• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

আ.লীগের ৭০ বছরে পদার্পন উদযাপন নতুন কার্যালয়ে

প্রকাশ:  ২৩ জুন ২০১৮, ০০:০৯ | আপডেট : ২৩ জুন ২০১৮, ১১:৪৩
ওমর ফারুক

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পথচলার ৬৯ বছর পূর্ণ হলো আজ (২৩ জুন) শনিবার। এবারের বর্ষপূর্তির প্রধান আকর্ষণ হলো বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নতুন ভবনের উদ্বোধন। সকাল ১০টায় নতুন ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাজধানীর ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের নয়নাভিরাম ও বিশ্বমানের ১০ তলা ভবনটি নির্মাণে সময় লেগেছে দুই বছরে। নির্মাণ খরচ প্রায় ১০ কোটি টাকা, দলের নিজস্ব ফান্ড থেকেই এই ব্যয় নির্বাহ করা হয়েছে বলে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ঐতিহ্যের দীর্ঘপথে আওয়ামী লীগ এ ঠিকানার কার্যালয়টি ব্যবহার করছে ১৯৮১ সালের মে মাসে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে দলের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে । সেই থেকে এখনও এখানেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় রয়েছে। এর আগে ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার পর এর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৯১, নবাবপুর রোডে দলের অফিস নেন। এর কিছু দিন পর অস্থায়ীভাবে সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলিতে কিছু দিন বসেন নেতারা। পরে পুরানা পল্টনে দুটি স্থানে দীর্ঘদিন দলের অফিস ছিল।

দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েকে যুগোপযোগি এবং আধুনিক করার লক্ষে ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই ওই ভবনটি ভাঙ্গা হয়। পুরনো ভবন ভেঙ্গে ১০ তলা ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে গতমাসেই । সাজসজ্জার কাজও প্রায় শেষ। এখন অপেক্ষা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের, দলের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আনুষ্ঠানিকভাবে নবনির্মিত কার্যালয়ের দুয়ার উন্মোচন করবেন।

দৃষ্টিনন্দন এভবনের সামনের দেয়ালে রঙতুলির অাঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। প্রবেশমুখের দেয়ালে লেখা রয়েছে কোটি মানুষের সেই প্রাণের শ্লোগান ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধ’। এর পাশেই প্রতীক নৌকার ছবি। বাম পাশে আ.লীগের ৪ মূলনীতি খোদাই করে লেখা গণতন্ত্র, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষতা। ভবনের উপরের অংশের দেয়াল জুড়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চে রেসকোর্সে ময়দানেঐতিহাসিক ভাষণের প্রতিচ্ছবি। মূল প্রবেশদ্বার পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলেই নিচতলার দেয়ালজুড়ে থাকছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরেকটি বিশাল প্রতিকৃতি চোখে পড়ে। এরই একপাশে রয়েছে অভ্যর্থনা টেবিল। সবমিলিয়ে মনোরম সজ্জা।

এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী নিজেদের নতুন অফিস দেখতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ভিড় করছেন। মন্ত্রী থেকে আরম্ভ করে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা সবাই আসছেন। তাদের আনাগোনায় প্রটোকলের নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকে। এ ভবনটিকে নেতাকর্মীরা এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উপহার হিসেবে দেখছেন।

সংগঠন সূত্রে জানা যায়, ‍পুরনো ভবনটি ভেঙে ফেলার পর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ভবন নির্মাণের আনুষ্ঠানিক কাজে হাত দেওয়া হয়। লক্ষ্য ছিল দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার। সেই হিসেবে আগামী সেপ্টেম্বরে ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার চার মাস আগেই শেষ হলো ভবন নির্মাণের। নতুন কার্যালয় হিসেবে ব্যবহারের জন্য ভবন নির্মাণ করতে কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়নি। পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ভবনটি নির্মিত হয়।

বিল্ডিং কোড মেনে সামনের দিকে রাস্তা থেকে ১০ ফুট ও পেছনের দিকে ১৭ ফুট জায়গা ছেড়ে মোট জমির ৬৫ শতাংশ ব্যবহার করে এটি তৈরি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতা ও ভবন নির্মাণ-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দলের নিজস্ব ফান্ড থেকে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণ করা হয়। এর সামনের দেয়ালের দুইপাশ কাচ দিয়ে ঘেরা আর মাঝখানে সিরামিকের ইটের বন্ধন। ভবনের সামনে-পেছনে থাকবে ফুলের বাগান। এ ভবনের সামনে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে। ভবনটির প্রথম থেকে তৃতীয়তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোর ৪ হাজার ১শ’ বর্গফুট। চতুর্থতলা থেকে উপরের সব ক’টি ৩ হাজার ১শ’ বর্গফুটের।

ভবনের ভিতরেই ঢুকতেই সিঁড়ির পাশাপাশি রয়েছে দুটি লিফট। একটি লিফট সাইজে ছোট অপরটি সাইজে বড়। ভবনের বেসমেন্ট এ থাকছে গাড়ি পার্কিং, নীচ তলায় প্রবেশ ও গাড়ি পার্কিং, ১ম ও ২য় তলায় সভাকক্ষ, ৩য় ও ৪র্থ তলায় সাধারণ অফিস, ৫ম তলায় সম্মেলন কক্ষ, ৬ষ্ঠ তলায় কোষাধ্যক্ষ’র অফিস, ৭ম তলায় সাধারণ সম্পাদকের অফিস, ৮ম তলায় দলের সভাপতির অফিস এবং ৯ম তলায় ক্যাফেটেরিয়া।

দলের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ সহকারি ড. আবদুস সোবহান গোলাপ পূর্বপশ্চিমকে জানান, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের একটি শীর্ষ রাজনৈতিক সংগঠন। ক্রমান্বয়ে এ সংগঠনের পরিধি বাড়ছে ও সে সাথে বাড়ছে দলীর জনবল এবং বাড়ছে সংগঠনের দলীয় কার্যক্রমও। তাছাড়া নতুন নিজস্ব কার্যালয়টি আমাদের দীর্ঘ দিনের ফসল। যার ফল ভোগ করবে দলের সকল নেতাকর্মীরা। আগামী ২৩ জুন আ.লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে নব-নির্মিত ভবনের উদ্বোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই উপস্থিত থেকে নব-নির্মিত ভবনের উদ্বোধন করবেন। সে জন্য পুরো ভবনকে নান্দনিক রূপে জানানো হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, এবারের বর্ষপূর্তিতে ১০ তলা নব-নির্মিত ভবনটি আমাদের নেতা-কর্মীদের জন্য একটি বড় সারপ্রাইজ। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে নির্মিত ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে ওয়াই-ফাইয়ের সিস্টেম চালু করা হবে। তাছাড়া দলের নেতা-কর্মীদের জন্য প্রচার দফতর, গবেষণা ইত্যাদি আলাদা আলাদা রুম রয়েছে।

ড. আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন, ভবনের আইসিটি রুমে সাংবাদিকদের বসে সরাসরি সংবাদ প্রেরণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেখানে সাংবাদিক ভাই-বোনেরা বসে নিউজের কাজ করতে পারবেন।।

এক প্রশ্নের জবারে দলের এই দফতর সম্পাদক পূর্বপশ্চিমকে বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে জানে বলেই আওয়ামী লীগ ৬৯ বছর ধরে নিজস্ব ঐতিহ্য বজায় রেখে এখনও দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে আছে। তবে আগে যারা দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা এনালগ সিস্টেমে কাজ করছে। আর নতুন দিনের নতুন আ.লীগ এখন কাজ করছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে।

কার্যালয় প্রসঙ্গে কথা হলো ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি দেশের বৃহত্তম পার্টি অফিস হবে। এটা আমাদের নেতাকর্মীদের জন্য গর্বের বিষয়। পুরনো ভবন ভাঙার প্রায় দুই বছর পর নতুন ভবনে উঠতে যাচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো দল আওয়ামী লীগ। এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে এক ছাদের নিচে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা বসে দলের কার্যক্রম চালাতে পারবো। নেত্রী আমাদের সকল কাজে উৎসাহিত করবে সে আশাই করছি।

ছবি: জীবন আহমেদ

আওয়ামী লীগ,বঙ্গবন্ধু এভিনিউ
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close