মাদকনির্মূল অভিযান, ১৫ দিনে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ২৮
দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকনির্মূল অভিযান চলছে। এসব অভিযানে জেলায় জেলায় নিহতের সংখ্যা বাড়ছেই; র্যাব ও পুলিশ এসব ঘটনাকে বর্ণনা করে আসছে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হিসেবে। চলতি মাসের ৪ মে থেকে চলা মাদকবিরোধী অভিযানে সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৮ জন মারা গেছে। এর মধ্যে শুধু রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত মারা গেছে ১০ জন। পুলিশ ও র্যাবের দাবি নিহতরা সবাই মাদক চোরাকারবারে জড়িত ছিল। কারও কারও বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনে মামলাও রয়েছে।
সম্পর্কিত খবর
চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে র্যাবের সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' ১৩ জন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে বলে সংস্থার পক্ষে থেকে বলা হয়েছে। বাকি ১৫ জন পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছে। যদিও 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহতদের কোনো তালিকা পুলিশ প্রণয়ন করে না বলে জানা গেছে।
সময় তাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। এই হিসাবে বাকি ১৪ জন পুলিশ ও ডিবির অভিযানে নিহত হয়েছে বলে ধরা হচ্ছে। তবে পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে তথ্য জানতে চাইলে তারা এ-সংক্রান্ত কোনো তালিকা করে না বলে জানায়।
রাজধানীতে গত ৩ মে র্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মতো মাদকের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নিতে বাহিনীটিকে নির্দেশ দেন। এরপরই শুরু হয় দেশজুড়ে মাদকনির্মূলে সাঁড়াশি অভিযান। র্যাবের পাশাপাশি এ অভিযানে মাঠে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ও বিভিন্ন থানার পুলিশ।
মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করে শুরু হওয়া অভিযানের প্রথম দুই-তিন দিন কোনো বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি। র্যাবের অভিযান শুরুর পর প্রথম বন্দুকযুদ্ধ ঘটে ৭ মে রাতে; তাতে নারায়ণগঞ্জ ও কুষ্টিয়ায় একজন করে নিহত হয়। এরপর ৯ মে রাজশাহীতে নিহত হয় একজন। তারা সবাই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল বলে জানায় র্যাব।
এরই মধ্যে র্যাব-প্রধান বেনজির আহমদ গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তারা মাঠে নেমেছেন। মাদকের বিরদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন।মাদক ব্যবসায়ীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলেও কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
র্যাব-প্রধানের এ ঘোষণার পর মাদক নির্মূল অভিযান আরও জোড়ালো হয়। বেড়ে যায় 'বন্দুকযুদ্ধের' ঘটনাও গত এক সপ্তাহে র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ২৫ জন।
দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা মাদকের বিরুদ্ধে এই সাঁড়াশি অভিযান সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি দিচ্ছে। তবে দেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলো বন্দুক যুদ্ধের ঘটনাকে বিচারবহির্ভূত হত্যা’হিসেবে বর্ণনা করে তা বন্ধের দাবি জানিয়ে এলেও সরকারের তরফ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। বরং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে মাদকবিরোধী অভিযান আরো বেশি জোরদার হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। দেশব্যাপী অভিযানে রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারায় ১০ জন।
এর আগের ২৪ ঘণ্টায় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে 'বন্দুকযুদ্ধে' মাদক ব্যবসা ও পাচারের সাথে জড়িত ১০ জন নিহত হয়। শনিবার থেকে রবিবারের মধ্যে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, যশোর, বরিশাল ও ফেনী জেলায় অভিযানের সময় এ ঘটনাগুলো ঘটে।
মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর রবিবার পর্যন্ত মোট ১৮ জন নিহত হবার কথা নিশ্চিত করে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা। কর্মকর্তারা বলছেন, নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসা এবং পাচারের সঙ্গে জড়িত এবং চিহ্নিত অপরাধী। তাদের নামে মামলাও রয়েছে বলে জানান তারা।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভিযান চালানোর সময় মাদকব্যবসায়ী বা পাচারকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর গুলি ছুড়ছে। এরপর আত্মরক্ষার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী পাল্টা গুলি চালালে তারা নিহত হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীরা বেশির ভাগ সশস্ত্র। তাদের গ্রেপ্তার করতে গেলেই তারা আমাদের ওপর গুলি বর্ষণ করে থাকে। সঙ্গত কারণেই আমাদেরও গুলি করতে হয়। মাদকবিরোধী অভিযানে এই পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১৩ নিহত হয়েছে।’ এসব অভিযানের সময় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে না উল্লেখ করে কমান্ডার মাহমুদ বরেন, ‘আমরা অনেক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনেছি।’
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেলী ফেরদৌস জানান, অভিযানের সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতদের আলাদা কোনো তথ্য বা তালিকা রাখেন না তারা। তাই এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন তিনি।
আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না জানালেও গোয়েন্দা পুলিশ, রেল পুলিশ, থানা পুলিশ এবং বিজিবিকেও বিভিন্ন স্থানে মাদকবিরোধী অভিযানে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে।