• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

প্রতারণা করায় বর-বরের মাকে বেঁধে রেখেছেন মেয়ের বাবা

প্রকাশ:  ১৯ জুন ২০১৮, ১২:০২
ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌতুক ও বিভিন্ন অজুহাতে টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় আখিরুল ইসলাম (৩৫) নামের এক যুবককে বেঁধে রেখে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছেন মেয়ের পরিবার। তাকে তার আসল মা দেখতে এলে তাকেও আটক করা হয়।

সোমবার (১৯ জুন) বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের মহিষমারী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। প্রতারক যুবকটিকে আটক করা হয় জেলার রানীশংকৈল থেকে। পরে তাকে সেখান থেকে ওই গ্রামে আনা হয়।ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

সম্পর্কিত খবর

    জানা যায়, নিজেকে বিএসসি শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌতুক হিসেবে দফায় দফায় মোটরসাইকেলনহ ২ লাখ টাকা নিয়েছেন ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার জসিয়া (রাজবাড়ী) এলাকার মো. আখিরুল ইসলাম। পরে সন্দেহ হওয়ায় খবর নিতে গিয়ে ওই অভিভাবক জানতে পারে আখিরুল একজন প্রতারক।

    তার আসল নাম মো. আখিরুল ইসলাম হলেও প্রতারণার উদ্দেশ্যে তিনি নিজেকে আখিরুল ওরফে আফিরুল ওরফে বাপ্পি নাম ধারণ করেন।

    প্রতারণায় ফেঁসে যাওয়া পরিবারটি জানিয়েছে, ৩/৪ মাস আগে স্থানীয় ঘটক শামসুল আলম ও নজরুল ইসলামের সহযোগিতায় এই ছেলের সাথে পরিচয় হয়। ছেলে তার মামাতো ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে আসেন। এসময় তিনি নিজেকে বিএসসি শিক্ষক পরিচয় দেন এবং পরে তাদের মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। যেহেতু ছেলে বিএসসি শিক্ষক তাই মেয়ের পরিবারও প্রস্তাবটিতে সায় দেয়।

    এরপর যৌতুক হিসেবে লেনদেন ঠিক করাসহ চলে দুই পক্ষের বাড়ি দেখাদেখি। ছেলের বাড়ি দেখানোর জন্য কনের ছোট বোনকে একদিন বেড়াতেও নিয়ে যায়। দেখানো হয় ছেলের ছাদ দেওয়া পাকা বাড়ি। তার মা সাজানো হয় ওই বাড়ির এক মহিলাকে। যথারীতি আপ্যায়নও করে কনের ছোটবোনকে।

    এ সময় আখিরুল জানায়, মা হজ্ব করে এসেছেন। তিনি সরকারি চাকরি করতেন। এখন অবসরে আছেন। এসব মুখরোচক গল্প বানিয়ে মেয়ে ও মেয়ের পরিবারকে আয়ত্তে নেন। পরে শুরু হয় বিয়ে নিয়ে আলোচনা। চূড়ান্ত হয় বিয়ের যৌতুক হিসেবে ৮ লাখ টাকা। দফায় দফায় নগদ টাকা ও মোটরসাইকেলসহ দুই লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন আখিরুল।

    বিয়ের তারিখ নির্ধারিত হয় ঈদের পঞ্চম দিন। কিন্তু এর মধ্যে ছেলে আর ফোন রিসিভ না করায় কনের বাবার মনে সন্দেহ দেখা দেয়। ছেলের খবর নিতে রানীশংকৈল রাজবাড়ী এলাকায় গেলে বাপ্পী নামে কারও খোঁজ পাননি তিনি। পরে তিনি জানতে পারেন বাপ্পী নামে তিনি যাকে খুঁজছেন, তিনি আসলে বাপ্পী নন, তার আসল নাম আখিরুল। এরপর একে একে তার অসংখ্য প্রতারণার খবর জানতে পারেন তারা।

    মেয়ের বাবা বলেন, তার দেওয়া নাম ও পেশা সব ভুয়া। তার দেওয়া বাপ্পি নামটি এলাকায় কেউ চেনে না। তার নাম আখিরুল ওরফে আফিরুল। সে কোনও বিএসসি শিক্ষকও নয়, হাফেজও নয় কিংবা কোনও গানের স্কুলের মাস্টারও নয়। তার দেওয়া সব পরিচয় ভুয়া। সে একজন প্রতারক। সে পলাতক ছিল। অনেক কৌশল করে তাকে আটক করা সম্ভব হয়।

    প্রতারক ছেলেটিকে আটক করে রাখায় ছেলের আসল মা আরিফা বেগম বালিয়াডাঙ্গীর মহিষমারী গ্রামে এলে তাকেও আটক করা হয়।

    দুওসুও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, ঘটনাটি আমার গ্রামের। মেয়ে ও মেয়ের পরিবারের কাছ থেকে প্রতারক ছেলেটি যে টাকা নিয়েছে তা ফেরত দিলে ছেলেটি ও তার মাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

    প্রতারণার শিকার মেয়েটি (কনে) বলেন, ওই ছেলেকে আটকের খবর পেয়ে আমাদের বাড়িতে ৩/৪ জন লোক তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে এসেছিল। তাদের কাছে শুনেছি সে এভাবেই প্রতারণা করে আরো ৫/৬টি বিয়ে করেছে।

    মেয়ের বাবা জানান, সে তার মায়ের অপারেশনের কথা বলে টাকা নিয়েছে। তার চাকরির কথা বলে টাকা নিয়েছে। আসলে সবই ভুয়া। আমার দেওয়া টাকাগুলো পেলেই তাকে ছেড়ে দেব।

    প্রতারণাকারী আখিরুল ওরফে আফিরুল জানান, টাকা নিয়েছি সত্যি। যদি তারা চায় তাহলে আমার বিয়ে করতে কোনও আপত্তি নেই। না হলে কষ্ট হলেও তাদের টাকা আমি ফেরত দিয়ে দেব।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close