• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

মালয়েশিয়া থেকে বৈধ পথে ৬ মাসে ৮১৩ কোটি দেশে প্রেরণ

প্রকাশ:  ১৯ জুন ২০১৮, ২১:১১
আহমাদুল কবির (মালয়েশিয়া)

মালয়েশিয়া থেকে রেমিটেন্স প্রেরণে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের গেলো ৬ মাসে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশি প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছে ২৬৮ কোটি ১ লাখ ৯১ হাজার ৫৫১ রিংগিত যা বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ৮১৩ কোটি ৭৬ লাখ ৪ হাজার ৫১১ টাকা।

চলতি বছরের শুরু থেকে ১৮ জুন ১০১৮ পর্যন্ত এ পরিমাণ রিংগিত মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়াস্থ এন বি এল ও অগ্রণী রেমিটেন্স এর সংশ্লিষ্টরা।

এ দিকে প্রবাসীরা বলছেন অবৈধ পথে এর দ্বী-গুন টাকা পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাঙালিরা হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত, যা বাংলাদেশ সরকারের রেমিটেন্স খাতে গুরুত্বপূর্ণ কুপ্রভাব ফেলছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি ১টি সরকারি ও দুটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা থাকার পরেও হুন্ডিকে সঠিক হিসেবে মনে করছে অনেকে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ ব্যবসার সঙ্গে শতাধিক বাংলাদেশি জড়িত রয়েছে। এদের মধ্যে হন্ডি ব্যবসার শক্তিশালী নেট ওয়ার্ক তৈরি হয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। যা সরকার চেষ্টা করলেও এ সিন্ডিকেট প্রতিহত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রত্যেকটি প্রদেশে রয়েছে তাদের শক্তিশালি নেটওয়ার্ক। এ নেটওয়ার্ক প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ থেকে ৩ কোটি টাকা লেন দেন করে হুন্ডির মাধ্যমে।

বাংলাদেশ দূতাবাস ও রেমিটেন্স হাউজ গুলো বৈধ পথে রেমিটেন্স প্রেরণে সচেতনাতা মূলক সভা সেমিনার করলেও কে শুনে কারকথা। মালয়েশিয়া থেকে ৭০% প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ প্রেরণ করেন। এ ৭০% পার্সেন্টের মধ্যে ৪০ % পার্সেন্ট অবৈধ এবং ৩০% ভিবিন্ন ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন । যারা বৈধ পথে টাকা না পাঠিয়ে হুন্ডির পথ বেছে নিয়েছে। কারন হিসেবে জানা গেছে, এ অবৈধরা বৈধ কাগজ পত্র না থাকাতে পুলিশের ভয়ে হুন্ডি ব্যবসায়িদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে দেশে অর্থ প্রেরণ করছেন।

মালয়েশিয়াস্থ এনবিএল রেমিটেন্স হাউজের চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার শেখ আক্তার উদ্দিন আহমেদ এ প্রতিবেদককে জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত এনবিএলের ৯ টি শাখার মাধ্যমে ২৪৪ কোটি ৭৯ লাখ ১২৫ রিঙ্গিত যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫২১ কোটি ৩৫ লাখ ২ হাজার ৮৩৬ টাকার রেমিটেন্স প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন। আক্তার উদ্দিন বলেন, রেমিটেন্স বৃদ্দির লক্ষে এনবিএলের পক্ষ থেকে আমরা সচেতনতা মূলক সভা- সেমিনার করে যাচ্ছি। আর এ সচেতনতা বাড়াতে আমাদের মান্যবর হাই কমিশনার মহ: শহীদুল ইসলাম দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। মান্যবর হাই কমিশনারের দিক নির্দেশনাই আমরা কজে করে যাচ্ছি। প্রবাসীদেরকে বলা হচ্ছে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানো নিরাপদ এবং এনবিএলের ৯ টি শাখার পাশাপাশি এজেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে যাতে করে এনবিএলের সেবার মান আরোও বৃদ্দি পাবে বলে তিনি মনে করেন।

অগ্রণী রেমিটেন্স হাউজের চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ও ডাইরেক্টর মো: লুৎফুর রহমান বলেন, চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত অগ্রণী রেমিটেন্সের ৬ টি শাখার মাধ্যমে ২৩৭ কোটি ৯৫ লাখ ৩ হাজার ৯৪৬ রিঙ্গিত যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৯৫ কোটি ৩৪ লাখ ১ হাজার৬৭৫ টাকার রেমিটেন্স প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন।

লুৎফুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, বৈধ পথে রেমিটেন্স প্রেরণে সচেতনতামূলক ভিবিন্ন আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসে মান্যবর হাই কমিশনার মহ: শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা হয়েছে। কি ভাবে বৈধ পথে দেশে রেমিটেন্স বাড়ানো যায় মান্যবর হাই কমিশনার দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তার আলোকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং অগ্রণী রেমিটেন্সের ৬ টি শাখার পাশাপাশি এজেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। লুৎফুর রহমান বলেন, মান্যবর হাই কমিশনার ও অগ্রণী রেমিটেন্স হাউজের ডাইরেক্টর দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর মো: সায়েদুল ইসলাম সব সময় রেমিটেন্স প্রবৃদ্দির খোজ খবর রাখছেন। মালয়েশিয়া থেকে রেমিটেন্স আরোও বৃদ্দি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অগ্রণী রেমিটেন্স হাউজের এ কর্মকর্তা।

এ দিকে গত ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশি প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছে ১৭ বিলিয়ন রিংগিত। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক ৩৫ হাজার কোটি টাকা মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার অর্থমন্ত্রী।

২০১৬ সালে মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টে এক সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, মালয়েশিয়ায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের শ্রমিকরা মোট ১১৯ বিলিয়ন রিংগিত পাঁচ বছরে মালয়েশিয়া থেকে তাঁদের দেশে পাঠিয়েছে।

এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ২ বিলিয়ন রিংগিত পাঠায় মালয়েশিয়ার প্রতিবেশী দেশ ইন্দোনেশিয়ান প্রবাসীরা। ১৭বিলিয়ন রিংগিত পাঠিয়ে বাংলাদেশিরা দ্বিতীয় স্থানে আছে। এ ছাড়া নেপালিরা ১৩ দশমিক ২ বিলিয়ন, ভারতীয়রা ছয় বিলিয়ন এবং ফিলিপাইন তিন বিলিয়ন রিংগিত পাঠিয়েছে। এর বাইরে কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশের প্রবাসীরা তাদের দেশে রিংগিত পাঠিয়েছে।

মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন দেশের মোট ২২ লাখ বৈধ প্রবাসী কাজ করছেন। এ ছাড়া আরো প্রায় ২০ লাখ অবৈধ প্রবাসী কাজ করছেন মালয়েশিয়ায়।

ওএফ

রেমিটেন্স
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close