• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবই চূড়ান্ত করছে ডিএসই

প্রকাশ:  ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৩:৫২
পূর্বপশ্চিম ডেস্ক

কৌশলগত বিনিয়োগকারী বাছাই সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আজ দুপুরের পর পরিচালনা পর্ষদের সভা আহ্বান করেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। রেগুলেটরি অনুমোদনের জন্য সভার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে পাঠানোরও প্রস্তুতি নিচ্ছে স্টক এক্সচেঞ্জটি। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, সভায় চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবই চূড়ান্ত করা হবে।

ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, প্রস্তাবিত দরের বিষয়টি আপনারা জেনেছেন। আমরা দুই কনসোর্টিয়ামের গঠন ও তাদের প্রস্তাবের প্রতিটি পয়েন্ট খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করেছি। সবদিক বিবেচনা করে আমরা দেখছি, চীনা কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাব সবদিক থেকেই ডিএসইর উন্নয়নে বেশি ফলপ্রসূ হবে। স্টক এক্সচেঞ্জের সব স্তরের সদস্যই শেনঝেন সাংহাই কনসোর্টিয়ামকে বেছে নিতে চায়। পর্ষদের অন্য সদস্যদের মধ্যেও দ্বিমত চোখে পড়ছে না।

সম্পর্কিত খবর

    দুই কনসোর্টিয়ামের তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপন করে তিনি বলেন, চীনা কনসোর্টিয়াম বেশি দরপ্রস্তাবের পাশাপাশি স্পষ্ট করে জানিয়েছে, তারা ১০ বছর ডিএসইকে বিনামূল্যে বিভিন্ন টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেবে, যার ভ্যালুয়েশন হয়েছে ৩০০ কোটি টাকার বেশি। অন্যদিকে এনএসইর নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামের গঠন পর্যালোচনা করলে দেখবেন, এনএসই নিজেও এর অংশ না। তাদের একটি সাবসিডিয়ারি এখানে বিড করছে। এর ওপর তারা নিজেদের রেগুলেটরের অনুমোদন নেয়নি। আমরা কেন এ অনিশ্চয়তায় যাব, যেখানে চীনারা রেগুলেটরি অনুমোদন নিয়েই বিড করেছে।

    দ্বিতীয় পয়েন্ট হলো, এনএসই কনসোর্টিয়ামে নাসডাকের নাম উঠে এলেও তারা কিন্তু ডিএসইর ইকুইটি পার্টনার হচ্ছে না। ডিএসই এখানে নাসডাককে নিছক টেকনোলজি ভেন্ডর হিসেবেই দেখছে। কারণ ডিএসইকে দেয়া টেকনিক্যাল সাপোর্টের জন্য তারা কোনো ফি নেবে না, এমন কথা কোথাও বলা হয়নি।

    স্টক এক্সচেঞ্জটির সাবেক এ সভাপতি আরো বলেন, এনএসই কনসোর্টিয়ামের আরেকটি দিক নিয়েও আমাদের বেশির ভাগ সদস্য নেগেটিভ, তা হলো প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ড ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ এলএলপি। এক্সিট রুট নিয়ে তাদের অতি সচেতনতা আমাদের দুশ্চিন্তার কারণ। এছাড়া এ ফান্ডটি পরিচালনা করছে ব্রামার অ্যান্ড পার্টনারস, যাদের নাম প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত। তাদের রেপুটেশন নিয়েও আমরা সন্তুষ্ট না।

    ডিএসইর সিনিয়র সদস্য ও ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেকেরও একই মত। তিনি বলেন, সবদিক থেকেই চীনাদের প্রস্তাব স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য বেশি আকর্ষণীয়। সেটি দরেও, কৌশলগত বিনিয়োগের অন্যান্য দৃষ্টিকোণ থেকেও। চীনাদের কাছ থেকে সন্তোষজনক প্রস্তাব পাওয়ায় সদস্যদের পক্ষ থেকে আমরা ডিএসই ম্যানেজমেন্টকে অ্যাপ্রিসিয়েশন লেটার দিয়েছি। আপনারা জানেন, কত কষ্ট করে আমরা কৌশলগত বিনিয়োগকারী খুঁজেছি। সেরা প্রস্তাব দেয়ার পরও আমরা যদি তাদের বেছে নিতে ব্যর্থ হই, তাহলে বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের কাছে আমাদের সম্পর্কে একটি নেতিবাচক বার্তা যাবে।

    আশা করছি, কাল (সোমবার) পর্ষদ সভায় ডিএসইর পর্ষদ চূড়ান্তভাবে চীনাদের প্রস্তাব বেছে নিতে সক্ষম হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, নিয়ন্ত্রকরাও বাজারের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ বিবেচনা করে এখানে দ্বিমত করবেন না।

    উল্লেখ্য, ৬ ফেব্রুয়ারি কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের প্রস্তাবসংবলিত টেন্ডার বাক্স উন্মোচন করে ডিএসই। সেখানে দেখা যায়, প্রায় ১ হাজার কোটি টাকায় দেশের প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জটির এক-চতুর্থাংশ শেয়ার কিনতে চায় শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের যৌথ কনসোর্টিয়াম। কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে ডিএসইর প্রতি শেয়ারের জন্য তারা দরপ্রস্তাব করে ২২ টাকা। এ হিসাবে তারা ডিএসইর ১৮০ কোটি শেয়ারের এক-চতুর্থাংশ বা ৪৫ কোটি শেয়ারের জন্য প্রায় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। পর্ষদে তাদের একজন পরিচালক রাখার প্রস্তাব রয়েছে। প্রস্তাব অনুসারে, কৌশলগত অংশীদার হতে পারলে এ বিনিয়োগকারীরা ১০ বছর ডিএসইকে প্রযুক্তি ও কৌশলগত সহায়তা দেবে, যার আর্থিক মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

    বিপরীতে প্রায় একই পরিমাণ শেয়ার কেনার জন্য ১৫ টাকা হারে দরপ্রস্তাব করে ভারতীয় ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের (এনএসই) নেতৃত্বাধীন বিনিয়োগকারীদের আরেকটি কনসোর্টিয়াম। সেখানে ইকুইটি পার্টনার হিসেবে রয়েছে ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স পরিচালিত প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ড ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ এলএলপি আর টেকনোলজিক্যাল পার্টনার হিসেবে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক্সচেঞ্জ জায়ান্ট নাসডাক। এ গ্রুপটি ডিএসইর ২৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শেয়ারের জন্য ১৫ টাকা হারে দরপ্রস্তাব করে। তাদের কাছ থেকে ডিএসই ৬৭৫ কোটি টাকার কিছু বেশি পেতে পারে, যা চীনাদের প্রস্তাবিত দরের চেয়ে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কম।

    এর পর দরপত্রে পিছিয়ে পড়া কনসোর্টিয়ামের আইনবহির্ভূত তত্পরতার জেরে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠাতে দেরি করেছে বলে জোর অভিযোগ উঠেছে। কৌশলগত বিনিয়োগকারী বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় স্টক এক্সচেঞ্জ কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছে খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিরুদ্ধেও।

    উল্লেখ্য, ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩ অনুসারে মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক করার পর স্টক এক্সচেঞ্জের ২৫ শতাংশ শেয়ার কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনক্রমে এ হার বাড়ানো যেতে পারে। কৌশলগত বিনিয়োগকারী বলতে আইনে সেসব প্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়েছে, যারা ইকুইটি বা টেকনোলজিক্যাল পার্টনার হিসেবে পর্ষদে থেকে ডিএসইকে একটি আধুনিক এক্সচেঞ্জে উন্নীত করতে সাহায্য করবে। তাদের সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেবে নীতিনির্ধারকরা।

    দেশের প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর বর্তমান অনুমোদিত মূলধন ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪৫ কোটি শেয়ার বিক্রির বাধ্যবাধকতা আছে এক্সচেঞ্জটির।

    প্রসঙ্গত, এর আগে গত বছরের ১ জুন খোলা দরপত্রে ডিএসইর প্রতিটি শেয়ারের জন্য ৩০ টাকার বেশি দরপ্রস্তাব করেছিল লংকাবাংলা ফিন্যান্স ও ডেল্টা লাইফের নেতৃত্বাধীন একটি স্থানীয় কনসোর্টিয়াম। কারিগরি সমর্থনের জন্য তারা ভারতের বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছিল। সে দফায় ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্সের নেতৃত্বাধীন বিদেশী কনসোর্টিয়ামটি ডিএসইর এক্সচেঞ্জ ব্যবসাটিকে আলাদা করে শুধু এর শেয়ার কেনার জন্য দরপ্রস্তাব করেছিল। তবে ডিএসইর সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য ও পর্ষদের অনিচ্ছায় কোনো প্রস্তাবই গৃহীত হয়নি। স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের আবেদনক্রমে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের কৌশলগত বিনিয়োগকারী খোঁজার জন্য সময় বাড়িয়ে দেয়। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগ সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে স্টক এক্সচেঞ্জটিকে।

    একই আইনের বাধ্যবাধকতায় দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জও (সিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী খুঁজছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত চীনা কনসোর্টিয়াম ও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আরেক দল বিনিয়োগকারীর সঙ্গে তাদের আলোচনা এগিয়েছে।

    সূত্র: বণিক বার্তা

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close