• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

একটি স্বপ্ন বিনির্মাণে ভাঙ্গা হচ্ছে ডিএমসি !

প্রকাশ:  ০৫ এপ্রিল ২০১৮, ২০:৩৭ | আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০১৮, ০০:০৬
একে আজাদ

ইউরোপীয় স্থাপত্যে নির্মিত একটি দ্বিতল ভবন। সামনের সবু মাঠে সদ্য লাগানো দু-একটি গাছ। হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে, আদালত কিংবা প্রশাসনিক ভবন। সাবেক এবং বর্তমান ছাত্ররা দেখলেই বুঝবেন, এটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছবি।

সম্পর্কিত খবর

    বঙ্গভঙ্গের পর নবগঠিত বাংলা ও আসাম প্রদেশের সচিবালয়ের জন্য ১৯০৪ সালে এই ভবনটি নির্মিত হয়েছিল। বঙ্গভঙ্গ রদ এবং ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এই ভবনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। ভবনের একাংশে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র, আরেকটি অংশে ছাত্রাবাস এবং অবশিষ্টাংশে কলা অনুষদের শিক্ষা ভবন।

    ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তখনকার একটি প্রস্তাবের ভিত্তিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে প্রস্তাব করে। কিন্তু সরকারি আনুষ্ঠানিকতা করতে দেরি হয়ে যায়। এর মধ্যেই শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তখন এই ভবনটি আমেরিকান বেস হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যুদ্ধ শেষ, চলে যায় আমেরিকানরা, ১৯৪৬ সালে এ ভবনটিতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকার তৎকালীন সিভিল সার্জন মেজর ডব্লিউ জে ভারজিনকে কলেজের প্রথম অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

    ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে অনেক শিক্ষার্থী এখানে চলে আসেন। তাদের হাত ধরেই ঢাকা মেডিকেল কলেজে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সূচনা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক আমতলা (বর্তমান জরুরি বিভাগের পাশে) থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর তৈরি হয় বাঙালির নতুন ইতিহাস।

    কিন্তু ভেঙ্গে ফেলা হবে ঐতিহাসিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ডিএমসি)।না, চমকে ওঠার বিষয় নয়! ভাঙ্গা হবে, তবে ভাঙ্গা মানে শেষ নয়, ভাঙ্গার পর নির্মাণ হবে একটি স্বপ্ন। আসলেই, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ভেঙে একটি বহুতল হাসপাতাল করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এই হাসপাতাল গড়তে ব্যয় হবে ১০ হাজার কোটি টাকা ।

    বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার(৫এপ্রিল)সচিবালয়ে করা সাংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

    অন্যান্য অনেক চিকিৎসালয়ের মতো দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালও শয্যা সংকটে ভুগছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে জটিল রোগীরা এই হাসপাতালে আসে। কিন্তু শয্যার অভাবে জটিল রোগীরাও মেঝেতে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।

    গত কয়েক বছরে হাসপাতালের শয্যা এবং অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো হলেও রোগী বৃদ্ধির চাপ সামাল দেয়া যায়নি। এ পরিস্থিতিতে প্রতিমন্ত্রী নতুন এই উদ্যোগের কথা জানালেন। তবে কবে এই কাজ শুরু হবে, কবেই বা শেষ হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।

    প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশের ছয় বিভাগীয় শহরে নতুন করা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চলতি বছরেই সেবা পাওয়া যাবে।

    দেশের চর, ঝিল, পাহাড়ি এলাকাসহ বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া শুরু হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এজন্য আমরা হাসপাতাল বৃদ্ধিসহ সব ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’

    চলতি বছর নতুন ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার যে পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছিল, সে বিষয়ে সরকারের অনুমোদন মিলেছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। জানান, পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ হবে এক মাসের মধ্যেই। এই নিয়োগ হয়ে গেলে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎক সংকট থাকবে না বলে আশাবাদী প্রতিমন্ত্রী।

    বাংলাদেশ থেকে ভারতে রোগীদের স্রোতের বিষয়ে এক প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ক্যান্সার, হার্ট ও কিডনির চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভারত অনেক এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশ থেকে সেখানে রোগী যাচ্ছে।এসব রোগের চিকিৎসায় কাঙ্ক্ষিত মান অর্জন করাত না পারলেও দুর্বলতা কাটিয়ে চেষ্টা চলছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

    ‘ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য আমাদের দেশে মাত্র পাঁচশ শয্যার একটি ইনস্টিটিটিউট রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এখন কমপক্ষে দুই হাজার শয্যার ক্যান্সার হাসপাতাল দরকার। আমরা দ্রুতই একটি পাঁচশ শয্যার আরও একটি ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরি করব।’

    তবে কিছু রোগের চিকিৎসায় পিছিয়ে থাকলেও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ভারত থেকে এগিয়ে থাকার দাবি করেন প্রতিমন্ত্রী। আর এ ক্ষেত্রে দুই দেশের মানুষদের গড় আয়ুর পার্থক্যের বিষয়টি প্রমাণ হিসেবে দেখান তিনি।

    /এজেড

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close