• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

সংসদে প্রধানমন্ত্রী

‘নারী জাতির কলঙ্ক খালেদা জিয়া’

প্রকাশ:  ১১ জুলাই ২০১৮, ১৯:২৭ | আপডেট : ১১ জুলাই ২০১৮, ২০:০৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একজন নারী মানে একজন মা। সেই নারী হয়ে এতিমের টাকা মেরে খাওয়া-এটা চিন্তাই করা যায় না। এটা সমস্ত নারীর জন্য কলঙ্ক।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে মহিলা এমপি নুরজাহান বেগমের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে কোর্টের রায়ে জেলে আছেন। একজন নারী হয়ে দুর্নীতির দায়ে তার সাজা হয়েছে। মামলাটা আমরা করিনি। রাজনৈতিক কারণে মামলা হলে ২০১৪-১৫ সালেই তাকে গ্রেফতার করতে পারতাম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোর্টের রায়ে তার সাজা হয়েছে। মামলাটি প্রায় ১০ বছর চলেছে। বিএনপির এত জাঁদরেল জাঁদরেল আইনজীবী কেউই আদালতে তাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারল না। এতেই প্রমাণিত হয় তিনি অপরাধী। আর বিএনপি নেতারাও সেটা জানতেন বলেই মামলার রায়ের আগেই দলটির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা সংশোধন করে দুর্নীতিবাজ, অপরাধী ও দণ্ডিতদের নেতা হওয়ার সুযোগ রাখা হলো কেন?

বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস-নাশকতা ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা না থাকলে নারীরা নির্যাতিত হয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে একাত্তরের পাক হানাদার বাহিনীর মতো নারীদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়, পাশবিক নির্যাতন চালায়। ৬ বছরের ছোট শিশুকে পর্যন্ত গণধর্ষণ করে। দেশের এমন কোনো স্থান ছিল না যেখানে নির্যাতন হয়নি। যে কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা ভোট পায়নি।

তিনি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আন্দোলন ও নির্বাচন বানচালের নামে তারা নির্বিচারে নারীসহ দেশের মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সারা দেশে নাশকতা চালিয়েছে। যা নারীর ক্ষমতায়নের পথে বড় বাধা বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

কাজী ফিরোজ রশীদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিতে আমাদের আরও অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা দরকার। আমরা তা নির্মাণ করব। যার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ভৌগোলিক দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, আমরা এশিয়ান হাইওয়ে, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে যোগাযোগ তৈরি করব। আমরা বাংলাদেশ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করতে পারে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়া আমরা আরও উন্নত বিমানবন্দর নির্মাণ করব। দক্ষিণাঞ্চলে আরও একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করব। গ্রামকে নগরে পরিণত করব, দেশের সব গ্রামে নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেব। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে একটি শান্তিময় উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব।

আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অসামান্য ভূমিকা

মামুনুর রশীদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা সর্বদা কাজ করে চলেছি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অবদান আজ সর্বস্বীকৃত। একদিকে আজ বাংলাদেশ যেমন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, অন্যদিকে তেমনি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় রেখেছে অসামান্য ভূমিকা।

তিনি বলেন, যার ফলে অর্জন করেছে অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মানজনক স্বীকৃতি। শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। বিশ্ব শান্তির জন্য গৃহীত যে কোনো উদ্যোগে বাংলাদেশের সক্রিয় সমর্থন ও অংশগ্রহণ বজায় থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে একটি সুন্দর, স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে বাংলাদেশের ভূমিকা আজ সারা বিশ্বে স্বীকৃত। বর্তমানে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায় হলো সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ। সন্ত্রাসবিরোধী ১৪টি আন্তর্জাতিক কনভেনশনের প্রত্যেকটিতেই বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের সাফল্য আজ সমগ্র বিশ্বে রোল মডেল।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, মিয়ানমারে অত্যাচার ও নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানের মাধ্যমে আমরা মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের এই উদারতা বৃহত্তর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা তথা শান্তি বজায় রাখতে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে, যা আজ সর্বজনবিদিত।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ

এম এ আউয়ালের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান ও দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে সব ধরনের সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, নাশকতা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি জানান, ইতিপূর্বে জঙ্গি/সন্ত্রাসী/নাশকতামূলক/ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের কর্মকাণ্ড ও গতিবিধি সম্পর্কে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীসহ সব অপরাধীদের কর্মকাণ্ডরোধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম গঠন করে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

মাদকবিরোধী অভিযান

প্রধানমন্ত্রী সংসদে জানান, গত ১৮ মে থেকে এ পর্যন্ত চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য, অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং এগুলো পরিবহনের বাহন উদ্ধার ও জব্দ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মাদকদ্রব্য সংশ্লিষ্ট মোট ১৫ হাজার ৩৩৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মোট ২০ হাজার ৭৬৭ জন আসামিকে গ্রেফতার করে বিচারে সোপর্দ করা হয়েছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১ হাজার ২৮৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যদের সক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে দেশ ও বিদেশে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রেরণের পরিকল্পনা

বেগম নাসিমা ফেরদৌসীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সফলভাবে উৎক্ষেপণের পর মহাকাশে নিজেদের অবস্থানকে সমুন্নত রাখতে এর ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ মহাকাশে প্রেরণ করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

তিনি বলেন, স্বপ্নের স্যাটেলাইট নির্মাণ ও এর সফল উৎক্ষেপণে আমি গর্বিত ও আনন্দিত। মহাকাশে আজ বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে। এ গৌরব আমাদের সরকারের, এ গৌরব দেশের ১৬ কোটি মানুষের। আর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ আওয়ামী লীগ সরকারের গতিশীল উন্নয়নের ধারাবাহিকতার অংশ। এই স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হলো। -একে

প্রধানমন্ত্রী,খালেদা জিয়া
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close