• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

মাদকের সম্রাটরা এখনও অধরা

প্রকাশ:  ২৬ মে ২০১৮, ১৫:২৮ | আপডেট : ২৬ মে ২০১৮, ২০:৩৬
রাজশাহী প্রতিনিধি

সারাদেশে যখন মাদকবিরোধী অভিযানে দেশের আলোচিত মাদক সম্রাটরা পুলিশ ও র‌্যাবের কথিত বন্ধুকযুদ্ধে মারা যাচ্ছে। ঠিক তখন বাংলাদেশের মাদকের রাজধানী হিসেবে খ্যাত রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলাতে কোন মাদক বিরোধ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে না। মাদক সম্রাটরা এলাকাতেই অবস্থান করছে। এনিয়ে এলাকাতে সমালোচনার ঝড় বইছে।

প্রশ্ন উঠেছে সারাদেশের মধ্যে গোদাগাড়ীতে মাদকের প্রচুর বদনাম রয়েছে। আমরা বাইরে গেলে এলাকার নাম বললে হেরোইন এলাকার লোক বলে আখ্যা দেয় তখন আমাদের চোখে মুখে কালি পড়ে। আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীয় রাস্তাঘাটে যেখানে সেখানে তল্লাসী চালিয়ে অনেক ভাল লোক কেউ বিব্রত কর অবস্থায় পড়তে হয়।

সম্পর্কিত খবর

    যদি প্রকৃত অর্থে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালিত হয় তাহলে বাংলাদেশের মধ্যে সর্ব প্রথম গোদাগাড়ীতেই মাদক সম্রাটদের ধরতে অভিযান চালতে হতো। এলাকার লোকজনের আশা শীঘ্রই গোদাগাড়ীতে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে মাদক সম্রাট ও তাদের সহযোগিদের আইনের আওতায় আনা হোক।

    দেশে মাদকের চাহিদার বড় অংশ ঢুকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা সীমান্ত দিয়ে। এখানে অন্তত দুই শতাধিক বড় বড় মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে, যারা প্রতিদিনই ভারত থেকে কেজি কেজি হেরোইন পাচার করে আনেন। তাই ‘মাদকের রাজধানী’ নামেই সীমান্ত ঘেঁষা এই উপজেলাকে চেনে দেশের মানুষ। গোদাগাড়ী পৌর শহরেই রয়েছে একটি গ্রামের নাম ‘‘ হেরোইন গ্রাম’’।

    অথচ সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হলেও এ উপজেলায় কোনো প্রভাব নেয়। চলছে না মাদক বিরোধী অভিযানও। অন্য সময়ের তুলনায় এখান থেকে মাদক উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতারের সংখ্যাও কমে গেছে। গোদাগাড়ী থানা পুলিশও এই সময়ে একেবারে নিষ্ক্রীয় ভূমিকায় আছে। এতে হতাশ গোদাগাড়ীর সচেতনমহল। তারা বলছেন, মাদক ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের জেরেই এখানে কোনো অভিযান চালাচ্ছে না কেউ।

    অনুসন্ধানে জানা গেছে, সারাদেশে মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরুর পর গোদাগাড়ীর অধিকাংশ মাদকের গডফাদাররা এলাকা ছেড়ে পালইনি বরং এলাকাতে থেকে আত্নগোপন করে মাদক ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছে। অন্তরালে থেকে আগের মতো এখনও টাকার বিনিময়ে তাদের হেরোইন সীমান্ত থেকে আনা থেকে শুরু করে সংরক্ষণ এবং ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। ধাপে ধাপে কয়েকজন মিলে করছেন এই কাজ। ফলে এখনও গোদাগাড়ী সীমান্ত দিয়ে কেজি কেজি হেরোইন এসে চলে যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে ।

    স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা তালিকায় রাজশাহীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে রয়েছে গোদাগাড়ী উপজেলার রবিউল ইসলাম রবি, নওশাদ আলী, সেলিম, হযরত আলী, নাজিবুর, তোফাজ্জল, হায়দার আলী, সোহেল, সেতাবুর রহমান ওরফে বাবু ও টিপুর নাম। সেতাবুর রহমান বাবু মাটি কাটা ইউনিয়নের সদস্য ।

    জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুযোগে সে বিভিন্ন জায়গাতে তদবির করে এলাকাতেই অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। অনুসন্ধানে জানাগেছে সে মাত্র ৫-৬ বছর আগে এককাপ চা খাবারও টাকা ছিলো না । কৃষি জমিতে শ্রমিকের কাজ করত। সে মাদক ব্যবসায় করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে আশ্রয় আছে। সে এক সময়ে বিএনপির সমর্থক ছিলো। এখন আওয়ামীলীগের আদুরে ছত্রছয়ায় আছে। সে হেরো চালক থেকে ৯০ বিঘার আবাদি জমি, ৫টি ডিপ, ১২ টি ট্রাক্টর, রেলগেট বাইপাসে দুটি বাড়ী, রাজশাহী শহরে দুটিবাড়ীসহ নানান ধনসম্পদ গড়ে তুলেছেন।

    সকল গোয়েন্দা সংস্থার তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনার মূলহোতা মাদক সম্রাট বাবুর চাচা, নাসির উদ্দীন নয়ন ডাক্তার মাদক গডফাদার। তার রয়েছে আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীয় সাথে গভীর মিতালী সেই এলাকাতে আছে প্রকাশ্যে। ক্লিনিক ব্যবসার অন্তরালে মাদক ও দেহব্যবসায় হলো তার বিশাল আয়ের মাধ্যম। নয়ন ডাক্তার ও তার ভাতিজা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রথম শ্রেণীর নেতাদের সাথে সুস্পর্ক গড়ে তুলে ফেসবুকে ছবি দিয়ে এলাকায় প্রভায় দেখায়। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বলতে পারে না। কিছুদিন আগে চাচা-ভাতিজা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে প্রচার চালিয়ে এলাকাতে জাহির করে যে তার কত ক্ষমতা।

    এছাড়া গোদাগাড়ীর পদ্মা নদীর ওপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার কোদালকাটি গ্রামের জব্বার আলীর নামও রয়েছে এই তালিকায়। এরা এখন আত্নগোপনে বলে দাবি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

    মাদারপুর গ্রামের নওশাদ জামাতি সাবেক ৩ নং সাবেক কাউন্সিলর তার ছেলে জাহাঙ্গীর, আলমগীর একাধিক মামলার আসামী। মোঃ টিপু পিতা মজিবুর রহমান গ্রাম মাদারপুর অনেক অর্থবিত্তের মালিক সে কুলি থেকে এখন প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে। মোঃ আনারুল ইসলাম শ্রীমন্তপুর ডাইংপাড়া সদর এলাকার আল মদিনা ডেকোরেটরের পেছনে বাড়ী সে মাদক ডিলার, মাদারপুর গ্রামের তোফাজ্বল মজিবুরের ভাই, সহারাগাছি গ্রামের আফজালের ছেলে মোঃ জসিম উদ্দীন। রেলগেট বাজারে মোবাইল দোকান রাহিম টেলিকমের অন্তরালে মাদক ব্যবসায়। তার দোকান হতে দেড় মাস আগে দুইকেজি হেরোইন উদ্ধার করে রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।

    মাটিকাটা দুই নম্বর গেটের এহেসান কবিরাজের ছেলে শাহিন, আচুয়াভাটা গ্রামের আরিফুল, মোঃ দুরুল হোদা ডিমভাঙ্গার সাইফুল ,আহম্মেদ মহিশালবাড়ীর শহিদুল ইসলাম ভোদল জিরো থেকে হিরো, আগে ডিম বিক্রীয় করতো, আবুল হোসেনের ছেলে মোঃ হেলাল। সে চকেলেট ফ্যাক্টরীর লেবার থেকে এখন কোটিপতি,। রাজশাহী উপশহরে বাড়ী গাড়ী আছে। একই গ্রামের বানী ইসরাইল ওরফে ভোদল, মাদারপুরের মনিরুল ইসলাম মনি, টিপু, মেহেদী, সোহেল ,মাসুদসহ ৫ ভাই। এরা শ্রমিক থেকে কোটিপতি। কসাইপাড়া রেলগেটের জিয়া জহরুল ইসলাম আষাডিয়াদসহ ইউপি সদস্য, কানা মাহাবুব, মোফাজ্জল হোসেন মোফা ২ নং ওয়ার্ড পোরসভার কাউন্সিলর মাদক সিন্ডিকেটের মূল হোতা ও তার সহযোগি। তারা থানা পুলিশের কাছ হতে হেরোইন ইয়াবা কেনাবেচা করে।

    এছাড়াও গোদাগাড়ীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী চর আষাড়িয়াদহ ইউপির সদস্য শরিফুল ইসলাম, মাটিকাটা বাইপাস এলাকার সোহেল, আবু, গড়ের মাঠের শীষ মোহাম্মদ, আনিকুল, হায়দার, বারুইপাড়ার ইলিয়াস, দেলোয়ার, মাদারপুরের নাজির, বড় শাহাদত, টিপু, সাইফুল, উজানপাড়ার জাহাঙ্গীর, সারেংপুরের মনি, রুমেন, সুলতানগঞ্জের পোয়া বাবু, উজ্জ্বল, রুহুল, গাড্ডু, আসাদুল, সাগুয়ানের ওবায়দুল বক্স, মানিকচকের মাহবুব, মংলা, মহিষালবাড়ির লোকমান, কলেজপাড়ার মোহন, রেলগেটের রাসেল ওরফে চিট রাসেল ও কৃষ্ণবাঢি-কালিদীঘি গ্রামের আতাউরসহ অনেক মাদক ব্যবসায়ীই এখন আত্মগোপনে। আইনশৃংখলা বাহিনীর তালিকায় তাদের নাম রয়েছে।

    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনও থেমে নেই তাদের কারবার। মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে এরা করেছেন গাড়ী, বাড়ি এবং অগাধ টাকা-পয়সা। প্রতিদিনই তাদের হেরোইন আসছে সীমান্ত পেরিয়ে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তারা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই দেশব্যাপী মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা হলেও গোদাগাড়ীর এই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতনমহল।

    সিনিয়র সহাকারি পুলিশ সুপার গোদাগাড়ী সার্কের মোঃ একরামুল হক বলেন, আমাদের অভিযান চলছে । মাদক ব্যবসায়ীরা কৌশলে আত্নগোপনে আছে তাদের কোন ছাড় নেই। সময় মতই তাদের বিরুদ্ধে এ্যাকশন হবেই। তাছাড়া তিনি সাংবাদিকদের মাদক বিরোধী অভিযানে সহযোগিতা কামনা করেন।

    গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের মাদক অভিযান চলছেই । আমি নতুন এই থানায় যোগ দিয়েছি তাই হুট করে সব কিছু করতে পারছিনা। কৌশলে এগুতে হচ্ছে। তাছাড়া মাদক ব্যবসায়ীরা নিজেদের বাঁচাতে গা ঢাকা দিয়েছে বলে দাবি করে বলেন। মাদকের বিরুদ্ধে সরকার আন্তরিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তবে গোদাগাড়ীবাসী এই অভিযানের সুফল পাবেন বলে মন্তব্য করেন।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close