• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

হাসান সরকারের চেয়ে জাহাঙ্গীরের আয় ২০ গুণ বেশি

প্রকাশ:  ১৬ এপ্রিল ২০১৮, ১৭:০৩ | আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০১৮, ১৮:৪৯
মুজাহিদ মুন্না

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী সংখ্যা মোট ৯ জন। তবে ভোটের মাঠে লড়াইটা হবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম এবং বিএনপি প্রার্থী হাসানউদ্দিন সরকারের মধ্যেই। নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, অন্য প্রার্থীদের তুলনায় এই দুই প্রার্থীই বেশি সম্পদশালী। তাদের দুজনেরই পেশা ব্যবসা। তবে এই দুই প্রার্থীর আয়ে রয়েছে বড় ব্যবধান। জাহাঙ্গীর আলমের বার্ষিক আয় হাসান সরকারের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি। জাহাঙ্গীর আলমের বার্ষিক আয় যেখানে ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা, সেখানে হাসান সরকারের ১১ লাখ টাকার মতো।

দুই প্রার্থীর দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা যায়, টঙ্গী পৌরসভায় দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান থাকার পর সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করে আসা হাসানউদ্দিন সরকার চেয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সম্পদের পরিমান সাড়ে ৮ গুণ বেশি। আওয়ামী লীগ মনোনীত

সম্পর্কিত খবর

    বয়সে তরুণ ও নবীন প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৮ কোটি ৮৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এর বাইরে রয়েছে ১ হাজার ৫৩৬ শতাংশ কৃষি ও অকৃষি জমি। অন্যদিকে দেনা রয়েছে ৮ কোটি টাকা।

    বিএনপি প্রার্থী হাসানউদ্দিন সরকারের নিজের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৬৪ লাখ টাকা ও স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ ১৯ লাখ টাকা। এর বাইরে দুজনের ৫৩ তোলা স্বর্ণ, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র রয়েছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে হাসান সরকারের নামে ৫৯৮ শতাংশ ও তার স্ত্রীর নামে ৩০৫ শতাংশ জমি রয়েছে। আর স্ত্রীর নামে রয়েছে একটি চারতলা বাড়ি। হাসান সরকারের ঋণ রয়েছে ২৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।

    ২০১৭-১৮ কর বছরে জাহাঙ্গীর তার নিট ৭ কোটি ৯ লাখ ৪৫ হাজার ৪৮৭ টাকার সম্পদের বিপরীতে কর দিয়েছেন ৭৮ লাখ ২ হাজার ২৫৯ টাকা। ৮২ লাখ ৩৫ হাজার ৯৩৪ টাকার সম্পদের বিপরীতে হাসান সরকার কর দিয়েছেন ৮০ হাজার ৫৬৪ টাকা।

    নির্বাচনী প্রচারণায় জাহাঙ্গীর আলমের বাজেট ৩০ লাখ টাকা। এটাকার মধ্যে ১ লাখ ১৪ হাজার পোস্টার ছাপাবেন, ১০টি নির্বাচনী ও একটি কেন্দ্রীয় ক্যাম্প স্থাপন, ১০ লাখ লিফলেট বিতরণ ও ৫৭টি পথসভা করবেন।হাসান সরকার নির্বাচনে সম্ভাব্য ব্যয় ২০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১০ লাখ টাকা তার স্ত্রীর কাছ থেকে নেবেন। নির্বাচনী প্রচারে তার পরিকল্পনায় রয়েছে- ৩ লাখ পোস্টার ছাপানো, দুটি নির্বাচনী ক্যাম্প, একটি কেন্দ্রীয় ক্যাম্প, ৫ লাখ করে লিফলেট ও হ্যান্ডবিল বিতরণ, ঘরোয়া বৈঠক ও সভা, ৩৪২টি ডিজিটাল ব্যানার ও ১৭১টি পথসভা।

    রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিল করা হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গাজীপুরের ৯ জন মেয়র প্রার্থীর সবাই শিক্ষিত। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এমএ (স্নাতকোত্তর) ও বিএনপি প্রার্থী বিএ (স্নাতক) পাস। এছাড়া বাকি প্রার্থীদের মধ্যে কেউ এইচএসসির নিচে নেই। পেশার দিক থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী ছাড়া অন্য সাত মেয়র প্রার্থীর মধ্যে দু’জন শিক্ষক, দু’জন চাকরিজীবী এবং তিনজন ব্যবসায়ী রয়েছেন।

    হলফনামায় জাহাঙ্গীর আলমের দেওয়া তথ্য

    জন্ম: ৭ মে, ১৯৭৯; শিক্ষাগত যোগ্যতা- এমএ/এলএলবি; পেশা: ব্যবসা, এমডি, অনারেবল টেক্সটাইল কম্পোজিট লিমিটেড ও জেড আলম অ্যাপারেলস।

    মামলা: বর্তমানে কোনো ফৌজদারি মামলা নেই। আগে দুটি মামলা থাকলেও ২০০৪-০৫ সালে তা থেকে অব্যাহতি পান।

    আয়ের উৎস: কৃষিখাত থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা; বাড়ি ভাড়া থেকে ৪ লাভ ৩০ হাজার টাকা; ব্যবসা থেকে ৯৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। জমি ‘কেনা বাবদ’ ১ কোটি ১৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা

    অস্থাবর সম্পদ: নগদ টাকা ৭ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৮ টাকা। ব্যাংকে জামানত ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭১ টাকা। ব্যবসায় পুঁজি ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ৭৮৭ টাকা। অনারেবল টেক্সটাইলের শেয়ার ৪৭ লাখ ৫০ হাজার ২০০ টাকা, জেড আলম অ্যাপারেলসের শেয়ার ২০ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র ১০ লাখ টাকা। গাড়ি দুটি। ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র। একটি বন্দুক ও একটি পিস্তল, দাম ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৫০ টাকা।

    স্থাবর সম্পদ: কৃষি জমি ১৪১৫ দশমিক ১৫ শতক। অকৃষি জমি ৩৩ দশমিক ৭১২৪ শতক। দালান ও বাণিজ্যিক জমি ৭ দশমিক ৪৩৭৬ শতক। দায়-

    দেনা: জমি বিক্রির জন্য বায়না বাবদ ৮ কোটি টাকা দায় রয়েছে জাহাঙ্গীরের।

    হলফনামায় হাসান উদ্দিন সরকারের দেওয়া তথ্য

    জন্ম: ১ জুলাই ১৯৪৮; শিক্ষাগত যোগ্যতা- বিএ; পেশা: ব্যবসা।

    মামলা: ফৌজদারি দুটি মামলা; একটি সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকার, অন্যটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে টঙ্গী থানার। আরও তিনটি মামলা ছিল, সেগুলো নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

    আয়ের উৎস: কৃষি থেকে ৬৩ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া থেকে ৫ লাখ ২২ হাজার ৯০০টাকা, ব্যবসা থেকে ৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, ব্যাংক সুদ থেকে ১১ হাজার ৫২৬ টাকা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা। নিজের মোট বার্ষিক আয় ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৯২৬ টাকা। নির্ভরশীলদের আয় কৃষি ২৫,২০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৬ লাখ ৬২ হাজার ৪০০ টাকা, ব্যাংক সুদ ৩ হাজার ৯৯৮ টাকা।

    অস্থাবর সম্পদ: নগদ টাকা ৩ লাখ ৫০ হাজার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৬০ লাখ ৪৯ হাজার ৬০১ টাকা, ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি গাড়ি, স্বর্ণ ২১ তোলা। একটি শটগান ও একটি পিস্তল ৫২ হাজার টাকা। মোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে ৮৭ লাখ ১৬০১ টাকা। স্ত্রীর নামে রয়েছে নগদ ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে ৫৮ হাজার ৫৪২ টাকা, স্বর্ণ ৩২ তোলা, ১০ হাজার টাকার একটি একনলা বন্দুক।

    স্থাবর সম্পদ: কৃষি জমি ৫০০.৫৩১ শতক, দালান বা আবাসিক ৭.৫ শতক জমির উপর ৫টি দোকান, ৯০ শতক জমি ও স্থাপনা, সেমিপাকা ৩২টি রুম, একচালা টিনশেড ঘর। স্ত্রীর নামে রয়েছে কৃষি জমি ২০৮.৮৩৫, অকৃষি জমি ৯৭ শতক,৩২ রুমের ছাপড়া ঘর। ২৯০০ বর্গফুটের ৪ তলা বাড়ি।

    দায়-দেনা: ঋণ ২৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।

    হলফনামায় অন্যান্য প্রার্থী

    রাশেদুল হাসান রানা : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) এই প্রার্থীর আয় ও সম্পদ দুটোই কম। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ২ লাখ টাকা। তবে তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে ৫ বিঘা জমি রয়েছে।

    ফজলুর রহমান : ইসলামী ঐক্যজোটের এ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা দাওরায়ে হাদিস। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা নেই এবং অতীতেও ছিল না। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। রয়েছে ট্রাভেল এজেন্সি। তার বার্ষিক আয় ৮ লাখ ৫ হাজার ৬০০ টাকা। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে আড়াই লাখ টাকা, এজেন্সির পরিচালক হিসেবে সম্মানী ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও ওয়াজ-মাহফিল থেকে সম্মানী ৭৫ হাজার ৬০০ টাকা। তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে- নগদ দুই লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা ৫ লাখ টাকা, একটি প্রাইভেট কার, আসবাবপত্র, ২৭ শতাংশ অকৃষি জমি ও নির্মাণাধীন বাড়ি।

    মো. নাসির উদ্দিন : ইসলামী আন্দোলনের এই প্রার্থী তাকমিল পাস। পেশায় শিক্ষক। তার বার্ষিক আয় সাড়ে ৮ লাখ টাকা। তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে- নগদ ৩৮ হাজার ২৮০ টাকা, ব্যাংকে জমা ৬ লাখ ২১ হাজার ৭২০ টাকা ও আসবাবপত্র। এছাড়া ১৬৫ শতাংশ অকৃষি জমি রয়েছে।

    মো. সানাউল্লাহ : স্বতন্ত্র এই প্রার্থী কামিল পাস। পেশায় শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা দুটি মামলা বিচারাধীন। অতীতে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়েছিল। ওই মামলায় খালাস পেয়েছেন তিনি। তার বার্ষিক আয় ৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৯ লাখ টাকা। এছাড়া রয়েছে মোটরসাইকেল, স্বর্ণ ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে কৃষিজমি ১ বিঘা, অকৃষি জমি ৪ বিঘা ও একটি বাড়ি।

    কাজী মো. রুহুল আমিন : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির এই প্রার্থী স্নাতক পাস। তার বিরুদ্ধে একটি মামলা চলমান রয়েছে। আগে তিনটি মামলায় আসামি থাকলেও তা থেকে খালাস পেয়েছেন। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। বার্ষিক আয় ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ সাড়ে ৪ লাখ টাকা।

    ফরিদ আহমদ : স্বতন্ত্র এই প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএ পাস। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, অতীতেও ছিল না। পেশায় চাকরিজীবী। বার্ষিক আয় ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ২ লাখ ২০ হাজার টাকা, সোয়া ২ কাঠা কৃষিজমি ও একটি বাড়ি। তার কোনো দায়দেনা নেই।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close