আজীবন বহিষ্কারের পরেও থামছে না র্যাগিং
র্যাগিং দেওয়া শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আজীবন বহিষ্কারের সাঁজা দেওয়ার আইন থাকলেও তাতে কমছে না জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং। ২০০৯ সালে র্যাগিং নিষিদ্ধ করার হয় নয় বছর পরও এখনও শিক্ষার্থীরা শিকার হচ্ছেন র্যাগিংয়ের। সে সময় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে র্যাগিং সংক্রান্ত একটি আইন পাশ করে ক্যাম্পাসে র্যাগিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে পুরো ক্যাম্পাসে পোস্টারিং করা হয়।
সর্বশেষ বুধবার রাতে র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছেন কম্পিউটারসায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী। এ নিয়ে ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে সমালোচনার ঝড় বইছে। এদিকে এই ঘটনায় একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ৪ জন শিক্ষার্থীকে শোকজ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা হলেন: মামুন, হিমেল, সুদীপ্ত এবং আনোয়ার।
সম্পর্কিত খবর
প্রক্টর অধ্যাপক ড. তপন কুমার সাহা বলেন,‘কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে র্যাগের অভিযোগে একই বিভাগের (দ্বিতীয় বর্ষ) চারজন শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাদের নাম আসায় বিষয়টি নজরে নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেছি।
র্যাগিং এর বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমালোচনা, বিভিন্ন সংগঠনের র্যাগিং বিরোধী অবস্থান ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কড়ানজরদারির কারণে আবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এ প্রবণতা কিছুটা কমে এলেও সম্প্রতি বিভিন্ন হলের গণরুমে ফের শুরু হয়েছে লাগামহীন র্যাগিং। বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে খোঁজ নিয়েজানা গেছে, প্রতিরাতে বিভিন্নমহল থেকে একাধিক শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিতে আসে। ঠিকসময়ে খেতে না পারায় পেটের সমস্যা লেগেই থাকে তাদের। রাত জেগে র্যাগ দেওয়ার কারণে ঠাণ্ডা জ্বরেও আক্রান্ত হতে হয় অনেককে। শারীরিক দুর্বলতার কারণে অনেকে অজ্ঞানও হয়ে পড়েন।
এদিকে র্যাগিং দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ৪৫ ব্যাচের এক ছাত্রলীগকর্মীকে পিটিয়েছে একই হলের ৪৬ ব্যাচের কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মী। মারধরের শিকার সৌরভ দর্শন বিভাগের ৪৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী।বুধবার রাত ৩টার দিকে হলটির সামনে এ ঘটনা ঘটে। আহত সৌরভ অভিযোগ করে বলেন, ‘ বুধবার রাতে ছাত্রলীগের সেক্রেটারি গ্রুপের ৪৪ ও ৪৫ ব্যাচের ছাত্রলীগকর্মীরা গণরুমে ঢুকে ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীদেরকে ফাপর(র্যাগ)দিচ্ছিল। তারপর আমরা তাদেরকে বের করে দেই।
৪৭ ব্যাচের রুমে শুধু ৪৬ ঢুকবে, অন্য ব্যাচের ঢোকার নিয়ম নেই। ওইদিন গেস্ট রুমে এটা নিয়ে আমরা বসি। কিন্তু তারা রাগারাগি করে চলে যায়। পরে বড় ভাইয়েরা আমাদের নিয়ে বসে মিটমাট করে দেয়। আমরা মনে করি মিটমাট হয়ে গেছে। তবে তাদের মনে ক্ষোভ থেকে গেছে। ওই দিন রাতে বটতলা থেকে ফেরার পথে হলের পাশের দোকানের সামনে ৪৬ ব্যাচের ওই ছেলেরা অতর্কিত আমাদের উপর আক্রমণ করে।তারা আমাকে বেধড়ক মারধর করে’।
এদিকে র্যাগিংএর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে শাখা ছাত্রলীগ।সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ তম ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীদেন অভিনন্দন জানিয়ে শুভেচ্ছা মিছিল শেষে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির জাবি শাখার সভাপতি মো: জুয়েল রানা ও সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চল।
র্যাগিং এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, র্যাগিং প্রতিরোধের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হল প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টর ও বিভাগীয় শিক্ষকদেও দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে র্যাগিং এর বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমেদ স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,‘নবীন শিক্ষার্থীদের সাথে সর্ম্পক স্থাপনের নামে প্রচলিত এই র্যাগিং আমাদের মূল্যবোধ ও নৈতিকতার সাথে কোনোভাবেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়’। বিজ্ঞপ্তিতে র্যাগিং কে ভয়াল ব্যাধি উল্লেখ করে এ থেকে মুক্ত থাকতে সকলের প্রতি আহবান জানানো হয়’। র্যাগিংয়ের সাথে জড়িত শিক্ষার্থীদেও বিরুদ্ধে আজীবন বহিষ্কারাদেশসহ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানাইসলাম।