• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

‘দ্বন্দ-হিংসায় শঙ্কিত আ.লীগ-বিএনপি, সমাধান তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি’

প্রকাশ:  ২৫ মে ২০১৮, ২৩:০৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
ফাইল ছবি

যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, ‘বিগত কয়েক বছরের শাসনের ফলে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুই দলের ভেতরে দ্বন্দ্ব ও হিংসার জন্ম হওয়ায় একদিকে সরকার, রাজনৈতিক কর্মীরা নির্বাচনোত্তর প্রতিহিংসার ভয়ে ভীত (যদি সরকারি দল পরাজিত হয়)। অন্যদিকে, যদি সরকারি দল বিজয়ী হয়, তা হলে বিএনপির কর্মীরা তাদের নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে একইভাবে শঙ্কিত। উপরন্তু, সাধারণ ভোটাররা কোনদিকে ভোট দিয়ে নিরাপদ থাকবেন, এ ব্যাপারে তারাও শঙ্কিত।’

শুক্রবার (২৫ মে) রাজধানীর পলওয়েল কনভেনশন সেন্টারে ঢাকা মহানগর উত্তর বিকল্পধারা আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে বক্তব্যকালে তিনি এসব কথা বলেন।

সম্পর্কিত খবর

    বি. চৌধুরী বলেন, ‘যদি দেশের মানুষ সত্যিকার বিপদের আশঙ্কাকে উপলব্ধি করতে পারেন এবং দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার খাতিরে একটি তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটাতে পারেন, তা হলেই এই আশঙ্কাজনক ভবিষ্যতের সম্ভাব্য চিত্র বদলে যেতে পারে। এই তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি যদি জনগণের সমর্থনে উঠে আসতে পারে, তা হলে তারা বিবাদমান ওই দুইটি রাজনৈতিক দলকে দারুণভাবে প্রভাবিত করতে পারবে। যার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন এবং নির্বাচন পরবর্তী ভয়াবহ সহিংসতা, হত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং সামাজিক অত্যাচারের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।’

    তিনি বলেন, ‘আমরা একটি সুন্দর স্থায়ী সমাধানের পক্ষে কাজ করতে চাই। আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করি না এবং সব রাজনৈতিক দলের তরফ থেকে একই আচরণ প্রত্যাশা করি। আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি— ঘৃণা শুধু ঘৃণার জন্ম দেয়। আর হিংসা শুধু হিংসার জন্ম দেয়। আমরা আরও বিশ্বাস করি, শ্রদ্ধা করে কেউ ছোট হয় না। আর ঘৃণা করে কেউ বড় হয় না।’

    সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রায়কে অমান্য ও উপেক্ষা করে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে বিভিন্ন অজুহাতে আটক রাখা পাকিস্তানি এবং ব্রিটিশ আমলের ঔপনিবেশিক মানসিকতা। এতে ‘বিরোধী দলনে’র স্মৃতি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। এ ব্যাপারে সরকারকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতেই হবে। যদি তারা আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন এবং সেটাই হবে অভিপ্রেত গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত।’

    বি. চৌধুরী বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সব বাধা দূর করার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সমতল ক্ষেত্র ভূমি। এই জায়গায় যদি বিভিন্ন ধরনের বাধা থাকে, তা হলে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হবে না। এর জন্য প্রথমে প্রয়োজন নির্বাচনকালীন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ একটি সরকার এবং প্রমাণিত নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে, যাতে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা তাদের পদমর্যাদার সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে না পারেন।’

    তিনি বলেন, ‘যেহেতু বর্তমান সরকার নিজেদেরকে গণতন্ত্রের প্রতি দৃঢ়বিশ্বাসী বলে বার বার ঘোষণা করছেন, সেহেতু প্রধান দায়িত্ব বর্তমান সরকারের ওপরেই বর্তায়। হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে আটক রাখলে নির্বাচনে সমতল ক্ষেত্র ভূমি কখনও তৈরি হবে না।’

    যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান বলেন, ‘মাদক এবং অন্যান্য অজুহাতে কারা নিহত হচ্ছেন, আমরা তা জানি না। তাদের নাম, পরিচয় জানি না। দাবি উঠেছে, এরা রাজনৈতিক কর্মী। যদি বিভিন্ন অজুহাতে রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যা ও জেলে আটক রাখা হয় এবং একটি বিশেষ গোষ্ঠীর কর্মীদের হাতে ময়দান ছেড়ে দেওয়া হয়, তা হলে সেটা নির্বাচনের জন্য সমতল ক্ষেত্র ভূমি হলো না, হবে না।’

    তিনি বলেন, ‘‘উচ্চ আদালতের রায়কে অমান্য ও উপেক্ষা করে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে বিভিন্ন অজুহাতে আটক রাখা পাকিস্তানি এবং ব্রিটিশ আমলের ঔপনিবেশিক মানসিকতা, অর্থাৎ ‘বিরোধী দলনে’র স্মৃতি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। এ ব্যাপারে সরকারকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতেই হবে। যদি তারা আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন এবং সেটাই হবে অভিপ্রেত গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত।’’

    বক্তব্যে দেশবাসীকে রোজার শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘পবিত্র সিয়াম সাধনার মাসে আমরা যেন মুত্তাকি হতে পারি। আরও উন্নত মানুষ হতে পারি। একে অন্যকে শ্রদ্ধা করতে পারি। লোভ-লালসা, হিংসা পরিহার করে দেশের মানুষের জন্য সুন্দর ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করতে পারি।’

    তিনি বলেন,‘আমি বিকল্পধারা, যুক্তফ্রন্ট এবং আমাদের বন্ধু জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের মূল বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে বলছি— আমরা দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করবো এবং সব নাগরিকের জন্য আইনের শাসন সুনিশ্চিত করবো, ইনশাল্লাহ্। দেশের বুদ্ধীজীবীসহ সব মানুষের প্রতি আমাদের আহ্বান, তারা যেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন।’ এ প্রসঙ্গে বি. চৌধুরী বলেন, ‘গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন আমাদের সঙ্গে একত্রে কাজ করার কথা ঘোষণা করেছেন, আমি তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’

    অনুষ্ঠানে জেএসডি সভাপতি আ.স.ম আবদুর রব বলেন, ‘আমরা মাদকের বিরোধী কিন্তু বিনাবিচারে হত্যা সমর্থন করি না। খুলনার নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়েছে। কিন্তু গাজীপুরে এমন কিছু করার চেষ্টা করলে যুদ্ধ বেঁধে যাবে।’

    নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘মাদকের নামে বিনাবিচারে ৫৪ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, যারা হত্যা করেছে তাদেরও বিচার করা হবে।’ তিনি রোজার পর অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপিকে রাজপথের আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান।

    ঢাকা মহানগর উত্তর বিকল্পধারার সভাপতি মাহবুব আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন— জেএসডি সভাপতি আ.স.ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, বিকল্পধারার কেন্দ্রীয় নেতা, ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, মাহফুজুর রহমান, শাহ আহম্মেদ বাদল, আসাদুজ্জামান বাচ্চু প্রমুখ। -একে

    যুক্তফ্রন্ট,বদরুদ্দোজা চৌধুরী
    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close