• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

স্বদেশ ভাবনা

মূল্যস্ফীতি কেন ভীতিকর

প্রকাশ:  ২৩ মে ২০১৮, ১৫:১২
আবদুল লতিফ মন্ডল

‘মূল্যস্ফীতির চাপে দেশ' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ১৫ মে যুগান্তরে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির চাপের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, ধাতব পদার্থ ও কৃষিপণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে বন্যাজনিত ফসলহানির প্রভাব পড়ে খাদ্যমূল্যে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে মূল্যস্ফীতির ওপর। এ কারণে অর্থবছরের শুরুতে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করলেও সেখানে থাকতে পারছে না সরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্ফীতি হলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। সবচেয়ে বেশি কষ্টে থাকবে গরিব মানুষ। কারণ তাদের আয় বাড়বে না। কিন্তু ব্যয় বেড়ে যাবে। সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষের জন্য মূল্যস্ফীতি ভীতিকর কেন, তা আলোচনা করাই এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য।

এটা ঠিক, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মূল্যস্ফীতি হ্রাসের প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। ২০০৭-০৮ অর্থবছরের বার্ষিক গড় ৯ দশমিক ৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ২০০৯-১০ অর্থবছরে কমে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩১ শতাংশে (সূত্র : বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০০৯ ও ২০১১)। পরবর্তী দু’-তিন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতিতে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটলেও ২০১৫-১৬ অর্থবছরের এপ্রিল শেষে ১২ মাসের গড়ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়ায় ৬ দশমিক শূন্য শতাংশে, যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ (সূত্র : অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা ২০১৬-১৭)।

মূল্যস্ফীতির নিুগতির মূল কারণ ছিল বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ পণ্যমূল্য হ্রাস। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মার্চে ১২ মাসের গড়ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে (২০১৭-১৮) মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও মূলত অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য উৎপাদন হ্রাস, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধি ও বিদেশ থেকে নজিরবিহীন খাদ্যশস্য আমদানি, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং মার্কিন ডলারের তুলনায় টাকার অবমূল্যায়নের কারণে তা নির্ধারিত হারকে ছাড়িয়ে যাবে।

প্রশ্ন উঠতে পারে, মূল্যস্ফীতি ভীতিকর কেন? নিচে এর প্রধান কারণগুলো আলোচনা করা হল।

এক. মূল্যস্ফীতির অন্যতম প্রধান কারণ খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি। আগের তুলনায় গত দু’-তিন বছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার কমলেও তুলনামূলকভাবে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতির হার বেশি রয়েছে। সর্বশেষ সরকারি তথ্যেও এটা দেখা যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, গত এপ্রিলে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশে দাঁড়ালেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ শতাংশের ওপরে। এর মূল কারণ এক বছর ধরে চালের উচ্চমূল্য।

গত বছর জুনে দেশের কমবেশি ৭০ শতাংশ মানুষের প্রধান খাদ্য মোটা চালের দাম অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে। এক কেজি মোটা চাল বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫২ টাকায়। দাম কিছুটা কমলেও বর্তমানে এক কেজি মোটা চাল ৪০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। শ্রেণীভেদে এক কেজি সরু চালের দাম ৫৬ থেকে ৬৫ টাকা। চাল ছাড়াও শাকসবজি, মাছ, মাংস, মসলা, ফলমূল ইত্যাদির দাম বেড়েছে।

একটি পরিবারে মাসিক যে ব্যয় হয়, তার প্রায় অর্ধেক চলে যায় খাদ্য সংগ্রহে। বিবিএসের প্রাথমিক হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে (এইচআইইএস) ২০১৬ মোতাবেক জাতীয় পর্যায়ে একটি পরিবারের মাসিক মোট ব্যয়ের ৪৭ দশমিক ৭০ শতাংশ খরচ হয় খাদ্যে। গ্রামাঞ্চলে খাদ্যে ব্যয় হয় ৫০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অন্যদিকে শহরাঞ্চলে খাদ্যে ব্যয়ের পরিমাণ ৪২ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

এর অর্থ দাঁড়ায়, গ্রামে বসবাসকারী কমবেশি ৭০ ভাগ মানুষ খাদ্যে বেশি ব্যয় করে। আর সাধারণ মানুষ খাদ্যে যে ব্যয় করে, তার কমবেশি ৮০ শতাংশ চালে। বিআইডিএসের এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী খাদ্য-মূল্যস্ফীতি বাড়লে ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ হতদরিদ্র পরিবারই তখন চালের ভোগ কমিয়ে দেয়। দরিদ্র পরিবারের বেলায় এ হার ৬৬ শতাংশ। তাই মোটা চালের দাম উচ্চহারে বৃদ্ধি পেলে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়ে।

শুধু দরিদ্র ও হতদরিদ্ররা নন, চালের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত হন মধ্যবিত্ত ও নিুমধ্যবিত্তরাও, বিশেষ করে যাদের আয় নির্দিষ্ট। চালের দামে ঊর্ধ্বগতির কারণে মধ্যবিত্ত ও নিুমধ্যবিত্তদের মাছ, মাংস, ডিম, দুধ অর্থাৎ আমিষজাতীয় খাবার কেনা অনেকটা কমিয়ে দিতে হয়। এতে তাদের পরিবারে, বিশেষ করে শিশু ও মহিলাদের পুষ্টির অভাব ঘটে। এতে অবনতি ঘটে তাদের স্বাস্থ্যের। তাছাড়া এসব পরিবারকে কমিয়ে দিতে হয় শিক্ষা খাতে ব্যয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিক্ষার্থীরা। সংকুচিত করতে হয় তাদের পরিবারের স্বাস্থ্য খাতের ব্যয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই খাদ্যে, বিশেষ করে চালের মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের কাছে ভীতি হয়ে দেখা দেয়।

দুই. এইচআইইএস-২০১৬ মোতাবেক খাদ্যবহির্ভূত খাতেও ব্যয় বেড়েছে। এতে দেখা যায়, জাতীয় পর্যায়ে একটি পরিবারের মাসিক মোট ব্যয়ের ৫২ দশমিক ৩০ শতাংশ ব্যয় করতে হয় খাদ্যবহির্ভূত খাতে, এইচআইইএস ২০১০-এ যার পরিমাণ ছিল ৪৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। শহরাঞ্চলে এ ব্যয় গ্রামাঞ্চলের তুলনায় বেশি। শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলে এ ব্যয়ের পরিমাণ যথাক্রমে ৫৭ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং ৪৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। এইচআইইএস-২০১৬ মোতাবেক কাপড়চোপড়, বাসস্থান ও বাড়িভাড়া, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, গৃহস্থালি দ্রব্যাদি, চিকিৎসা এবং বিবিধ খাতে জাতীয় পর্যায়ে একটি পরিবারের মাসিক মোট ব্যয় যথাক্রমে ৭ দশমিক ১২, ১২ দশমিক ৪৩, ৬ দশমিক ০৭, ২ দশমিক ৯৩, ৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ, যা এইচআইইএস ২০১০-এ ছিল ৪ দশমিক ৯৫, ৯ দশমিক ৯৩, ৫ দশমিক ৬৩, ১ দশমিক ৬৮, ৩ দশমিক ৭৯ এবং ১৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এ বৃদ্ধিতে মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তিন. এইচআইইএস ২০১৬-এর প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের তুলনায় সর্বশেষ ছয় বছরে (২০১১-২০১৬) দেশে জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্য হ্রাসের গতি কমেছে। বিবিএসের তথ্য মোতাবেক, জাতীয় পর্যায়ে ২০০০ সালের দারিদ্র্যের হার ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে কমে ২০০৫ সালে দাঁড়ায় ৪০ শতাংশে। প্রতি বছর গড়ে দারিদ্র্য হ্রাসের হার ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার কমে জাতীয় পর্যায়ে দাঁড়ায় ৩১ দশমিক ৫ শতাংশে। অর্থাৎ ২০০৫-পরবর্তী ৫ বছরে প্রতি বছর গড়ে দারিদ্র্য কমে ১ দশমিক ৭ শতাংশ হারে। ২০১৬ সালে জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্যের হার দাঁড়ায় ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে। এতে ২০১০-পরবর্তী প্রতি বছর গড়ে দারিদ্র্য হ্রাসের হার দাঁড়ায় ১ দশমিক ২ শতাংশে।

দারিদ্র্য হ্রাসের হার নিুমুখী হওয়ার জন্য যেসব কারণকে মূলত দায়ী করা হয় সেগুলো হল- দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি এবং দারিদ্র্য হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী কৃষিতে প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস, বেকারত্বের বিশেষ করে যুব বেকারত্বের হার বৃদ্ধি, প্রতিবছর নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নিুমধ্যম শ্রেণীর মানুষসহ অনেকের দারিদ্র্য শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্তি, শিক্ষা, সচেতনতা ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বংশপরম্পরায় দারিদ্র্য চক্রের মধ্যে আবর্তন এবং ধনী-দরিদ্রের আয়বৈষম্য বৃদ্ধি। সরকারি হিসাব মতে, দেশে এখনও কমবেশি ৪ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে এবং এদের একটি অংশ চরম দরিদ্র। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) প্রতিবেদন ২০১৪-এ বলা হয়েছিল, চরম দরিদ্র মানুষের সংখ্যায় বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। বিশ্বের চরম দরিদ্র মানুষের মধ্যে ৫ দশমিক ৩ শতাংশই বাংলাদেশে বাস করে। মূল্যস্ফীতি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের জীবনে চরম দুর্ভোগ বয়ে আনে।

চার. ক্রয়ক্ষমতার অভাব এবং মূল্যস্ফীতির কারণে নিুবিত্ত ও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী বিরাট জনগোষ্ঠী পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ কিনতে পারে না। রমজানে শাকসবজিরও দাম বেড়েছে। ২০ মে দৈনিক ইত্তেফাকের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘বাজারে বেগুন কিনতে গেলে কেজি ৮০ টাকা, শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৬০ থেকে ৭০ টাকা।

শুধু এ সবজিগুলো নয়, প্রতিটি সবজির দাম বেড়েছে।’ দাম বাড়ায় এখন তারা প্রয়োজনীয় শাকসবজিও কিনতে পারছে না। ফলে তাদের, বিশেষ করে শিশু ও নারীদের অপুষ্টির মাত্রা আরও বেড়ে যাচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ৪১ দশমিক ৩ শতাংশই অপুষ্টির শিকার। এছাড়া ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। অন্যদিকে ১৫-৪৯ বছর বয়সী ২৪ দশমিক ২ শতাংশ নারী অপুষ্টির শিকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির এক জরিপে দেখা গেছে, অপুষ্টির কারণে পাঁচ বছর বয়সের কম বয়সী শিশুরা খর্বাকৃতি হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্বে পুষ্টিমানে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে এ অবস্থার আরও অবনতি ঘটবে।

এসব কারণে জনগণের কাছে মূল্যস্ফীতি ভীতিকর। তাই জনগণকে বিশেষ করে চরম দরিদ্র, দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দানের জন্য প্রয়োজন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা এবং খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে স্থিতিশীল রাখা। প্রথমে প্রয়োজন কৃষি খাতের নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধির হারকে ঊর্ধ্বমুখী করা। ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরের কৃষি খাতের ৬ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার (সূত্র : Bangladesh Economic জবারবি ২০০৫) কমে গত অর্থবছরে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৬ শতাংশে (সূত্র : অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা ২০১৬-১৭)।

সার্বিক কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির হার ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শস্য উপখাত। দেশে প্রধান খাদ্যশস্য চাল চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন না হওয়ায় আমরা চালে আমদানিনির্ভর হয়ে পড়ছি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের ১৬ মে পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি খাতে উচ্চমূল্যে চাল আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৮ লাখ ৪৬ হাজার টনের ওপরে, যা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। চালের নজিরবিহীন মূল্যবৃদ্ধি সার্বিক মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে।

তাছাড়া বর্তমানে কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদক ও ক্রেতার মধ্যে দামের একটা বড় পার্থক্য দেখা যায়। ক্রেতারা, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ শহরাঞ্চলের ক্রেতারা ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। গ্রামে উৎপাদক পর্যায়ে এবং শহরে ক্রেতা পর্যায়ে দামে বিরাট পার্থক্য অনেকদিন ধরেই চলে আসছে। বিপণন ব্যবস্থায় সংস্কার ও উন্নয়নের মধ্য দিয়ে এ অবস্থার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা যেতে পারে। বাজার নিয়ন্ত্রণে ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইন পাস হলেও এটি এখন পর্যন্ত পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। বিষয়টিতে সরকারের আশু দৃষ্টি প্রয়োজন।

বেশ কয়েক বছর জ্বালানি তেলের দাম কম থাকার পর বাড়তে শুরু করেছে। জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পরিবহন খাতে। এ অবস্থায় দেশীয় কয়লার উৎপাদন বাড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করতে হবে। এতে জ্বালানি তেলের চাহিদা কমে যাবে। পরিবহন খাতে গ্যাসের ব্যবহার বাড়াতে হবে। গৃহস্থালি কাজে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখতে হবে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায়, জাতীয় নির্বাচনের বছরে সরকার রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে গৃহস্থালি কাজে নতুন করে গ্যাস সংযোগ দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে। এটা করা ঠিক হবে না।

উপর্যুক্ত ব্যবস্থাদিসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়া হলে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী হার রোধ করা অনেকটা সম্ভব হবে। এতে জনগণ, বিশেষ করে নিুবিত্ত এবং দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ কমবে।

আবদুল লতিফ মন্ডল : সাবেক সচিব, কলাম লেখক

[email protected]

মূল্যস্ফীতি,ভীতিকর
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close