বাস-ট্রেন-লঞ্চে মানুষের ঢল
পবিত্র ঈদুল ফিতরের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। ঈদ যাত্রার চতুর্থ দিনেও ঘরমুখী মানুষের ঢল নেমেছে রাজধানীর রেলস্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়ছে ট্রেন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে।
বুধবার (১৩ জুন) প্রকৃত ঈদযাত্রার চিত্র দেখা গেছে রাজধানীজুড়ে। সকাল থেকেই রাজধানীর প্রতিটি বাস টার্মিনালে ছিল নীড়ে ফেরা মানুষের স্রোত। বাদ যায়নি ট্রেন স্টেশন ও লঞ্চঘাটও। ঘরমুখো মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে এসব স্টেশন।
সম্পর্কিত খবর
মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, ভোর থেকেই যাত্রীরা ভিড় করছেন। কেউ বসে আছেন অগ্রিম টিকিট কাটা বাসের অপেক্ষায় আর কেউবা আছেন টিকিট পাওয়ার অপেক্ষায়।
মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন উত্তরবঙ্গ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর ও সিলেট রুটের দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গ ও সিলেট রুটের ক্ষেত্রে অগ্রিম টিকিটের যাত্রীদের দেখা গেলেও বাকি অন্যান্য রুটের ক্ষেত্রে অগ্রিম টিকিটের কোনো বালাই নেই। যাত্রীরা আসছেন, টিকিট নিচ্ছেন, বাসের সিট পরিপূর্ণ হলেই বাস ছেড়ে দিচ্ছে।
তাছাড়া এই রুটের পরিবহনগুলোর ক্ষেত্রে নেই তেমন কোনো অতিরিক্ত ভাড়ার অভিযোগ। এ কারণেই ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে দেখা গেছে যাত্রীদের। আবার টার্মিনাল এলাকা ছাড়াও মহাখালী এলাকার রাস্তার পাশেও দেখা গেছে গাড়ির দীর্ঘ লাইন।
টাঙ্গাইলের নিরালা পরিবহন ও বিনিময় পরিবহন সাধারণ ভাড়ার চেয়ে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি নিচ্ছে। এছাড়া ময়মনসিংহ, শেরপুর ও জামালপুর রুটের বাসগুলোর ক্ষেত্রেও ৫০ টাকার বেশি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের খবর মেলেনি। কিন্তু উত্তরবঙ্গ রুটের বাসগুলোর ক্ষেত্রে অগ্রিম টিকিট দেওয়া থেকে শুরু করে ভাড়া পর্যন্ত ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন যাত্রীরা। তবে বাড়ি ফেরার আনন্দে বা যাওয়ার মানসিক বাধ্যবাধকতার জন্য এসব ভোগান্তিকে সহজে মেনে নিয়েই ফিরছেন বাড়িতে।
অভিযোগ রয়েছে, কাউন্টার থেকে ইচ্ছে করেই বিক্রি হয়ে গেছে বলে অগ্রিম টিকিট আটকে রাখা হয়। এরপর যাত্রীর চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা হয়। যে কারণে রাজধানীর অন্যান্য বাস টার্মিনালগুলোতে অগ্রিম টিকিটের প্রাধান্য বেশি থাকলেও এই টার্মিনালে তা নেই।
এদিকে, মহাখালী কাউন্টারে যাত্রীদের দুর্ভোগ নিরাময়ে রয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) স্টল ও সঙ্গে অভিযোগ বাক্স। সেখানে দায়িত্বরত ইন্সপেক্টর এনামুল হকের কাছে গিয়ে জানা যায় এই রুটের নির্ধারিত ভাড়া অনুসারে চারজন যাত্রীর মোট টিকিট মূল্য আসতে পারে দুই হাজার ২৫০ টাকা।
এনামুল বলেন, আমরা অভিযোগ পেলে তৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। তিনি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করেন। এ সময় তিনি এ অভিযোগ রেখে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস দেন।
তবে বাস স্টেশনের চেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে কমলাপুর রেলস্টেশনে। সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, মানুষ আর মানুষ। কাঙিক্ষত ট্রেন স্টেশনে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাগ, লাগেজ হাতে নিয়ে মানুষ ছুটছেন সেদিকে। দরজা দিয়ে ঢুকতে না পেরে অনেকে জানালা দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করছেন। ট্রেনে আসার কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুরো ট্রেন মানুষে ভরে যায়।
ট্রেনে যারা সিট পাননি তারা দাঁড়িয়েই গন্তব্যে যাচ্ছেন। সবমিলিয়ে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়ে ট্রেনের ভেতরে যেন তীল ধারণের ঠাঁই নেই। এছাড়া ট্রেনের ভেতরে যারা উঠতে পারেননি তারা অবস্থান নেন ট্রেনের ছাদে। যে যেভাবে পারছেন ট্রেনের ছাদে উঠে পড়ছেন।
ভোর থেকে ঈদযাত্রীরা আসতে শুরু করে। সকাল ছয়টার আগেই স্টেশনের প্রতিটি প্লাটফর্মেই হাজার হাজার মানুষ জড়ো হতে থাকে। দিনের প্রথম ট্রেন ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জের উদ্দেশে সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি প্রায় ৫০ মিনিট দেরিতে ছাড়ে। দিনের দ্বিতীয় স্পেশাল ট্রেন সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে ঢাকা থেকে লালমনিরহাটের উদ্দেশে ছাড়ার কথা থাকলেও তা প্লাটফর্মে এসে পৌঁছায় সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটেও।
এদিকে স্পেশাল ট্রেনের ভোগান্তি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেক যাত্রী। তাদের মতে, স্পেশাল ট্রেন সময় মতো না ছাড়াটা দুঃখজনক।
সিহাব উদ্দিন নামের এক যাত্রী লালমনিরহাট স্পেশাল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন প্রায় এক ঘণ্টা ধরে। তিনি বলেন, এখনও ট্রেন আসেনি, কখন আসবে সেটাও কেউ বলতে পারছেন না। আর কতক্ষণ অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে জানিনা। যেহেতু বাড়ি ফিরতেই হবে, তাই এই ভোগান্তি মেনে নিতে হচ্ছে।
সাবিনা নামের এক যাত্রী বলেন, স্টেশনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা বিরক্তিকর। এখানে মেয়েদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল শিডিউল ঠিক রাখা।
ঈদ যাত্রা বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ঈদ যাত্রায় আমরা চেষ্টা করছি যেন সব ট্রেনই ঠিকমতো এসে নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যায়। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ঈদে বাড়ি ফিরতে পারে সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। যাত্রী চাপ সামলাতে প্রায় প্রতিটি ট্রেনেই অতিরিক্ত বগি লাগানোর পাশাপাশি যাত্রীদের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও আছে।
এছাড়া সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও ভিড় ছিল উপচেপড়া। কেউ সপরিবারে, আবার কেউ একাই আসছেন এক বা একাধিক ব্যাগ নিয়ে।
ধামরাই থেকে সদরঘাটে এসেছেন আনিসুজ্জামান। তিনি যাবেন বরিশালে। তিনি বলেন, ঈদের সময় লঞ্চে জায়গা পাওয়া যায় না বিষয়টি আগে থেকেই জানি। তাই ভোরে বাসা থেকে রওনা হয়েছি। কষ্ট করে হলেও লঞ্চে উঠতে পারলেই বাঁচি।
এদিকে ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রী নির্বিঘ্ন করবে সব জায়গাতেই প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তা দেখা গেছে।