নওগাঁ-৬
আ.লীগ-বিএনপির একাধিক প্রার্থী
এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদ নামে খ্যাত আত্রাই ও রাণীনগর উপজেলা। এই দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৬ আসন। আগামী ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নওগাঁ-৬ আসন (আত্রাই-রাণীনগর) এলাকায় জোট ও মহাজোটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে নির্বাচনী এলাকা। অনেকেই নির্বাচনের আগেই মাঠ গরম করতে প্রস্তুতি শুরু করেছে পুরোদমে। কেউ কেউ বলছেন তৃণমূল পর্যায়ের জরিপের উপর ভিত্তি করে যদি দল যোগ্য বলে মনোনয়ন প্রদান করে তাহলে নির্বাচনের মাঠে আসবো তা না হলে প্রতীকের পক্ষে কাজ করবো।
অনেক নতুন নতুন মুখ দেখা যাচ্ছে বর্তমান সময়ে। তাদের আনাগোনায় এলাকায় বেশ জমে উঠছে নির্বাচনের হাওয়া। সভা সমাবেশ, গণসংযোগ, পোষ্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, ফেসবুক-টুইটার ও মত বিনিময় সভার মাধ্যমে এসব প্রার্থীরা নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। সেই সাথে প্রত্যন্ত গ্রামের নেতাকর্মীদের সাথে কুশলাদি বিনিময়, অসুস্থ্য ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাত ও মৃত-ব্যক্তিদের জানাযায় ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু ভোটাররা চায় সৎ, শিক্ষিত ও যোগ্য এক নতুন মুখ।
সম্পর্কিত খবর
১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে নওগাঁ-৬ আসনে (আত্রাই-রাণীনগর) রাজনীতিতে ততই নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের কাছে কদর বাড়ছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা এখন নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে নেতারা উপর মহলে লবিং এর পাশাপাশি গণসংযোগও চালাচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
আগামী ২০১৮সালের ডিসেম্বর/জানুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত হতে পারে ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন থেকে এমন ঘোষণা আশার পর থেকেই আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতাকর্মীরা আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। দলের উপর মহল থেকে নির্দেশনা পেয়ে নির্বাচনী মাঠ গোছানো শুরু করেছে দলটি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সভা সমাবেশ থেকে শুরু করে দলীয় বিভিন্ন কার্যক্রমে নির্বাচনকে ঘিরে চলছে আলোচনা।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জানান, বাংলাদেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার রোল মডেল। তাই বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিকল্প নাই। শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুতায়ন, রাস্তা-ঘাট ও ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণসহ সর্বপরি দেশের টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণ করে দেশের উন্নয়নের দৃষ্টান্তর স্থাপন করেছেন। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের চিত্র জনগনের সামনে তুলে ধরছেন। দলের হাইকমান্ড যাকে যোগ্য প্রার্থী মনে করবেন ১১তম সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য (এমপি) প্রার্থী হিসাবে তাকেই দলীয় টিকেট প্রদান করবেন উর্দ্ধতন মহল। তবে তৃনমূল পর্যায়ে জরিপের মাধ্যমেই নির্বাচনের টিকেট প্রদান করবে এমনটাই প্রত্যাশা নেতা-কর্মীদের।
অন্যদিকে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতি, জুলুম-নির্যাতনের চিত্র জনগনের সামনে তুলে ধরছেন। পাশাপাশি ভোটার বিহীন নির্বাচনের অঙ্গন থেকে বেরিয়ে এসে একটি সুষ্ঠ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের ভোটের অধিকার এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে নাগরিকদের প্রকৃত সেবা ও সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করার আশ্বাস দিচ্ছেন তারা। পাশাপাশি দলের চেয়ারপার্সন ঘোষিত ভীষণ ২০৩০ রুপকল্প জনগণের সামনে তুলে ধরছেন।
নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনটি এক সময় বিএনপির দুর্গ হিসেবে ছিলো। তা ভেঙ্গে গত ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগের পর পর দুইবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইসরাফিল আলম নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও প্রার্থী হতে চান বর্তমান সংসদ সদস্য মোঃ ইসরাফিল আলম।
তিনি বলেন আমি নিজের জীবন বাজি রেখে এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদকে আজ শান্তির জনপদে পরিণত করেছি। আজ কোন মায়ের বুক খালি হয় না, কোন বোনকে বিধবার শাড়ি পড়তে হয় না, কোন বাবাকে তার সন্তান হারাতে হয় না। আমি এই আসনের যত উন্নয়ন মূলক কাজ করেছি বিগত সময়ে কোন নেতাই সেই কাজ করার সাহস পায়নি। তাই আমি আশা রাখি জনগন আগামীতেও আমাকেই ভোট দিয়ে জয়লাভ করাবেন শুধুমাত্র এই জনপদের শান্তির জন্য।
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় নতুন মুখ হিসেবে আরো রয়েছে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নওশের আলী, সাবেক সাংসদ ওহিদুর রহমানের ছেলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমন, জেলা আ’লীগের কার্যকরী সদস্য ও উপজেলা আ’লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মো: রেজউল ইসলাম, রাণীনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো: আনোয়ার হোসেন হেলাল।
এদিকে বিএনপির মনোনয়ন চান ২০০৬ সালের পর থেকে এই জনপদে ধানের শীষকে যিনি কঠোর হাতে আগলে রেখেছেন তিনি বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও জেলা বিএনপির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আনোয়ার হোসেন বুলু।
তিনি বলেন গত ৯ম সংসদ নির্বাচনে আমি একজন পরাজিত প্রার্থী। এই দুই উপজেলাতে শত বাধা-বিপত্তির মুখেও আমি ধানের শীষের রক্ষক হিসাবে নিজের দায়িত্ব পালন করে আসছি। শত মামলা-হামলাতেও সব সময় দলের নেতাকর্মীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে অবশ্যই আমি জয়ী হবো কারণ এই আসনের মানুষ বর্তমান এমপির দখলবাজী ও অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। তারা বর্তমান এমপির শাসন থেকে মুক্তি চায়। তাই এই আসনের মানুষরা এখন নতুন মুখকে দেখতে চায়।
এছাড়াও জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ও নওগাঁ জেলা জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের সভাপতি আলহাজ্ব মো: এছাহক আলীর নাম শোনা যাচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিয়মিত গণসংযোগ, দলীয় কর্মসূচি ছাড়াও তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। তারা মনোনয়ন পাওয়ার জন্য নিরলস ভাবে মাঠ পর্যায়ে কর্মীসভা, গণসংযোগ, প্রচার-প্রচারনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জোট ও মহাজোটের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীর বাহিরে জাতীয় পার্টি (এরশাদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল (জাসদ) ইনু গ্রুপ ও জামাত থেকে এখনো কোন একক প্রার্থী হিসাবে কোন ব্যক্তির নাম শোনা যাচ্ছে না। তবে তারা দলের উপড় মহলে প্রার্থীদের তালিকা প্রদান করেছেন। চ’ড়ান্ত নাম পাওয়া গেলেই তবেই নেতা-কর্মীরা তাদের হয়ে মাঠে নামবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।