• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

অবৈধ গর্ভপাত: কারণ ও প্রতিকার

প্রকাশ:  ২৩ জুন ২০১৮, ২১:৪৭
মাইমুনা ইসলাম মৌ

'মাতৃত্ব' একজন নারীর জীবনের বহু আকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত।কিন্তু কখনও কখনও এই আকাঙ্ক্ষিত মুহূর্তগুলো রূপ নেয় ভয়ঙ্কর অনাকাঙ্ক্ষিত মুহূর্তে। মাগুরা জেলার একজন রাজনৈতিক নেতা এক স্কুলশিক্ষিকাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেন।পরবর্তীতে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে গর্ভপাতে বাধ্য করেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। পরবর্তীতে সেই স্কুলশিক্ষিকা পুলিশের শরনাপন্ন হন। এরকম ঘটনাএখন পত্রিকার পাতায় প্রতিদিনই দেখা যায়।

সম্পর্কিত খবর

    ধর্ষনের ব্যাপারগুলো প্রায়শই বহুল আলোচিত হলেও জোরপূর্বক গর্ভপাতের মতো স্পর্শকাতর ঘটনাগুলো থেকে যাচ্ছে দৃষ্টির আড়ালেই। এনিয়ে মামলাও খুব বেশি হয়না।

    গর্ভপাত বিষয়টি মাতৃত্বজনিত হলেও অবৈধ গর্ভপাত একটি গুরুতর অপরাধ। দন্ডবিধি -১৮৬০ এর ৩১২-৩১৬ অনুযায়ী গর্ভপাত একটি দণ্ডনীয় অপরাধ।

    কেবলই যে ধর্ষনের শিকার হওয়া গর্ভবতী মায়েদের জোরপূর্বক গর্ভপাত করানো হচ্ছে, ব্যপারটি তেমননা।

    অবৈধ গর্ভপাতের কারণ নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীরা বর্তমানে ভ্রূণ হত্যার ৪টি প্রধান কারণ উল্লেখ করেন। যথাঃ অধিক বয়সে বিয়ে, অসচেতন অভিভাবক ও কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ততা, সংসারে অশান্তি ও ঝগড়া-বিবাদ , অনিরাপদ অবৈধ দৈহিক সম্পর্ক।

    গর্ভধারণের প্রথম ১২ সপ্তাহের মধ্যে যদি গর্ভপাত করানো হয়, তাহলে তা সাধারণত ঝুঁকিহীন হয়। ১৯৭৩ সালে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে Roe vs. Wade মামলার মাধ্যমে গর্ভপাতকে বৈধকরাহয় শুধুমাত্র মাতৃত্বজনিত ক্ষেত্রে।

    কিন্তু এখনও চিলি, নিকারাগুয়া, এলসালভাদোর, মালটা, ভাটিকান, ডমিনিকান রিপাবলিক-৬টি দেশে গর্ভপাত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

    ১২ সপ্তাহের মধ্যে বৈধভাবে গর্ভপাত করানোর পদ্ধতিকে এম. আর অথবা মেনস্ট্রুয়ালরেগুলেশন বলা হয়।

    কিন্তু অনেক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ১২ সপ্তাহের অধিক গর্ভবতী মায়েদের এম. আর এর নামে অবৈধ গর্ভপাত করানো হয়। তারা গর্ভপাতকে ব্যবহার করেন টাকা কামানোর হাতিয়ার হিসেবে।

    দেশের বেসরকারী টেলিভিশনের এক প্রতিবেদনে লাইফ কেয়ার নার্সিং হোমসহ আরো অনেক হাসপাতালের এরকম অসামঞ্জস্যপূর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয়। সাধারণত ১২ সপ্তাহের পর গর্ভপাত ঘটানো হলে, গর্ভবতী মায়েরা প্রচণ্ড স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন।

    অবৈধ গর্ভপাতের ফলে পঞ্চাশ শতাংশ প্রসূতি নারী মারা যান। এছাড়াও অনেকে ভোগেন নানারকম রোগে। এম.আর অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারদের মাধ্যমে করানো উচিত।

    অসচেতনতার কারণে অনেকেই মনে করেন যে গর্ভপাত পুরোপুরি অবৈধ।তাই তারা অভিজ্ঞ ডাক্তার অথবা প্র্যাকটিশিয়ানের কাছে না যেয়ে দালালের শরণাপন্ন হন।

    বাংলাদেশে ৩টি শর্তে গর্ভপাত বৈধ। যথাঃ শুধুমাত্র মায়ের জীবনবাঁচাতে গর্ভপাত করার নির্দেশ আছে, এম.আর গর্ভধারণ এর ১২সপ্তাহের মধ্যে করতে হবে, গর্ভপাতের জন্য অবশ্যই মায়ের অনুমতি প্রয়োজন।

    বিষয়গুলোর প্রতি সবাইকে সচেতন করতে হবে।

    বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক রিপোর্ট বলছে বছরে পাঁচ কোটি ষাট লাখ নারীর গর্ভপাত হচ্ছে, যা আগের চেয়ে অনেক বেশি।

    গুটম্যাকার ইন্সটিটিউট এর তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে সরকারিভাবে এম.আর এর সেবা দেয়া হয় মাত্র৫৩%, যেটা পূর্বের তুলনায় কমেছে।

    যথাযথ মহলের জোর নজরদারি ও সর্বোপরি জনসচেতনতা নিশ্চিত করা গেলে

    অবৈধ গর্ভপাতের হার আরো কমবে বলে আশা রাখা যায়।

    লেখকঃ ছাত্রী,২য় সেমিস্টার, ৩য় বর্ষ, ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স ডিপার্টমেন্ট, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,টাঙাইল।

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close