সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে ‘এইচএসএফ’
আল আমিন। বয়স ১০ কি ১২। এই বয়সে তার থাকার কথা ছিলো বিদ্যালয়ে। অজানাকে জানার আগ্রহ নিয়ে হাতে থাকার কথা ছিল বই। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক এর উল্টো। প্রতিদিন সকাল থেকেই তার পথচলা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। তার এই পথচলার কারণ ফুল, পানি আর চকলেট বিক্রি করা। তাই স্কুলে যাওয়ার সময় তার নেই। দারিদ্রের কষাঘাতে ১০ বছরের শিশুটিকে তার পরিবার কাধে তুলে দিয়েছে সংসার চালানোর কঠিন ভার।
আল-আমিনের সাথে ফুল বিক্রি করা এরকম হাজারো সুবিধাবঞ্চিত শিশু রয়েছে রাজধানীসহ সারাদেশে। জীবন ধারণের মৌলিক চাহিদা থেকে একেবারেই তারা বঞ্চিত। অথচ এইসব শিশুদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন গল্প, ভিন্ন ভিন্ন স্বপ্ন।
সম্পর্কিত খবর
কিন্তু ‘সেই গল্প আর স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায় সুযোগের অভাবে। আর সেই সুযোগটি হচ্ছে শিক্ষার সুযোগ। যার মাধ্যমে নিজের আলোয় আলোকিত হবে প্রতিটি সুবিধাবঞ্চিত শিশু। কিন্তু ‘সেই সুযোগটা করে দিতে পারি আমরাই। আমার-আপনার দেয়া সুযোগেই এইসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা আসবে সমাজের মূল স্রোতোধারায়। সেই সুযোগ ব্যবহার করে এদের মধ্য থেকেই ভবিষ্যতে তৈরী হবে দেশ গড়ার কারিগর।
আর সে লক্ষ্যেই হিউম্যান সেফটি ফাউন্ডেশন (এইচএসএফ) ২০০৯ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সমাজের মূল স্রোতোধারায় নিয়ে আসতে। আর এ লক্ষ্যে ঢাকা শহরের ফুলবাড়ি রেল কলোনী, হাইকোর্ট মোড়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ওসমানী উদ্যানে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য বৃক্ষমায়া শিশু বিকাশ কেন্দ্র নামে স্কুল পরিচালনা করে আসছে।
সেখানে ১৩০ জন শিশু নিয়মিত লেখাপড়া করছে। এর সাথে তাদের মানসিক বিকাশে নেয়া হয় সাংস্কৃতিক ক্লাস। এছাড়া মাসে একবার বৈঠক করা হয় এসব শিশুদের অভিভাবকদের সাথে।
এছাড়া সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিষয়ে সচেতনতা তৈরী করতে #SupportUnderprivilegedChildren নামে একটি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে এইচএসএফ।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের যেখানে তিন বেলা খাবার পাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়, সেখানে রমযানে ভালো ইফতার করা স্বপ্ন বৈকী। কিন্তু ‘১৩০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুর সেই স্বপ্ন ধরা দিল গত শনিবার (২ জুন)। দিন হিউম্যান সেফটি ফাউন্ডেশন (এইচএসএফ) এইসব শিশুদের জন্য রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজন করে ইফতার মাহফিলের। যেখানে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশাপাশি অংশ নেয় তাদের অভিভাবকরাও। আর ইফতারের আগে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয় ঈদের নতুন জামা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক, চ্যানেল ২৪এর নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন, ইউনিসেফের প্রোগ্রাম কমিউনিকেশনস স্পেশালিস্ট সাইদ মিল্কী, আইসিডিডিআরবির মিডিয়া ম্যানেজার তারিফ খান, চলচিত্র অভিনেতা এবিএম সুমনসহ এইচএসএফের চেয়ারম্যান এম এ মুকিত, ভাইস চেয়াম্যান ফয়সাল আজিজ, প্রধান নির্বাহী বোরহানুল আশেকীন, নির্বাহী কমিটির সদস্যসহ বৃক্ষমায়া শিশু বিকাশ কেন্দ্রের শিক্ষক এবং স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ।