• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ঢাবির সেই মেধাবি রিমি এখন...

প্রকাশ:  ১১ ডিসেম্বর ২০১৭, ১১:৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক

স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই বিতার্কিকের দেশ সেরা পুরস্কার অর্জন করে রিমি নাহরিন। চঞ্চল আর তুখোড় বিতার্কিক হওয়ায় ব্যাংকার বাবা ও শিক্ষিকা মা সিদ্ধান্ত নেন তাদের একমাত্র সন্তানকে ব্যারিস্টার বানাবেন। রিমির ভাষায় ‘স্কুলে থাকতে যখন আমি বিতর্ক করতাম কিংবা আবৃত্তি করতাম তখন আমার বাবা বলতেন আমার মেয়েকে ব্যারিস্টার বানাব। কারণ, ও খুব সুন্দর করে কথা বলে, ভাল বির্তাকিক, রেজাল্ট ভাল। সেই থেকে আমিও মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই ব্যারিস্টার হবার।

বাবা-মায়ের ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দিতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন রিমি। এলএলবিতে মেধার স্বাক্ষর রেখে অনার্স পাশ করে মাস্টার্সে ফাস্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। সেরা শিক্ষার্থীর স্বীকৃতি হিসেবে পান গোল্ড মেডেল। এরপর স্বপ্ন পূরণের জন্য চলে যান লন্ডনে। সেখানে ব্যারিস্টারি পড়ার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে চাকরি নেন বিশ্বের নামকরা গণমাধ্যম বিবিসির বাংলা বিভাগে। বিবিসিতে আন্তর্জাতিক ও খেলাধুলার খবর পড়তেন তিনি। ইথারে ভেসে আসতো ‘বিশ্ব সংবাদ পড়ছি আমি রিমি নাহরিন’। এরপর ব্যারিস্টারি পড়া শেষে দেশে ফিরে এসে আইন পেশায় মনোনিবেশ করেন তিনি।

সম্পর্কিত খবর

    রিমি নাহরিনের ব্যক্তিগত ও অপরাপর বিভিন্ন বিষয় সাক্ষাতকারের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো।

    আপনার শৈশব- কৈশোর- লেখাপড়া…

    রিমি নাহরিন: আমার বাবা মুস্তাক আহমেদ হেলাল ন্যাশনাল ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। মা হোসনে আরা বেগম বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। এর মধ্যে ভিকারুন নিসা নূন স্কুলে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি তাদের একমাত্র সন্তান। ছোট বেলা থেকে বাবা-মায়ের আগ্রহ ছিল তাদের সন্তানকে মনের মত করে গড়ে তোলার। একজন সার্থক মানুষ হিসেবে যেন বড় হতে পারি, সেই ইচ্ছা তারা লালন করতেন। সবাই যেন একবাক্যে বলতে পারেন একজন সফল মানুষ হিসেবে সন্তান গড়ে উঠেছে। আমি প্রথমে রাইফেলস পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে পড়াশুনা শুরু করি। মা তখন ওই স্কুলে ছিলেন।

    মা যেহেতু ওই স্কুলের টিচার, সেহেতু স্কুলেও মায়ের একটা গাইডেন্স সবসময় থাকতো। অন্যান্য শিক্ষকও আমাকে খুব স্নেহ করতেন। ক্লাসে বরাবরই আমি পড়াশোনায় খুব ভাল ছিলাম। বরাবরই স্কুলে আমার খুব ভাল ফলাফল ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি স্কুলের অন্যান্য একটিভিটিসে সব সময় অংশ নিতাম। খেলাধুলা, গানবাজনা, বিতর্ক, তেলাওয়াত সব কিছুতেই অংশ নিতাম। আমার মায়ের কথা ছিল তুমি সব কিছুতেই অংশগ্রহণ করো, তাতে কনফিডেন্সটা বাড়বে। পুরস্কার যে পেতে হবে তা নয়। অংশ নিলে সাহস বাড়বে। বাসাতেও গানের টিচার ছিল। এরপর বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নজরুল সংগীতে ভর্তি হই। সেখানে পাঁচ বছরের পুরো কোর্সটা করি। পড়াশোনার পাশাপাশি গানটা চলতো। পড়াশোনা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেই সময় গানটাও আমার কাছে একই রকমের গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি বাফা থেকে গানের জন্য প্রাইজও পেয়েছি। আমাদের রাইফেলস পাবলিক স্কুল থেকে জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। দেশের সেরা বির্তাকিকদের মধ্যে আমি পুরস্কারও পেয়েছি। এই ক্রেডিট অবশ্যই আমার বাবা-মায়ের। আমি রাইফেলস পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে স্টার মার্কস নিয়ে ১৯৯৪ সালে এসএসসি পাশ করি। ১৯৯৬ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাশ করি। এইচএসসিতে আমি স্কলারশিপ পাই। যেটা আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ওই সময়ে আর কেউ পায়নি।

    বাবা-মা তো ভিন্ন পেশার মানুষ। তাহলে কিভাবে ব্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন মনে জাগলো?

    রিমি নাহরিন: স্কুলে থাকতে যখন আমি বিতর্ক করতাম কিংবা আবৃত্তি করতাম তখন আমার বাবা বলতেন আমার মেয়েকে ব্যারিস্টার বানাব। কারণ, ও খুব সুন্দর করে কথা বলে, ভাল বিতার্কিক, রেজাল্ট ভাল তাই আমার মেয়েকে আমি ব্যারিস্টার বানাব। সেই থেকে আমিও মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই ব্যারিস্টার হবো। শুনতে অনেক বড় কিছু মনে হতো বা স্বপ্নের মত মনে হতো যে, আমি ব্যারিস্টার হবো। সেই থেকে আমার ভেতরে আইন পড়ার একটা আগ্রহ গড়ে উঠে।

    স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যাওয়ার গল্প শুনতে চাই…

    রিমি নাহরিন: এইচএসসি পাশের পর আমি জানতে পারলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে সব ভাল স্টুডেন্টরা ভর্তি হয়। ভর্তি হওয়াটা খুব কষ্টের। আমার বাবা-মাসহ পরিবারের সবাই ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করেছেন। তাদের সন্তান হিসেবে আমি ঢাবিতে ভর্তি হবো- এটা স্বাভাবিকই ছিল। ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। কিন্তু বেশ ভয়ে ছিলাম যদি ল’তে চান্স না পাই তাহলে আমার কি হবে? আমার তো ইচ্ছা ব্যারিস্টার হওয়ার। ল পড়া ছাড়া আমি সেকেন্ড অপশন চিন্তাও করতে পারতাম না। যাই হোক ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট আমার ভাল হল। খ ইউনিটে ১৬ তম স্থান করে নিলাম। আইনে ভর্তি হতে আর কোন বাধা থাকলো না। আইন বিভাগে সম্ভবত আমার পজিশন ৪ ছিল। আমার পরিবারে আমিই প্রথম আইন নিয়ে পড়া শুরু করলাম। আইন বিভাগে পড়তে গিয়ে আমার মনে হয়েছে যেহেতু আমিই প্রথম পড়ছি সেহেতু আমার রেজাল্ট অবশ্যই ভাল হতে হবে। ভাল করতে হবে।

    আমার অনেক বন্ধুকে দেখেছি তাদের কারো বাবা লইয়ার বা মা লইয়ার বা পরিবারের অন্য সদস্য লইয়ার। তারা আইনের কিছু বিষয় সহজেই বুঝে ফেলতো। কিন্তু আমাকে সেটা বুঝতে হতো পরিশ্রম করে। অনেক পড়ে বা শিক্ষকদের সহায়তা নিয়ে। আমার তখন মনে হল আমাকে এই জিনিসটা ওভারকাম করতে হবে। আমার পরিবারে কেউ আইন পেশায় নেই, তাকে কি, আমার কোন অসুবিধা নেই; আমি একাই এটা করতে পারবো। ওই যে আমার ভেতরে তখন পড়ার একটা আগ্রহ তৈরি হল যে, আমাকে পারতে হবে। আমি যে পারি এই জিনিসটা আমাকে দেখিয়ে দিতে হবে। তার থেকে বড় বিষয় আমাকে নিয়ে আমার বাবা-মায়ের একটা স্বপ্ন আছে। আমি তাদের একমাত্র সন্তান তারা যেহেতু চান, আমাকে ব্যারিস্টার হতেই হবে। আমার মধ্যে একটা মোটিভেশন কাজ করতো। আমাদের ৪ বছরের অনার্স কোর্স ছিল। প্রত্যেক বছরই আমার রেজাল্ট ভাল ছিল। ফোর্থ ইয়ারে এসে যেটা হয়, ল ডিপার্টমেন্টের মধ্যে যারা ভালো স্টুডেন্ট তাদের একটা ল ক্লিনিক গঠন করা হয়। ল ক্লিনিকে মুথ ট্রায়াল বা কোর্টে কীভাবে প্র্যাকটিস করতে হয়, কি কি প্রসিডিং থাকে তা শেখানো হয়। মুথ ট্রায়াল করতে গিয়ে দেখা গেল আমি ওই প্রোগামটাতে বেস্ট ট্রেইনি লইয়ার হয়ে গেলাম। এটা আমাকে অনেক উৎসাহ দিত যে, আমার পক্ষে কাজ করা সম্ভব। সেই সময় আমার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কাছে, বন্ধুদের কাছে ভাল স্টুডেন্ট হিসেবেই পরিচিত ছিলাম। তারপর মেধার স্বাক্ষর রেখে অনার্স পাশ করি। ভাল রেজাল্ট করার প্রত্যয় নিয়ে আমি পুরোদমে পড়া শুরু করি। সেটা করতে গিয়ে দেখা গেল আমি মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে গেলাম। এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয় ছিল।

    আপনি তো বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার হতে পারতেন ?

    রিমি নাহরিন: হুম, আমি চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার হতে পারতাম। ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়ার পর অনেক শুভাকাঙ্খী বললেন, তুমি যেহেতু ফার্স্ট হয়েছো টিচিংয়ে যাও, টিচার হও। আমি তো আইন পড়েছি টিচিং এর জন্য না। তাহলে তো অন্য যেকোন সাবজেক্টই পড়তে পারতাম। প্র্যাকটিস করার জন্যই তো ল পড়েছি।

    গোল্ড মেডেল সম্পর্কে জানতে চাই...

    রিমি নাহরিন: ওই যে আমি মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হলাম। এরপর ২০০৪ সালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের কনভোকেশন হল। সেই কনভোকেশনে আমি গোল্ড মেডেল পাই। আমাদের কনভোকেশনের গেস্ট ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ। কিন্তু তিনি ওই দিন আসেননি। পরে ওই সময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এস এম ফায়েজ স্যার আমার হাতে গোল্ড মেডেল তুলে দেন। অত্যন্ত আনন্দ আর গর্বের ছিল দিনটি। আমিই কিন্তু আমাদের পরিবারে প্রথম গোল্ড মেডেল পাইনি। আমার বাবার নানা ব্রিটিশ আমলে গ্র্যাজুয়েশন করেন। ওনার রেজাল্ট খুব ভাল ছিল। এইজন্য গোল্ড মেডেল পেয়েছিলেন।

    ইংল্যান্ডে কাটানো দিনুগলো…

    রিমি নাহরিন: ২০০৫ সালে বার এট ল করার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমাই। ওখানে গিয়ে আমার স্বপ্ন পূরণের আরেকটা অধ্যায় শুরু হল। ব্যারিস্টার হতে হবে- এটা যেহেতু আমার ছোটবেলা থেকে অ্যাম্বিশন সেহেতু আমার আগ্রহটা ছিল অন্যরকম। ইংল্যান্ডে কাটানো দিনগুলো বলতে গেলে খুব কষ্টের ছিল। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান হিসেবে কখনও কষ্ট করতে হয়নি। কিন্তু ইংল্যান্ডে গিয়ে মনে হলো পৃথিবী অনেক বড়, নিজের কাজগুলো নিজের করে নেওয়া, সব বিষয়গুলো খেয়াল রাখা শিক্ষণীয় ছিল। সেইসঙ্গে পড়াশোনার বিষয়ও ছিল। বার এট ল করেছি সিটি ল স্কুল থেকে লিংকন জেনের মেম্বার হয়ে। মার্গারেট থেচার, টনি ব্লেয়ারসহ চার জন ব্রিটিশ প্রাইম মিনিস্টার এখানেই ব্যারিস্টারি পড়েছেন।

    আমরা জানি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিতে আপনি কাজ করেছেন, সে বিষয়ে বলুন ...

    রিমি নাহরিন: আমি প্রথমে লন্ডনে গিয়ে বেতার বাংলা নামে একটি রেডিওতে ভলান্টিয়ার হিসেবে নিউজ পড়তাম। এটা একটা এক্সপেরিয়েন্স ছিল। এর কিছুদিন পর দেখলাম বিবিসি সার্কুলার দিয়েছে। বিবিসি বাংলার মত একটা নামকরা প্রতিষ্ঠান। ছোটবেলা থেকে আমার বাবা ও পরিবারের সবাই বিবিসির সংবাদ শুনে বড় হয়েছি। শখের বশে আবেদন করলাম। এখানে বলে রাখি, মিডিয়াতে আগ্রহ থাকার কারণ হচ্ছে আমার দুই মামা সাংবাদিক। আমার বড় মামা এম এন হারুন এক সময় খুব নামকরা সাংবাদিক ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে হলিডে তে ছিলেন। বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করতেন, এখন নিউ এইজে আছেন। আমার ছোট মামা আবু মুসা হাসান বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন। উনি ইংল্যান্ডে প্রেস মিনিস্টার ছিলেন। প্রথম যেদিন বিবিসি বাংলায় সংবাদ পাঠ করি সেদিন খুব উচ্ছ্বসিত ছিলাম যে, আমার ভয়েসটা এখন সবাই শুনছে- এটা ভেবে। বিবিসি বাংলায় আমি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ছিলাম। ইন্টারন্যাশনাল বুলেটিন ও স্পোর্টস নিউজ পড়তাম। নিউজগুলো অনুবাদ করে পড়তাম। যেমন: বিশ্ব সংবাদ পড়ছি আমি রিমি নাহরিন।

    জীবনসঙ্গী হিসেবে কাকে বেছে নিয়েছেন?

    রিমি নাহরিন: আমার স্বামীর নাম ডা. তানিম আনোয়ার। তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক। বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যালের কিডনি বিভাগের রেজিস্ট্রার। ২০০৭ সালে আমার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। উনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাশ করে লন্ডন থেকে এমপিএস করেছেন। পরবর্তী সময়ে আমার স্বামী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে নেফ্রোলজিতে এম.ডি. ডিগ্রি লাভ করেন।

    আইন পেশায় হাতেখড়ি …

    রিমি নাহরিন: প্রথম খিজির আহমেদ চৌধুরী স্যারের সঙ্গে কাজ করেছি। যিনি এখন হাইকোর্টের জাস্টিস। স্যার বিচারপতি হওয়ার আগ পর্যন্ত ওনার সঙ্গেই কাজ করেছি। এরপর অ্যাডভোকেট একরামুল হক টুটুলের জুনিয়র হিসেবে কাজ করেছি। এখন আমি মোটামুটি নিজে কাজ করছি। আর সিনিয়রদের সাহায্য তো সব সময় পেয়ে থাকি। এখন সেই স্বপ্ন পূরণের দিনগুলো দেখতে পাই। বাবা-মা যা চেয়েছিলেন স্বাবলম্বী আইনজীবী হিসেবে কাজ করবো। এখন আমি নিজেই স্বাবলম্বী হিসেবে কাজগুলো করতে পারছি।

    আইন পেশায় যাদের অনুসরণ করেন…

    রিমি নাহরিন: আইডল হিসেবে আমি অবশ্যই বলবো আমার সিনিয়র খিজির আহমেদ স্যার বিচারপতি হওয়ার আগে যে সাবমিশন রাখতেন তা অসাধারণ। সাবমিশন দেখেই মনে হতো বড় একজন আইনজীবী। এখন আমার সিনিয়র যিনি আছেন একরামুল হক টুটুল উনার সাবমিশন খুব ভাল। তাছাড়া অনেক সিনিয়র আইনজীবীর সাবমিশন ভাল লাগে। যেমন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম স্যারের সাবমিশন অসাধারণ। তার সাবমিশন থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। তারপর ফিদা কামাল স্যার, উনার সাবমিশন ভাল লাগে। আমি আসলে সবার ভালগুলো থেকে ইন্সপায়ার্ড হয়ে নিজের মত হতে চাই। যাতে ভবিষ্যতে মানুষ বলতে পারে রিমির মত হতে হবে।

    কোর্টে প্রথম মামলার শুনানির স্মৃতি…

    রিমি নাহরিন: প্রথম যেদিন মামলার শুনানি করতে যাই সেটা ছিল একটা ক্রিমিনাল ম্যাটার। এটা একটা খুনের মামলা ছিল। এক আসামির জামিনের আবেদন ছিল। খুব টেনশনে ছিলাম আমি পারবো কি না। মামলার পোস্ট মোর্টেম রিপোর্টটা ভাল করে বোঝার জন্য ফরেনসিক মেডিসিনের বইও পড়লাম। যখন আমি কোর্টে ঠিকঠাক মত উপস্থাপন করলাম, জজ সাহেব বললেন বেল (জামিন) তখন খেয়াল করলাম আমার চোখে আনন্দে পানি চলে এসেছে।

    নারী ব্যারিস্টার হিসেবে কি কোন বৈষম্যর শিকার হন কখনো ?

    রিমি নাহরিন: মেয়েদের তো অনেক সমস্যা। এটা আসলে আমাদের দেশের মানুষের শিক্ষার বিষয় যে, একটা ছেলে পারলে একটা মেয়েও পারবে। এখানে ছেলে মেয়ে কোন বিষয় হওয়া উচিত নয়। সবাইকে মানুষ হিসেবে দেখা উচিত; সে আইনজীবী হিসেবে ভাল কি না। এখানে ছেলে না মেয়ে বড় বিষয় নয়। নারী আইনজীবীদের প্রতিনিয়ত অনেক ঘটনা ফেস করতে হয়। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি যদি দৃঢ়তা থাকে নিজের উপর, আত্মবিশ্বাস থাকে তাহলে তা ওভারকাম করা সম্ভব।

    আইন পেশা থেকে নারীদের ঝড়ে পড়ার কারণ বলবেন কি ?

    রিমি নাহরিন: আইন পেশায় পরিশ্রমের কোন সময় কাঠি নেই। যখন একটা মামলার কাজ করতে হবে তখন সকাল থেকে ওই মামলার প্রিপারেশন নেওয়া, রাত অবধি আপনাকে কাজ করতে হবে। প্রচুর পড়াশুনা করতে হয়, অনেক পরিবারে এত কিছু করার সুযোগ পায় না মেয়েরা। অনেকের সেরকম অ্যামবিশনও থাকে না। আমি দেখেছি, যাদের অ্যামবিশন আছে তারাই কোর্টে টিকে থাকেন। এখানে মেয়ে বা ছেলে কোন বিষয় না। আমি একজন আইনজীবী হিসেবে সফল হবো- এরকম যদি দৃঢ় প্রত্যয় থাকে তাহলে আমি মনে করি, যে কারো পক্ষেই এই পেশায় ভাল করা সম্ভব।

    সময় কিভাবে ম্যানেজ করেন?

    রিমি নাহরিন: সবকিছুকে একটা রুটিনের মধ্যে ফেলে সময় ম্যানেজ করি। এক্ষেত্রে আমার পরিবারের সবাই আমাকে সহযোগিতা করেন। আমার স্বামী একজন ডাক্তার। তার পেশার প্রতি আমার যেমন সম্মান আছে, শ্রদ্ধা আছে, আমার পেশাকেও তিনি যথেষ্ঠ শ্রদ্ধা করেন। নিজেদের জন্য সময় বের করে আমরা ঘুরে বেড়াই। তবে পেশাগত ক্ষেত্রে কোন কম্প্রোমাইজ নেই।

    বাবা-মাকে নিয়ে মূল্যায়ন…

    রিমি নাহরিন: আমার জীবনের সবটাই তাদের জন্য। বাবা-মা শুধু জন্মই দেননি, প্রথম থেকেই চেয়েছেন আমি যেন একজন ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারি। সে চেষ্টা তারা করেছেন। এই কারণে আমি বলবো যে আজ পর্যন্ত যদি কোন কিছু আমার অর্জন থাকে তার পুরো কৃতিত্বই আমার বাবা-মায়ের।

    ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই…

    রিমি নাহরিন: ইচ্ছে আছে, সড়ক দুর্ঘটনায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের জন্য কিছু করার। সেটা একটা এসোসিয়েশন করেও হতে পারে। বিশেষ করে যেসব দরিদ্র মানুষ সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যান, তাদের পরিবার কোন বিচার পায় না বা কোন ক্ষতিপূরণ পায় না। আমার ইচ্ছা আমি এরকম একটা এসোসিয়েশন খুলবো যেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রাথমিক আইনগত সহযোগিতা দিতে পারি।

    আইন পেশায় আসতে ইচ্ছুক নবাগতদের জন্য আপনার পরামর্শ ...

    রিমি নাহরিন: নতুনদের জন্য আমার পরামর্শ হচ্ছে ধৈর্য ধরতে হবে। পেশার প্রতি সম্মান রাখতে হবে। কোর্টের সামনে আইনগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি আমরা একজন মানুষকে রিলিফ দেয়ার চেষ্টা করি। মনে রাখতে হবে যে, এটা একটা দায়িত্বপূর্ণ পেশা। এটা দায়িত্বপূর্ণ কাজ- একথা মনে রেখে নতুনদের কাজ করতে হবে।

    কেকে

    • সর্বশেষ
    • সর্বাধিক পঠিত
    close