• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ব্যাংক ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে অভিনন্দন

প্রকাশ:  ২০ মার্চ ২০১৮, ০০:৫৭ | আপডেট : ২০ মার্চ ২০১৮, ০১:০৮
পীর হাবিবুর রহমান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাতে হয় যে ব্যবসাবান্ধব মনোভাব থেকে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ডাবল ডিজিট থেকে সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে যাচ্ছেন। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমিয়ে আনার ওপর যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।

তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেদন জানিয়ে বলেন, নির্বাচনের আগে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ সময় ড. আবদুর রাজ্জাকের বক্তব্যর সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, আমরা যত দ্রুত সম্ভব ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনব।

সম্পর্কিত খবর

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই মনোভাব প্রকাশ হওয়ার পর দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার আলো দেখা দিয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমে এলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন রক্ত সঞ্চালন ঘটবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে এক কথায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন গতি আসবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন।

    এতে একদিকে সরকারের রাজস্বই বাড়বে না, অর্থনৈতিক উন্নয়নই ঘটবে না, ব্যাপক কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার দুই ডিজিট থাকায় বিনিয়োগকারীদের অবস্থা ছিল ত্রাহিত্রাহি। দম বন্ধ পরিস্থিতির মধ্যে ঋণের বোঝা বইতে বইতে কেউ কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়েছেন, কেউবা বিনিয়োগ খাতে সংকোচন নীতি অবলম্বন করেছেন। পৃথিবীর কোনো উন্নয়নশীল দেশে ব্যাংক ঋণের সুদের হার দুই ডিজিটে নেই। ২% থেকে ৫% সাধারণত দেখা যায়। আমাদের সুদের হারও যখন ৮% ছিল, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমে গিয়েছিল, তখন গ্রামগঞ্জের মানুষ ক্ষুদ্র বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকে ছিল।

    এখন একদিকে এফডিআরের সুদ বাড়িয়ে দেওয়ায় ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১৪% চলছে। যেটি আগামী জানুয়ারিতে ১৬%-এ চলে যাবে। এ অবস্থা চললে ব্যবসা-বাণিজ্য ফেলে শিল্পপতিদেরও দেশ ছেড়ে বিদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিঙ্গেল ডিজিটে ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমিয়ে আনার যে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন, তা তার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রাজনৈতিক প্রজ্ঞারই পরিচয় বহন করছে না; রাষ্ট্র নায়কোচিত নেতৃত্ব ও সাহসিকতার প্রভাব রাখছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে আরও বেশি উৎসাহিত, আরও বেশি প্রসারিত করতে হলে, ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে কমিয়ে আনার পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রের সুদের হারও কমিয়ে দিতে হবে।

    প্রধানমন্ত্রীর এই আগ্রহে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মনোভাব দেখে দেশের ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও অর্থনৈতিক খাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। নতুন করে প্রাণ সঞ্চার ঘটেছে হতাশ-ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। বিনিয়োগকারীরা প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে উত্ফুল্ল চিত্তে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

    বলা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু কন্যার ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিদ্ধান্ত শুধু সময়পযোগীই নয়, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সময়ের দাবিকে পূরণ করছে। এই দাবি পূরণের মধ্য দিয়ে সরকারের জন্য, তার দলের জন্য জনপ্রিয়তা অর্জনের দরজাই খুলে দিচ্ছেন না; দেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তা দূর করে নতুন করে বিনিয়োগের উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন। এতে অর্থনৈতিক খাতে নবজাগরণ ঘটবে।

    এবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে দেশবাসীকে সরকার বহুলপ্রত্যাশিত শুভ সংবাদ জানিয়েছে। জাতিসংঘের সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি ঘোষণা দিয়েছে এলডিসি অর্থাৎ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। আর এ উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের শর্ত হিসেবে তিনটি সূচকেই নির্ধারিত মান অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এই উন্নতির ধারাবাহিকতা আরও তিন বছর বজায় রাখতে হবে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অনুমোদনের জন্য আরও তিন বছর অর্থাৎ ২০২৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বাংলাদেশকে। এরপরই উন্নয়শীল দেশের তালিকায় থাকবে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা লাভের ৪৭ বছর পর উন্নয়শীল দেশ হিসেবে যোগ্যতা অর্জনের খবরটি বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হিসেবে মনে করা হচ্ছে। ১৯৭৬ সালে এলডিসিভুক্ত হওয়ার পর এটি অর্থনৈতিক উন্নতির বড় ধরনের স্বীকৃতি। ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে বিশ্বব্যাংকের তালিকায় নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে বাংলাদেশ।

    তিন বছর যেতে না যেতেই স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু-কন্যার হাত ধরেই উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তরণ ঘটিয়েছে বাংলাদেশ। এ আমাদের বিস্ময়কর অর্জন। বলা হয়, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিয়েছেন। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক মুক্তি দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উত্তরণের ফলে আগামী নয় বছরে বাজার সুবিধায় তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। ২০২৭ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা থাকবে। ওষুধ শিল্পের মেধাসত্ত্ব সুবিধা ২০৩৩ সাল পর্যন্ত থাকবে। তবুও অর্থনীতিবিদদের ভাষায় উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার কারণে রপ্তানি খাতের বাজার সুবিধা সঙ্কুচিত হতে পারে। দাতাদের কাছ থেকে কম সুদে ঋণ পাওয়ার সুযোগও কমে যাবে।

    তাই অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে দেশের সম্পদ বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ সরকারকে এখন নিতে হবে। এই চ্যালেঞ্জের পথ ধরে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে শেখ হাসিনা ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে যত দ্রুত নামিয়ে আনবেন তত দ্রুতই সাফল্য অর্জন করবেন। দলের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় যখন এই আলোচনা উঠেছিল, তখন দেউলিয়া ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ব্যাংকিং খাত নিয়ে বক্তব্য রাখতে শুরু করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে থামিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘ভূতের মুখে রাম নাম! নিজের ব্যাংকটা তো শেষ করলেন, এখন ব্যাংক নিয়ে আর কি পরামর্শ দেবেন?’ প্রধানমন্ত্রী বিরক্ত হয়ে তাকে থামিয়ে দেন। ফারমার্স ব্যাংক মন্দঋণের বোঝায় মৃতপ্রায়।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগ সাবেক চেয়ারম্যান ম খা আলমগীরের সুপারিশে এসব মন্দঋণ বিতরণ করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনা নিয়ে যে অসন্তুষ্ট ও বিরক্ত, ম খা আলমগীরকে নিয়ে তার মন্তব্যে তা প্রকাশ পেয়েছে। অনেকে বলছেন, ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিনিয়োগকারীদের সম্পৃক্ত করার নতুন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে অনেকেই উপলব্ধি করছেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে যে প্রবল তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে তার অন্যতম কারণ বিদেশে টাকা পাচার। যেকোনো মূল্যে সহজ শর্তে হলেও এই টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার সুযোগ করে দিতে হবে।

    অন্যদিকে যারা নামে-বেনামে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্যাংক ঋণ নিয়ে ফেরত দেয়নি তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে সোনালী, বেসিক, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক খেলাপি ঋণের বোঝায় করুণ পরিণতির মুখোমুখি। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ছিল সুনামের অধিকারী। হঠাৎ করে এখানেও কেন খেলাপি ঋণ বেড়ে গেল তা খুঁজে বের করা জরুরি। এরপর রয়েছে পূবালী ব্যাংক, ইউসিবিএল, এক্সিম ব্যাংক। নতুন বা ফোর্থ জেনারেশনের মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে। এনআরবি ব্যাংকেরও করুণ অবস্থা। ফারমার্স ব্যাংক সরকারের জলবায়ু ফান্ডের ৫০০ কোটি টাকা ফেরত দিতে পারছে না, সেখানে আইসিবিকে ৬০০ কোটি টাকা রাখার চাপ দেওয়া হচ্ছে। তাই নয়, নতুন আরও তিনটি ব্যাংক দেওয়ার তৎপরতা চলছে।

    বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনাই পারেন ব্যাংকিং খাতে সংস্কার করে নিয়মনীতি, স্বচ্ছতার মধ্যে নিয়ে আসতে। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা ৪৭ বছরের ইতিহাসে সেই সফল শাসক, যিনি দেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মহাসড়কে নেননি, স্ব রাজনৈতিক অসন্তোষ, জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল-অবরোধের হাত থেকে দেশের অর্থনীতিকে নিরাপদ রেখেছেন। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনাই পারেন আবারও উন্নয়নশীল দেশের সরকারপ্রধান হিসেবে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটেই নয়, যতটা কমিয়ে আনা যায় উন্নত দেশের সঙ্গে সমতা রেখে ততটা কমিয়ে আনতে। তিনিই পারেন, ব্যবসা ও শিল্পবান্ধব এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে। তিনিই পারেন, একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনার দরজা খুলে দিতে।

    লেখক : প্রধান সম্পাদক, পূর্বপশ্চিমবিডি ডট নিউজ সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close