• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও জানা গেল না তাসফিয়ার মৃত্যুর কারণ

প্রকাশ:  ১৩ জুলাই ২০১৮, ২২:৩৩ | আপডেট : ১৩ জুলাই ২০১৮, ২২:৩৫
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে স্কুলছাত্রী তাসফিয়া হত্যার আলামত মেলেনি বলে জানিয়েছেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা। ধর্ষণের পর খুন বা বিষক্রিয়ায় তাসফিয়ার মৃত্যু হয়েছে কি না এসব প্রশ্নের উত্তর মিলছে না প্রতিবেদনে।

তাসফিয়ার ময়নাতদন্তকারী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. সুজন কুমার দাশ গত বুধবার তাসফিয়ার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।

এরপর নানা পর্যালোচনা শেষে শুক্রবার তাসফিয়ার আত্মহত্যার বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত হওয়ার কথা বলেছেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর-পশ্চিম) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।

তিনি বলেন, তাসফিয়ার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আমরা পর্যালোচনা করেছি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে তাসফিয়ার মুখে ও শরীরে বিভিন্ন অংশে আঘাত থাকলেও তার ওপর কোনো ধরণের যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। মূলত পানিতে পড়ে শ্বাস বন্ধ হওয়ার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া সুরতহাল প্রতিবেদন ও সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবের প্রতিবেদনেও তাসফিয়ার পোশাক ও যৌনিপথে যৌন সংক্রান্ত ইতিবাচক কোনো ফল পাওয়া যায়নি। চিকিৎসকরা বলেছেন, তাসফিয়া পানিতে পড়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছে। খুন হয়েছে এমন জোরালো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, ফরেনসিক ল্যাবের প্রতিবেদন, সুরতহাল প্রতিবেদন, প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা, গ্রেপ্তার আসামীদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ থেকে প্রাপ্ত তথ্য, সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তদন্ত টিম একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, খুন নয় তাসফিয়া আত্মহত্যাই করেছেন।

পর্যালোচনার বিবরণে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরো বলেন, তাসফিয়া পরিবারের ভয়ে মানসিক চাপ নিতে না পেরে নিজ আগ্রহেই সিএনজি অটোরিকশায় করে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যায়। পরে রাত ৯ টা থেকে ১০টার মধ্যে কোনো এক সময় সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে।

এরপরও যেহেতু এটি আলোচিত মামলা, বিষয়টি নিয়ে আরো অধিকতর তদন্ত চালানো হচ্ছে। দুই-একটি প্রশ্নের উত্তর মেলানোর চেষ্টা করছে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত টিম। আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যে এই মামলার ইতি টানতে পারবো বলে জানান তিনি।

তদন্ত সূত্র জানায়, তাসফিয়া নগরীর ইউরিপিয়ান স্কুলে পড়ালেখা করতো। সেখানে থাকা অবস্থায় ফেসবুক-ইমোতে আসক্তি হয়ে পড়ালেখায় মনযোগ হারিয়ে ফেলে। এ কারনে অনেকটা অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন শুরু করে সে। সে কারণে তাকে মৃত্যুর দু‘মাস আগে নগরীর সাইনশাইন গ্রামার স্কুলে ভর্তি করান তার পরিবার। এরপরও তার চলা ফেরায় পরিবর্তন না আসায় তার কাছে থাকা দামি দুটি মোবাইল সেট নিয়ে নেন তার বাবা। এরই মাঝে বাংলাদেশ এলিমেন্টারি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র আদনান মির্জার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তাসফিয়া।

বিষয়টি জানতে পেরে তার বাবা নানাভাবে শাসন করতে থাকেন। এরপরও প্রয়োজনে ব্যবহার করার জন্য একটি দামি মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছিলেন। সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ইমো আর হোয়াটসআপ অ্যাপসের মাধ্যমে আদনানের সঙ্গে যোগাযোগ করতো তাসফিয়া।

তাসফিয়া প্রেম ও অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের জন্য পরিবারের চাপে ছিল। কিন্তু ওই দিন বান্ধবীর জন্মদিনের কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে প্রেমিক আদনান মীর্জার সঙ্গে দেখা করার খবর জানার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাই ভয় আর মানসিক চাপ থেকে চায়না গ্রিল থেকে বের হয়ে বাসায় না গিয়ে সোজা সিএনজি অটোরিকশাটি নিয়ে ১৮ মাইল দূরে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে চলে যায়। সেখানেই কয়েকঘণ্টা অবস্থান করার পর সে সাগরে জোয়ারের পানিতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে।

আর পানিতে ভাসতে ভাসতে আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে ভাটার সময়ে সৈকতের পাথরের উপর উপুড় হয়ে আটকে থাকে। পানির স্রোতের কারণে পাথরের সঙ্গে তার মরদেহের ধাক্কা লাগায় মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। আর তাসফিয়ার কোনো টাকা না থাকলেও হাতে থাকা আংটিটি সম্ভবত সিএনজি অটোরিকশার চালককে দিয়ে ভাড়া মিটিয়ে ছিল সে। আর মোবাইলসেটটি এখনো পর্যন্ত যেহেতু সচল হয়নি, ধারণা করা হচ্ছে, পানিতে ঝাঁপ দেওয়ার সময় সেটিও তার সাথে সাগরে পড়ে গেছে।

পরদিন ৩রা মে সকালে নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের ১৮ নম্বর ব্রিজঘাটের পাথরের ওপর থেকে তাসফিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পতেঙ্গা থানা পুলিশ। প্রথমে অজ্ঞাত লাশ মনে করা হলেও পরিচয় মেলার পর একই দিন সন্ধ্যায় খুলশি থানার জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটির বাসা থেকে তাসফিয়ার বন্ধু আদনান মির্জাকে (১৬) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয় পুলিশ।

আদনান মির্জা নগরের বাংলাদেশ এলিমেন্টারি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। তাসফিয়াকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে তার বাবা মো. আমীন সেদিন দুপুরে আদনান মির্জাকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের বিরুদ্ধে পতেঙ্গা থানায় হত্যা মামলা করেন। আসামিরা হলেন-আদনান মির্জা, সৈকত মিরাজ, আশিক মিজান, ইমতিয়াজ সুলতান ইকরাম, মো. মোহাইন ও মো. ফিরোজ। এরমধ্যে ঘটনার পরদিন তাসফিয়ার বন্ধু আদনান মির্জা এবং গত ২৩শে মে রাতে আশিক মিজানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গত ৩রা জুলাই আত্মসমর্পণ করলে তাসফিয়া হত্যা মামলায় অন্যতম আসামি কথিত যুবলীগ নেতা মো. ফিরোজকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। গত ৮ই জুলাই ফিরোজকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। -একে

তাসফিয়া
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close