• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

সেবা বঞ্চিত হাঁড়ভাঙ্গা রোগীরা

ফেনীতে সদর হাসপাতালে নেই অর্থোপেডিক চিকিৎসক!

প্রকাশ:  ৩০ মার্চ ২০১৮, ১২:০৭
আবদুল্লাহ আল-মামুন, ফেনী প্রতিনিধি

ফেনী সদর হাসপাতাল ও ছয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোনোটিতেই নেই অর্থোপেডিক চিকিৎসক। এতে করে হাড় ভাঙ্গা রোগীরা সেবা বঞ্চিত ও হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে। অথচ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ এটি একটি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা। দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের ফেনী সদর বা উপজেলা কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে সাথে সাথে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ প্রদান করা হয়।

এছাড়া ২৫০ শয্যার ফেনী সদর হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ পদ তত্বাবধায়ক, রেডিওলজিষ্ট কনসালটেন্ট, প্যাথলজি কনসালটেন্ট পদগুলো দীর্ঘদিন থেকে শুন্য থাকায় রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।

সম্পর্কিত খবর

    ফেনী সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, অর্থোপেডিক বিভাগে দুইজন পরামর্শক (কনসালটেন্ট) চিকিৎসকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে কাগজে কলমে জ্যেষ্ঠ পরামর্শক চিকিৎসক হিসেবে একজন থাকলেও তিনি গত ২৩/০৪/১৭ হতে কিড়নী রোগে অসুস্থ থাকায় হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকেন। জুনিয়র কনসালটেন্ট পদটি ২৪/০৫/১৭ থেকে শুন্য রয়েছে। ফলে এ বিভাগে বর্তমানে কোন চিকিৎসক কর্মরত নেই।

    এছাড়া জেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়কের পাশে মহিপালে ২০০৬ সালে ২০ শয্যার একটি ট্রমা সেন্টার (হাড় ভাঙ্গা হাসপাতাল) নির্মাণ করা হয়। ওই সেন্টারে চিকিৎসকসহ জনবলও দেওয়া হয়। কিন্তু হাড় ভাঙ্গার চিকিৎসাসহ সার্বক্ষনিক চিকিৎসার জন্য অন্যান্য ব্যবস্থা না থাকায় সেটি এমনিতেই অচল হয়ে পড়ে আছে। সেখানেও কোন অর্থোপেডিক চিকিৎসক নেই। বর্তমানে ওই ট্রমা সেন্টারে কোন ধরনের চিকিৎসাই চলে না।

    অন্যদিকে জেলায় ৫০ শয্যার পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অর্থোপেডিক চিকিৎসকের পদ থাকলেও কোনোটিতে এখনো পদায়ন হয়নি। আবার কোনোটিতে পদায়ন হলেও নেই চিকিৎসক। ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হওয়ায় সেখানে এমনিতেই অর্থোপেডিক চিকিৎসকের কোনো পদ নেই।

    দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুল খায়ের মিয়াজী জানান, দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও এখনো জনবল পদায়ন হয়নি। যে কারণে এখানেও অর্থোপেডিকের কোনো চিকিৎসক নেই।

    কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার পদুয়া এলাকা থেকে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার সীমানা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৭ কিলোমিটার ফেনী জেলার অংশে পড়েছে।

    জেলার আঞ্চলিক সড়কসমুহ ছাড়াও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, খাগড়াছড়ির রামগড়, চট্টগ্রামের উত্তর ফটিকছড়ির রোগীদেরও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে ফেনী সদর হাসপাতলে নিয়ে আসা হয়।

    রোগী নিয়ে আসার পর চিকিৎসক না পেয়ে তারা হতাশ ও হয়রানীর শিকার হতে হয়।

    দাগনভূঞা উপজেলার কোরেশমুন্সি এলাকায় ইদন মিয়া নামে এক যুবক জানায়, তিনি গত ১১ ফেব্রুয়রি রাতে প্রতিপক্ষের হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে ফেনী সদর হাসপাতালে গেলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরনের জন্য সুপারিশ রেফার) করা হয়। কিন্তু আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় তিনি চিকিৎসা পেতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ফেনী হাসপাতালে হাড় ভাঙ্গা ও জোড়া চিকিৎসক থাকলে তার ভোগান্তি ও হয়রানী হতো না।

    এদিকে গত ০৬/০৯/১৬ থেকে হাসপাতালের রেডিওলজি কনসালটেন্ট ও প্যাথলজি কনসালটেন্টের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে।

    রেডিওলজি বিভাগের কনসালটেন্ট না থাকায় এক্স-রে রিপোর্ট দেওয়া যায় না। কারও বয়স নির্ধারণের প্রয়োজন হলে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে হয়।

    গত বেশ কিছুদিন থেকে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার মূল পদ তত্বাবধায়কের পদটিও শুন্য রয়েছে। বর্তমানে সিভিল সার্জন অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তত্বাবধায়কের দায়িত্বও পালন করেন।

    ফেনীর সিভিল সার্জন হাসান শাহরিয়ার কবীর অর্থোপেডিক, রেডিওলজি ও প্যাথলজি বিভাগে কোনো চিকিৎসক না থাকার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

    তিনি জানান, এসকল পদ সমূহে চিকিৎসক পদায়নের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও অধিদপ্তরে একাধিকবার লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। গত ২২/০২/১৮ সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী উপস্থিতিতে জেলা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় অর্থোপেডিক, রেডিওলজি ও প্যাথলজি বিভাগের কনসালটেন্ট না থাকায় রোগী ও ভিকটিমদের অসুবিধার বিষয়ে আলোচনা হয় এবং আবারও মন্ত্রনালয়ে চিঠি প্রেরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

    ওএফ

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close