বিশ্ব ফুটবলের সর্বকালের সেরা একাদশ নিয়ে নানামুনির রয়েছে নানামত। তবুও প্রতিবছর বিশ্বকাপ এলে বিশ্রেষকরা সর্বকালের সেরা একাদশ নির্বাচনের প্রচেষ্টা চালান। ১৯৩০ সালে যাত্রা শুরু হওয়া বিশ্বকাপ ফুটবলের গত ২০টি আসরে যারা পায়ের কারসাজিতে বিশ্বে আলো ছড়িয়েছেন, বিভিন্ন পজেশনের ১১ জন জাদুকরী ফুটবলার নিয়ে গড়া এবারের সর্ববালের সেরা একাদশে চলুন চোখ রাখি।গোলরক্ষক: লেভ ইয়াসিন
ফুটবলে গোলরক্ষকের নাম নেয়া হবে আর লেভ ইয়াসিনের নাম আসবে না তা হতে পারে না৷ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের এই গোলরক্ষক খেলেছেন ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৬৬ বিশ্বকাপ৷ ১৯৫৬ সিডনি অলিম্পিকে জিতিয়েছিলেন দেশকে৷ ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েই একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি৷লেফট ব্যাক: পাওলো মালদিনিবিশ্ব ফুটবলের সেরা ডিফেন্ডার কে? অবলীলায় এই নামটি চলে আসবে৷ ভোটেও তাই হয়েছে৷ নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বিগুণ ভোট পেয়েছেন তিনি৷ ১৯৯০, ১৯৯৪ ও ১৯৯৮-র বিশ্বকাপে খেলেছেন এই ইটালিয়ান ডিফেন্ডার৷ ১৯৯৪-এর বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে ইটালির টাইব্রেকার হার একটুর জন্য তাঁকে শিরোপার নাগাল পেতে দেয়নি৷রাইট ব্যাক: কাফুটানা তিন বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছেন তিনি৷ জিতেছেন ১৯৯৪ ও ২০০২ বিশ্বকাপ৷ এর মধ্যে ২০০২-এ ব্রাজিল দলের নেতৃত্বে ছিলেন৷ ভোটে ডিফেন্ডারদের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানটি ছিল কাফু’র৷সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার: ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ারফুটবলের ইতিহাসে বেকেনবাওয়ারই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি কোচ, খেলোয়াড় বা অধিনায়ক থাকাকালে দেশকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন৷ এই কিংবদন্তীর নেতৃত্বে জার্মানি বিশ্বকাপ জেতে ১৯৭৪ সালে৷ আর কোচ হিসেবে ডয়েচলান্ডকে আবারো শিরোপার স্বাদ দেন ১৯৯০-এ৷সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার: ববি মুরইংল্যান্ডের একমাত্র বিশ্বকাপটি (১৯৬৬) জয়ে নেতৃত্ব দেন এই কিংবদন্তী ডিফেন্ডার৷ তাঁর পায়ের দক্ষতা আর রক্ষণভাগে দেয়াল তৈরি করে প্রতিপক্ষকে কঠিন সময় উপহার দেয়ার কৌশল তাঁকে জায়গা করে দিয়েছে একাদশে৷ তবে ভোটের মাঠে এর জন্য তাঁকে ইটালির ফ্র্যাঙ্কো বারেৎসি’র সঙ্গে কঠিন লড়াই করতে হয়েছে৷মিডফিল্ডার: জিনেদিন জিদানজিদানের পায়ের জাদু’র প্রশংসা করেন না এমন ফুটবলপ্রেমী পাওয়া মুশকিল৷ স্কিলের দিক থেকে অনেকেই তাঁকে মারাদোনা আর পেলের সঙ্গেই তুলনা করেন৷ ১৯৯৮-এর বিশ্বকাপ জয়ে ফ্রান্সের নায়ক ছিলেন তিনিই৷ এমনকি ২০০৬ বিশ্বকাপেও সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন৷ তবে সেবার ইটালির মাতেরাৎসিকে মাথা দিয়ে গুঁতো মেরে অনেক সমালোচনার ভাগীদারও হন৷মিডফিল্ডার: ইয়োহান ক্রুইফহল্যান্ডের এই কীর্তিমান ফুটবলার যে একাদশে থাকবেন তা জানাই ছিল৷ টোটাল ফুটবলের একরকম জনকই তিনি৷ তাঁর কৌশলের কাছে প্রতিপক্ষরা যেন দাঁড়াতেই পারতেন না৷ তাঁর নৈপূণ্যে ১৯৭৪ বিশ্বকাপে পূর্ব জার্মানি, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছায় হল্যান্ড৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে পশ্চিম জার্মানির কাছে ধরাশায়ী হয়৷মিডফিল্ডার: ডিয়েগো মারাদোনাফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিতর্ক হলো, সর্বকালের সেরা কে? পেলে, না মারাদোনা? এই ফুটবল জাদুকরের জাদু অবশ্য ১৯৮২-তেই দেখেছিল বিশ্ব৷ কিন্তু সেবার তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি৷ এরপর প্রায় একক নৈপূণ্যেই আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েছিলেন ১৯৮৬-র বিশ্বকাপ৷ ১৯৯০ সালেও ফাইনালে খেলেছে তাঁর দল৷ তাঁর ‘ঈশ্বরের হাত’-এর গল্প কার না জানা৷স্ট্রাইকার: পেলেসর্বকালের সেরা বিতর্কের আরেক নায়ক পেলে৷ ‘কালোমানিক’ নামেও পরিচিত৷৷ ব্রাজিল ও ফুটবল উভয়কেই মহিমান্বিত করেছেন এই কিংবদন্তী৷ ১৯৬২ বিশ্বকাপে তিনি দ্বিতীয় ম্যাচে ইনজুরির শিকার হয়ে আর খেলতে পারেননি৷ তবে সেই বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল৷ পরের বিশ্বকাপে ব্রাজিল অবশ্য আগেই বাদ পড়ে যায়৷ প্রচুর ফাউলের শিকার হন পেলে৷ তবে ১৯৭০-এর বিশ্বকাপে চরম নৈপূণ্য দেখিয়ে জিতে নেন শিরোপা৷স্ট্রাইকার: লিওনেল মেসিএকাদশে এ সময়ের একমাত্র প্রতিনিধি হলেন লিওনেল মেসি৷ যদিও এখনো বিশ্বকাপে মেসির জাদুর প্রতিফলন তেমন একটা ঘটেনি, তারপরও তাঁর নৈপুণ্য তাঁকে সেরা একাদশে জায়গা করে দিয়েছে৷ শুধু তাই নয়, পেলে ও মেসির মাঝে ব্যবধান গড়েছে মাত্র ১০টি ভোট৷