নেতা।

জেলায় বিএনপির রাজনৈতিক দুর্বলতার কারণে এবং নেতৃত্বে কোন্দল থাকায় গত কয়েক বছরে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে ৬ উপজেলা, ৫ পৌরসভা, ৪৪টি ইউনিয়ন পরিষদ এবং সর্বশেষ জেলা পরিষদের সব কটি পদে আ.লীগের প্রার্থীরা জয়ী হন।

এ কৃতিত্ব নিজাম হাজারীর বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। তাই এবার প্রার্থী বাছাইয়ে আ.লীগের সাংগঠনিক অবস্থান বিবেচনা করা হচ্ছে।

আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবার ব্যাপারে জানতে চাইলে নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী নেত্রী শেখ হাসিনা যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকে মনোনয়ন দিবেন। এক্ষেত্রে তিনি দল সমর্থীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন।

জেলা আ.লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বিকম নিজাম হাজারীর প্রতি নিজের সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, এমপি নির্বাচনে বর্তমান এমপির বিকল্প নেই। তার মনোনয়ন না হলে ফেনীতে বিএনপি প্রার্থীকে হারাতে বেগ পেতে হবে। হয়তো আসনটি ২০০৮ সালের মতো হাতছাড়া হয়ে যাবে। এ আসনে ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আ.লীগ থেকে মনোনয়ন পান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। কিন্তু ভোটযুদ্ধে বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। ইকবাল সোবহান এবারও দলীয় মনোনয়ন লাভের জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

ফেনীর রাজনীতিতে একসময় তার সক্রিয় অবস্থান থাকলেও বর্তমানে জেলা আ.লীগের সাথে বিভিন্ন ইস্যুতে তার মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। এরপরও তিনি সময় পেলে ছুটে আসেন নিজ বাড়ি শর্শদি ইউনিয়নের ফতেহপুরে। নির্বাচনী এলাকার মানুষের খোঁজখবর ও বিভিন্নভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

তিনি নিজ বাড়ির প্রবেশমুখে একটি হাফেজিয়া এতিমখানা খুলেছেন। এছাড়াও ফেনীর বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। ফলে ইকবাল সোবহানের প্রস্তুতি অনেকটা জোরেশোরে চলছে বলে মনে করছেন অনেকে।

জানতে চাইলে মুঠোফোনে আলাপকালে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দিলে তিনি ফেনী সদর আসনে আবারও প্রার্থী হবেন। মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত ফেনী তার অঙ্গীকার বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এছাড়াও এ আসনের তিন বারের সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারী দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে তার সমর্থকরা দাবী করেন।

বিএনপি

ফেনী সদর আসনটি বিএনপির দুর্ভেদ্য দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। এ আসনে ২ জয়নালের লড়াই চলতো সারা বছরজুড়ে। বিএনপির ভিপি জয়নাল আর আ.লীগের জয়নাল হাজারী রাজনীতির মাঠে ছিল সমানে সমান। দু‘জনই ছিলেন বড় দু‘দলের সাধারণ সম্পাদক।

২ নেতার দাপুটে বিচরণে ফেনীর রাজনীতিতে সারা বছরজুড়ে রাজনৈতিক আলোচনা-সমালোচনা থাকতো। ১৯৯৬ সালে জাসদ থেকে ফেনী জেলা বিএনপিতে যোগ দেন ফেনী সরকারি কলেজের ভিপি অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন। এর আগে ১৯৮৮ সালে জাসদ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন।

বিএনপির পরাজয় ও ভাঙ্গনের সূত্রপাত শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে। এরপর থেকে জেলা বিএনপি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। জেলার কিছু নেতার ইন্ধনে ফেনী বিএনপিতে বিভাজন আর বিভেদের রাজনীতির সূচনা করেন খালেদা জিয়ার ভাই সাইদ ইস্কান্দার। এর অংশ হিসেবে ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর ফেনী জেলা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকে ফেনীতে বিভাজনের রাজনীতির শুরু। ফেনী-৩ আসনের এমপি মোশারফ হোসেন সভাপতি ও ভিপি জয়নাল সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে তাদের বাদ দিয়ে জেলা কমিটি করে বিএনপি নেত্রীর ভাই সাইদ ইস্কান্দার।

কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে ভিপি জয়নালকে রাজনীতির মূল স্রোতে থেকে পৃথক করে দেয়া হলো। এতে ফেনীর মাঠে ভিপি জয়নালের শূন্যতা তৈরি হলো তাতে দৈন্যতা নেমে এলো জেলা বিএনপিতে। নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে গেলো প্রবাহমান স্রোতের ২টি ভিন্ন ধারায়। এতে বিএনপি ধীরে ধীরে দুর্বল হতে লাগলো। ১৯৯৬‘র নির্বাচনের পর বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতনের স্টীম রোলার চালায় ক্ষমতাসীন আ.লীগ। এই সময় এক রাজনৈতিক মামলায় হাজতবাসে যান ভিপি জয়নাল। হাজতবাস শেষে ২০০১ সালের নির্বাচনে সদর আসনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান। নির্বাচনে বিপুল ভোটে আ.লীগ প্রার্থী জয়নাল হাজারীকে পরাজিত করে ফেনীতে রেকর্ড গড়েন। জয়ের ধারা অব্যাহত রাখেন ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের নির্বাচনেও। এসময় আ.লীগ প্রার্থী, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। ফেনী জেলা বিএনপি তথা রাজনীতির মাঠের প্রবীণ এ নেতা বর্তমানে বিএনপি নেত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন।

নির্বাচন সংক্রান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেন, দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছেন। ২০০১ সালে কারাবরণ করেছেন। এ আসন থেকে তিনি ৩ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী নির্বাচনে দল অবশ্যই তাকে মনোনয়ন দিবে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

জাপা

ফেনীর স্টারলাইন গ্রুপের এমডি ও জাপার কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাজী আলাউদ্দীন, জেলা সভাপতি মোশাররফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমসহ পূর্ণাঙ্গ কমিটি আ.লীগে যোগ দিলে ফেনীর জাপায় নেতৃত্বশূন্যতা সৃষ্টি হয় । তখন জেলা জাপার এমন দুঃসময়ে নতুন কমিটিতে এগিয়ে আসেন জাপার কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক যিনি জেলা কমিটির বর্তমানে আহবায়ক রিন্টু আনোয়ার, সদস্য সচিব ইঞ্জি. খন্দকার নজরুল ইসলাম। ইতোমধ্যে জাপা থেকে এ আসনে ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার নজরুল ইসলামকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তিনি ফেনীর কৃতি সন্তান ও একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি জানান কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে একক প্রার্থী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি ফেনী-২ আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দলের বিজয় সুনিশ্চিত করতে ব্যাপক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

জামায়াত

নির্বাচন কমিশন দলের নিবন্ধন বাতিল করলেও জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও সাবেক জেলা আমির অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঞা জোটের প্রার্থী হিসেবে এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। এদিকে জামায়াত বিএনপির ব্যানারে নয় জোটের প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিবেন বলে জানিয়েছেন জেলা জামায়াতের সভাপতি মাও. একেএম শামছুদ্দিন।

ওএফ

আ.লীগ,বিএনপি,জামায়াত,জাপা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close