• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বিমান দূর্ঘটনা : ‘সব রোগীই স্ট্যাবল কিন্তু শঙ্কামুক্ত না’

প্রকাশ:  ১৮ মার্চ ২০১৮, ১৬:৫৫ | আপডেট : ১৮ মার্চ ২০১৮, ১৯:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

নেপালে বিমান দূর্ঘটনায় আহতদের অবস্থা জানাতে গিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন,‘আমাদের একটি মেডিকেল টিম নেপালে কাজ করছে। এছাড়া আমরা এখানে সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম গঠন করেছি। অন্যান্য সংকটের মতো এটা আমরা সফলভাবে মোকাবেলা করছি এবং করব।’

এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন বলেন,‘মেডিকেল টিমের সবাই একে একে সব রোগীকে দেখেছেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ চলছে। রোগীদের মধ্যে একমাত্র শেহরিনেরই অপারেশন করতে হবে। তার মেন্টাল কন্ডিশন আরেকটু স্ট্যাবল হলে আমরা সার্জারিতে যাব।’

সম্পর্কিত খবর

    ‘অন্যরা কনজারভেটিভ ট্রিটমেন্টেই (গতানুগতিক) ভালো হবেন বলে আমরা আশা করছি।’

    সামন্ত লাল আরো বলেন, ‘সব রোগীই স্ট্যাবল আছে, মেডিকেলের ভাষায় আমরা স্ট্যাবল বলি কিন্তু কাউকে শঙ্কামুক্ত বলি না। একটা রোগী যতক্ষণ পর্যন্ত ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে না যায় ততক্ষণ শঙ্কামুক্ত বলা যায় না।’

    রোববার সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ,স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সিরাজুল হক ,জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ফারুক আলম, ।

    সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান,নেপালে ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ আগামীকাল সোমবার দেশে আনা হতে পারে ।

    স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন,‘বিমান দুর্ঘটনায় আহত বেশ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে এবং সেখানে চিকিৎসা চলছে। আমরা এ মুহূর্তে জানতে পেরেছি, শাহীন বেপারি নামের আহত একজন ইতোমধ্যে ফ্লাই করেছেন, তিনি বিকেল নাগাদ ঢাকায় চলে আসবেন। বার্ন ইউনিটে অন্যান্য রোগীর মতো তাকে ভর্তি করা হবে। আগামীকাল সোমবার কবির হোসেন নামে আরেকজন আসবেন। তিনি আজ আসতে পারেননি কারণ তাকে পুরোপুরি শুইয়ে আনতে হবে। কিন্তু আমাদের বিমান তাকে শুইয়ে আনতে প্রস্তুত নয়।’

    ডিজি এসময় উল্লেখ করেন,‘এ মুহূর্তে দুজন রোগী সিঙ্গাপুরে ভর্তি আছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ড. রেজওয়ান ও ইমরানা কবির। তারা দুজনই সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে এখন চিকিৎসাধীন।’ ‘ ইয়াকুব আলী নামে একজন রোগী আজ বিকেল ৪টায় একটি স্পেশাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দিল্লীর অ্যাপোলো হাসপাতালে নেয়া হবে। অভিভাবকদের ইচ্ছাতে সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাকে।’

    আবুল কালাম আজদ আরও বলেন, ‘আমাদের ফরেনসিক চিকিৎসক অধ্যাপক সোহেল নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসে কাজ করছেন। তিনি জানিয়েছেন, গতকাল ৩২টি মরদেহ চিহ্নিত করতে পেরেছেন। এর মধ্যে ১৭ জন বাংলাদেশি, ১৪ জন নেপালের অধিবাসী এক একজন চীনের। বাংলাদেশি ২৬টি মরদেহের মধ্যে আমরা ১৭ জনকে চিহ্নিত করতে পেরেছি। বাকি নয়জনকে এখনও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। তারা ধারণা করছেন ওই নয়জনের মধ্যে তিন থেকে চারজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে ডিএনএ টেস্ট ছাড়াই। যে কয়জনের ডিএনএ টেস্ট লাগবে, তা করা হবে। আমাদের দূতাবাস থেকে নেপাল সরকার বরাবর একটি চিঠি তৈরি করা হচ্ছে। ওই চিঠি দেয়ার পর অনুমতি পেলে তাদের ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা হবে।’

    জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ফারুক আলম বলেন,‘আমরা চারজন রোগীকে দেখেছি, তাৎক্ষণিক যা পেলাম তা হলো- তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা, দুঃস্বপ্ন, ভয়ভীতি- এগুলো কাজ করছে। আমরা তাদের সাইকোলজিক্যাল ফ্রাস্টেড চিকিৎসা দিয়েছি। তাদের দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যা হতে পারে। পোস্ট ট্রমাটিক ডিজঅর্ডার হলে অনেক সময় মানুষের আত্মহত্যার চিন্তা আসে। এজন্য তাদের দীর্ঘমেয়াদি কাউন্সিলিংয়ে রাখতে হবে। এজন্য আমরা তাদের বিস্তারিত ঠিকানা, মোবাইল নম্বর সংগ্রহে রাখব।’

    ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি পাঁচ রোগীর বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে অর্থোপেডিক সার্জারির সহযোগী অধ্যাপক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘শেহরিনের (৩০) ডান পায়ে তিনটি আঙ্গুল ভাঙা আছে। পিঠে স্কিন লস আছে। পায়ে প্লাস্টার করা হয়েছে। মেহেদীর (২৯) হাঁটুতে আঘাত আছে কিন্তু হাড় ভাঙা নেই। আশা করছি দুই সপ্তাহ পর তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন। স্বর্ণার (২২) তেমন কিছু নেই, তার তলপেটে সামান্য আঘাত রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অ্যানির (২২) ডান গোড়ালিতে ব্যথা, কিন্ত হাড় ভাঙা নেই, লিগামেন্টে একটু সমস্যা হয়েছে। রুবায়েতের (৩২) সবই ভাল, বুকের ডানদিকের একটি হাড় ভাঙা।’

    স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সিরাজুল হক খান বলেন, ‘আহত যারা দেশে এসেছেন তারা চিকিৎসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সহযোগিতা পাচ্ছেন।’ গত ১২ মার্চ ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিএস ২১১ নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর দুর্ঘটনায় পড়ে। বিমানবন্দরের এটিসি টাওয়ারের দেয়া ভুল অবতরণ বার্তার জেরে আকাশে অপেক্ষা করতে থাকে বিমানটি। পরে ৬৭ যাত্রী ও চার ক্রুসহ দুপুর ২টা ২০ মিনিটে বিমানটি বিমানবন্দরের পাশের একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয়। এতে অর্ধশতাধিক যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। তাদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি নিহত হন বলে নিশ্চিত করেছে ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ।

    /এ-জেড

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close