ডাক্তারদের প্রকৃত অবস্থা মানুষকে জানাতে হবে
চিকিৎসকদের ওপর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হামলার খবর পাই। এক ইউএনওর ওপর হামলার পর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাকশন নেয়ায় এটা আর ঘটে নাই। কিন্তু ডাক্তাররা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। একটা শক্ত চেষ্টাও হয়নি। এর কারণ অজানা।
চিকিৎসকরা এত বাড়তি খাটুনি খাটছেন,দিবারাত্রি কত যে মানবিক কাজ করছেন, এমনকি ছুটির দিনও কাজ করছেন, তার ন্যূনতম স্বীকৃতি মানুষের মাঝে নেই!
সম্পর্কিত খবর
নানা সার্জিক্যাল বিস্ময়কর কাজগুলো করছেন যে চিকিৎসক তার আন্তর্জাতিক মানের এ সেবাও মূল্যহীন?
চিকিৎসকদের রোগী সেবার অন্তরায়গুলোর সহজভাবে সাধারণ জনগণকে জানাতে হবে। তাদেরকে কনভিন্স করতে হবে। জনগণকে সচেতন করতে হবে, আমাদের দেশে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে খুবই কম বাজেট থাকার কারণে রোগীরা কীভাবে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তা বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষকে জানাতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে মোট বাজেটের মাত্র ৫ ভাগ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ হয়। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নিয়ম অনুযায়ী এ বরাদ্দ হওয়ার কথা ন্যূনতম ১৫ ভাগ।
আমেরিকার জনসংখ্যা আমাদের মাত্র দুই গুণ, তাদের স্বাস্থ্য বাজেট আমাদের সারা বছরের পূর্ণ বাজেটের চেয়ে অনেক বেশি। আর এ কারণে বছরের পর বছর ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ২৬০০ বেড দিয়ে চলছে। অথচ ওই বেডে কোনক্রমেই চাহিদা মিটছে না। যেখানে সব সময় সাড়ে ৪ হাজার রোগী ভর্তি থাকে সেখানে বেড সংখ্যা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগই নেই। কারণ বাজেট সমস্যা।
এর উন্নতির ক্ষমতার সামান্য কিছুও চিকিৎসকদের হাতে নেই। এসব কিছু মূলত নিয়ন্ত্রণ করেন রাজনীতিবিদ আর সরকারি আমলারা। আমাদের পাবলিক হেলথের খুব নামকরা বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। তাদের কাজে লাগানো উচিত। স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দের আর্থিক দীনতার কারণে জনগণের চিকিৎসার দুরবস্থার সম্পর্কে বুঝাতে পারলে খুবই উপকার হতো।
আর দেশে চিকিৎসকদের প্রকৃত অবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষের ধারণা একেবারেই নেই বললেই চলে।একটা আজব মিথ (myth) বিরাজ করছে।
একটা উদাহরণ দেই। দেশের নামকরা বড় এক বেসরকারি হাসপাতালের বিশাল ছবি দিয়ে (ফেসবুকে) এক তরুণ তার ছবি সঙ্গে দিয়ে লিখেছে, ‘১০ লাখ লাগলো, -কসাই ডাক্তার।’
কেউ তাকে সঙ্গে সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দেননি যে, ডাক্তাররা এই হাসপাতালের শুধু বেতনধারী কর্মচারী মাত্র। মাস গেলে বেতনটাই পান। এ টাকার সবটাই পেয়েছেন দুজন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী, যারা হাসপাতালটির মালিক।
ডাক্তারদের এমন দুঃসময়ে আমাদের বিএমএ (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন) এসব বুঝিয়ে বলার জন্য কেন একজন দক্ষ পিআরও বা পাবলিক রিলেশন অফিসার রাখে না?
লেখক: অধ্যাপক ডা. অধ্যাপক মুজিবুল হক এফসিপিএস, এফআরসিপি (যুক্তরাজ্য), ডিডিভি (অস্ট্রিয়া) সূত্র: যুগান্তর